Home অন্যান্য অপরাধ ও দূর্নীতি প্রতারণা করে সহকর্মীকে  ধর্ষণ করে এসপি  মোক্তার, বিয়ে করে জামিন লাভ

প্রতারণা করে সহকর্মীকে  ধর্ষণ করে এসপি  মোক্তার, বিয়ে করে জামিন লাভ

দখিনের সময় ডেস্ক:

এক নারী সহকর্মীর দায়ের করা ধর্ষণের মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন। সেই সঙ্গে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১১ এপ্রিল তারিখ নির্ধারণ করেছেন ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী।

এর আগে ৭ মার্ মোক্তার হোসেন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। ভুক্তভোগী নারী ও মামলার বাদী আদালতে হাজির ছিলেন। উভয়পক্ষ আদালতকে লিখিতভাবে জানায়, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর তারা (বাদী-বিবাদী) আপস করে বিয়ে করেছেন। আসামির জামিনে আপত্তি নেই বলে জানান বাদী।  উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে মোক্তার হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

উল্লেখ্য, পুলিশের ওই নারী পরিদর্শক ধর্ষণের অভিযোগে এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্টে ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন। পরে আদালত ওই নারীর আবেদন এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য রাজধানীর উত্তরা পূর্ব মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়। পরে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার (এসপি) মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীর (পুলিশ পরিদর্শক) ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ এর ৯(১) ধারায় দেওয়া চার্জশিটে বলা হয়েছে, মোক্তারের বিরুদ্ধে বিয়ের আশ্বাসে ফুসলিয়ে এবং জোরপূর্বক নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করা হয়।

গত বছরের ১২ আগস্ট ঢাকার ৭নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের আদালতে এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি করেন তার সহকর্মী ওই পরিদর্শক।

আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আবেদনটি উত্তরা পূর্ব থানাকে মামলা হিসেবে (এফআইআর) গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। মামলা দায়েরের সময় বাগেরহাট জেলার দায়িত্বে ছিলেন মোক্তার। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে ছুটিতে যান তিনি। তবে কত দিনের ছুটিতে যান, সেটি তখন জানা যায়নি।

মামলাটির তদন্ত শেষে গত ৩০ জানুয়ারি মোক্তারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক জসিম উদ্দিন। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ২০ জনকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ এর ৯(১) ধারায় চার্জশিট দাখিল করেছি। মোক্তার হোসেন পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছি।

যা আছে চার্জশিটে

চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার বাদী নারী বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তিনি ২০১৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। পরের বছর ২০১৯ সালের মে মাসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান মামলার আসামি মোক্তার হোসেন। তারা ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তা মিশনে কর্মরত ছিলেন। মিশনে বাংলাদেশি পুলিশ সুপারদের মধ্যে কেবল বাদী ও আসামি ভিআইপি অ্যাকোমোডেশন ক্যাম্পে থাকতেন।

মামলার বাদী ২০২০ সালের ৩০ জুন মিশন শেষে দেশে ফেরেন। আসামি মিশন শেষে দেশে ফেরেন ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। বাদীর অভিযোগ, (মিশনে থাকাকালে) ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর আসামি তার আবাসিকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। দুদিনের মাথায় ২২ ডিসেম্বর ফের জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তাকে।

২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি তাকে ফুসলিয়ে, ভুল বুঝিয়ে, মুখে কালেমা পড়িয়ে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন মোক্তার। পাশাপাশি বাংলাদেশে ফিরে বিয়ে রেজিস্ট্রি করার আশ্বাস দিয়ে তাকে ফের ধর্ষণ করেন। একইভাবে ২০২০ সালের ২৬ জুন থেকে ৩০ জুন সুদানের খার্তুমের হোটেল শ্যামলোতে তাকে ধর্ষণ করেন মোক্তার।

তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে আরও বলেন, বাদীর অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনাস্থল দেশের বাইরে হওয়ায় সরেজমিনে পরিদর্শন করা এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। মিশনে সংগঠিত ধর্ষণের বিষয়ে একই সময়ে কর্মরত দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে কেউ ঘটনার বিষয়ে অবগত নন মর্মে জবানবন্দি দেন। এ বিষয়ে বাদীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, তিনি তাকে ধর্ষণের বিষয়ে কাউকে অবহিত করেননি এবং মিশন কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো অভিযোগও করেননি।

চার্জশেটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি মোক্তারের পরিবার ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করছিল। এ অবস্থায় বাদীর সঙ্গে আসামির হোটেলের অবস্থান তার (ধর্ষণের) অভিযোগকে সমর্থন করে। আসামি ও বাদী দুইজনই বিবাহিত। আসামির প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে বাদী ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার স্বামীকে ডিভোর্স দেন।

এরপর তিনি ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে আসামি মোক্তারের বাসায় গেলে তাকে নাজেহাল করা হয়। মামলার তদন্তে সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রকাশ পায় যে, আসামি মোক্তার হোসেন বাদীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করেন, যা ধর্ষণের শামিল। সব তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মামলার বাদীকে আসামি মোক্তারের ধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই মোক্তারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ এর ৯(১) ধারায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হলো।

যা আছে মামলার এজাহারে

এর আগে দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালে বাদী ও আসামি দুজনই সুদানে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে আসামি বাদীর বাসায় তার ব্যবহৃত গাড়ির চাবি চান। বাদী চাবি ইউনিফর্মের পকেট থেকে আনতে গেলে আসামি পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরেন এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি-ধমকি দেন।

এর দুদিন পর ২২ ডিসেম্বর আসামি পুনরায় আগের ঘটনা ভুল বোঝাবুঝির কথা বলে বাদীর বাসায় যান। কিন্তু ওইদিনও বাদীকে তিনি জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এ ঘটনাও কাউকে না জানাতে আসামি বাদীকে হুমকি দেন। যদি বাদী কাউকে ধর্ষণের ঘটনা জানান, তাহলে তার ক্ষতি করার হুমকিও দেওয়া হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

টিকটকে নিরাপদ রাখবে যে ১০ ফিচার

দখিনের সময় ডেস্ক: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে টিকটক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে টিকটক। যেখানে ‘ফিডস’ নেটওয়ার্কের...

প্রতিদিন খেজুর খাবেন যে কারণে

দখিনের সময় ডেস্ক: আপনার কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্বাদু কোনো খাবার প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইছেন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে খেজুর।...

পরীমণি প্রথম স্বামীর পরদিন মারাগেলো প্রথম পরিচালক

দখিনের সময় ডেস্ক: লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল।  গুলশানের...

বাউফলে ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বশির গাজীর বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুনীতি ও অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈশোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল...

Recent Comments