দখিনের সময় ডেস্ক:
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কর্মচারীদের সন্তানেরা কৈশোর সময় থেকে ক্যাম্পাসে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির গ্রুপিং, নির্মাণ প্রকল্পে চাঁদাবাজি, মাদক আর অস্ত্র বহনের জন্য ছাত্রনেতারা হরহামেশা তাদের ব্যবহার করেন।
এ সুযোগে তারা ছাত্রীদের ইভটিজিং থেকে শুরু করে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন। চবি ক্যাম্পাসে কর্মচারীদের ছেলেদের নেতৃত্বে রয়েছে একাধিক কিশোর গ্যাং। চবির দক্ষিণ ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের সরকারি বাসা থাকার কারণে এক সময়ের অভিজাত এলাকায় নিত্য আনাগোনা এসব ছেলেদের।
গত ১৭ জুলাই এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির স্থানও দক্ষিণ ক্যাম্পাসেই, শিক্ষকদের সরকারি আবাসিক এলাকার কাছেই। ওই ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে শনাক্ত করেছে চবি প্রশাসন ও র্যাব। তারা সবাই চবির কর্মচারীদের সন্তান। তাদের দুজন চবিতে অধ্যয়নরত। অন্যরা হাটহাজারী কলেজে পড়েন। ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে তারা চবিতে ভর্তি হতে না পারলেও বাবার চাকরির সুবাদে স্থায়ীভাবে ক্যাম্পাসেই থাকেন।
চবির প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া চবি ক্যাম্পাসে কর্মচারীদের ছেলেদের অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, এখন তো কিশোর বয়সেই ছেলেরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি খ. আলী আর রাজি বলেন, স্থানীয় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলেরা ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকার কারণে অবৈধ অস্ত্র ও মাদবদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে রাজনৈতিক দুষ্কৃতকারীদের কাছে পরিচিত।
চবি ছাত্রলীগের উপপক্ষ কংক্রডের নেতা আবরার শাহরিয়ার জানান, দক্ষিণ ক্যাম্পাস থেকে দুই নাম্বার গেট অবধি মোটরসাইকেলে উচ্চগতি ও উচ্চস্বরে হর্ন বাজিয়ে মেয়েদের ইভটিজিং করে বেড়ানো বেশিরভাগ ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারীদের। আমি সবার কথা বলছি না। বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছেলেমেয়ে নম্র-ভদ্রই। একটি ক্ষুদ্র অংশ, যারা ক্যাম্পাসে এ বিশেষ কর্মযজ্ঞ চালায়, তারাও কর্মচারীদের সন্তান। এখানকার স্থানীয় হওয়ার সুবাদে কোনো জঙ্গল কিংবা তুলনামূলক জনহীন স্থানে যেসব অঘটন, যেমন দুজন ছাত্রছাত্রীকে একসঙ্গে দেখলে ব্যঙ্গ করা, দা-ছুরি ঠেকিয়ে ফোন, টাকা ছিনতাই কিংবা কোনো ছাত্রীকে একা নির্জনে পেলেই শরীরে হাত দেওয়ার মতো সব দুষ্কর্মের সিংহভাগই এরাই সরাসরি করে, নয়তো সহযোগী থাকে।
মার্কেটিং বিভাগের শ্রাবণ মিজান বলেন, কলোনি কিংবা ক্যাম্পাসংলগ্ন গ্রামগুলোর বেকার, মাদকাসক্ত, কলেজ পড়ুয়া কিশোর গ্যাং কিংবা তথাকথিত ভার্সিটি কলেজের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত টিনএজার এবং যুবস বয়সী ছেলেদের ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে উচ্ছৃঙ্খল ও বেপরোয়া আচরণের পেছনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগেরও দায় রয়েছে।
গত এক দশকেরও কাছাকাছি সময় চবি ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। এ সময় ক্যাম্পাসে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। এসব কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠনগুলো। চবির ছাত্র হোক বা না হোক- কর্মচারীর ছেলেরা ছাত্রলীগের এসব বগিভিত্তিক উপপক্ষের সদস্য। তাদের আছে মোটরসাইকেল। সেগুলো নিয়ে দিনরাত শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ছাত্রী হলসহ ক্যাম্পাসের সবখানে উচ্চস্বরে হর্ন বাজিয়ে ছোটাছুটি করে।
সন্ধ্যার পরই কোনো ছাত্র বা ছাত্রীকে একা পেলে জেরা করে, তাদের টাকা পয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে এসব ছেলেদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন আবাসিক হলের পাহারাদার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অনেক কর্মচারী তাদের সন্তানদের হাতে পাহারার দায়িত্ব দিয়ে চলে যান। ওই সময় তারা দোকান বা অন্য কাজ করেন।