দখিনের সময় ডেস্ক:
র্যাব-১ সদর দপ্তর রাজধানীর উত্তরা এলাকায়, বিমানবন্দরের কাছাকাছি। আর এই র্যাব-১ সদর দপ্তরের সামনে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন চাকরিজীবী সিরাজুল ইসলাম। ছিনতাইকারী চক্রের ২০-২২ বছরের এক তরুণ প্রকাশ্যে তার মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।
শুধু সিরাজুল ইসলাম নয়, রাত নামলেই রাজধানীতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। তাদের হাতে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান মালামাল খোয়ানের পাশাপাশি গত এক মাসে ৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসব ঘটনায় ছিনতাইকারী গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই কম।
আর সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই পেশায় নতুন মুখ। বয়সে কিশোর-তরুণ। আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ জন ছিনতাইকারীর বয়স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাদের ২১ জনের বয়সই ১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
পুলিশ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির জেরে বেড়েছে মানুষের যাতায়াত খরচ। নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের এই বাড়তি দামের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো। বাধ্য হয়ে অনেক পিতা-মাতা সন্তানদের হাতখরচ বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে অনেক পরিবারের কিশোর-তরুণ সন্তান চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধেও জড়াচ্ছে। এ ছাড়া মাদকসেবী বৃদ্ধি, টহল পুলিশের ঢিলেমি এবং ছিনতাইকারীরা সহজে জামিনে বেরিয়ে আসায় রাজধানীতে ছিনতাই থামছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সন্ধ্যা নামার পর থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে প্রায়ই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চান না। এ কারণে অধিকাংশ ছিনতাইয়ের ঘটনা অজানাই থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারের নজির কম থাকায় ভুক্তভোগীরা থানা পর্যন্ত যেতে চান না। ছিনতাইয়ের ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটলেই কেবলমাত্র প্রকাশ্যে আসে। পুলিশের দ্বারস্থ হন ভুক্তভোগীরা।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, যে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক সংকট ও বিপর্যয় ছিনতাই ও লুটের মতো অপরাধ বাড়ায়। বিশেষ করে নিম্ন অর্থনীতির পরিবারগুলো এই সংকটের মধ্যে অপরাধে জড়ায়। যখন অভিভাবকরা সন্তানকে হাতখরচ দিতে পারে না। তখন তারা এককভাবে কিংবা চক্রে যুক্ত হয়ে ছিনতাইয়ে নামে। এ ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে নৈতিক বিপর্যয় তৈরি হয়ে ছিনতাই ও লুটের মতো ঘটনা আরও বাড়বে। আইন ভাঙার প্রবণতাও বাড়বে। আর এসবের ভুক্তভোগী হবে সব শ্রেণিপেশার মানুষ।