• ১২ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরকীয়ার জেরে পুলিশ সদস্য খুন: স্ত্রীসহ ৪ জন গ্রেপ্তার

দখিনের সময়
প্রকাশিত মে ২, ২০২৫, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ণ
পরকীয়ার জেরে পুলিশ সদস্য খুন: স্ত্রীসহ ৪ জন গ্রেপ্তার
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পরকীয়ার জেরে পুলিশ সদস্য স্বামী হুমায়ুন কবিরকে (৪৪) হত্যার ঘটনায় স্ত্রীসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সবশেষ বরিশাল থেকে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী সালমা বেগম (৩২), মরিয়ম বেগম ওরফে মলি (৩৮), ফজলে রাব্বি ওরফে শুভ (২৩), পলি বেগম (৩৫), কায়েচ হাওলাদার (৩৪) ও অপর একজন কিশোর। ঢাকা ও বরিশালে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১ মে) যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের বরাতে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে সংবাদ পেয়ে দয়াগঞ্জ বটতলা জজ মিয়ার বাড়ির ভাড়া বাসার গেটের কাছে থেকে পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরের মরদেহ উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় মৃত পুলিশ সদস্যের ভাই খোকন হাওলাদার বাদী হয়ে গত ২৯ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হুমায়ুন কবির ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিবহন বিভাগে জলকামান চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী সালমা বেগমসহ দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করতেন। রাজিব হোসেন নামে এক আত্মীয়ের সঙ্গে সালমা বেগমের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল, যা হুমায়ুন কবির জানতে পারেন। এ নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল একটি পারিবারিক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর সালমা বেগম ও তার ভাই মানিকের সঙ্গে পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে সালমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজিব হোসেন ও ওই ভবনের চারতলায় থাকা তার আত্মীয় মরিয়মসহ আরও কয়েকজন মিলে হুমায়ুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
মামলাটি তদন্তকালে ভুক্তভোগীর দুই সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাত মধ্যরাতে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় আসামি সালমা বেগম ও মরিয়ম বেগম ওরফে মলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে ও প্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার (১ মে) ভোরে বরিশাল জেলা থেকে শুভ, রাফি, পলি ও কায়েসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় নিহত পুলিশ সদস্য হুমায়ুনের দুটি মোবাইল ফোন শুভর কাছ থেকে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত ও গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে ডিসি তালেবুর রহমান জানান, সালমা বেগমের সঙ্গে তার আত্মীয় রাজিব হোসেনের এক বছর ধরে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। গত রোববার (২৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টায় হুমায়ুন ডিউটি শেষে বাসায় ফিরে আসেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার স্ত্রী সালমা ফার্মেসি থেকে কিনে আনা ঘুমের ওষুধ খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে তাকে খাওয়ায়। এতে হুমায়ুন অচেতন হয়ে পড়ে। গ্রেপ্তাররা হাত-পা গামছা দিয়ে বেঁধে এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে রাত আড়াইটার দিকে হুমায়ুনকে তারা হত্যা করে।
হত্যার পর মরদেহ অন্যত্র সরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলে হত্যাকারীরা ভোর ৪টার দিকে লাশটি বাড়ির গেটের পাশে ফেলে রাখে। গ্রেপ্তার সালমা বেগম ও মরিয়মকে বুধবার বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হলে তারা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।  অন্য গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। পলাতক রাজিবসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।