রাসেল হোসেন:
শয়তানের নিঃশ্বাস ব্যবহার করে প্রতারক চক্রের মতো অজ্ঞান পার্টিও বরিশাল নগরীতে জাল বিস্তার করে ফেলেছে। এই চক্রের থাবা পৌছেছে হলুদ অটো পর্যন্ত। কারো মতে, এখন হলুদ অটোই হচ্ছে অজ্ঞান পার্টির প্রধান টার্গেট। এই চক্রের কবলে পড়া হলুদ অটোর ড্রাইভার শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে ঘটনাচক্রে দখিনের সময় প্রতিবেদকের দেখা হয়। তার বয়ানিতে জানাগেছে, অজ্ঞান পার্টির নিঁখুত প্রতারণা কৌশলের কথা। এই প্রতারণা কৌশল, এতোটাই নিখুত যে, ড্রাইভার শাহাদাতের বিন্দুমাত্র সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। বরং, প্রতারকদেরকে তিনি মহানুভব ভেবেছিলেন।
হলুদ অটোর ড্রাইভার শাহাদাত হোসেন জানান, দিনটি ছিলো ৯ মে শুক্রবার। সঙ্গত কারণেই সকালে রাস্তায় লোকজন কম ছিলো। তিনি নগরীর জিলা স্কুলের সামনে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সকাল আটটা-সাড়ে আটটার দিকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা সাগরদী থেকে রোগী নিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাবার কথা বলে অটোতে ওঠেন। তারা রোগী আনার জন্য ধান গবেষণার গলিতে যান। সেখান থেকে একটি শিশুসহ দুই মহিলা অটোতে ওঠেন। মহিলারা বোরকা পরা ছিলো। তারা বলেন, রোগী রেডি হতে সময় লাগবে। ড্রাইভারকে পোর্ট রোডের দিকে যেতে বলেন।
পোর্ট রোডে যাবার পথে লঞ্চ ঘাট এলাকায় স্টিমার ঘাট মসজিদের উত্তর পাশে রাস্তার মোড়ে বাহারী সরবতের দোকানটির সামনে অটো থামাতে বলা হয়। প্রতারক চক্রের পুরুষ সদস্য সরবতের দোকান থেকে পাঁচ গ্লাশ সরবত নিয়ে আসে। এবং অটোতে বসে পাঁচ জনই সরবত পান করেন। এর পর ব্লেস পার্কের দিকে যেতে বলা হয়। সেখানে যেতে যেতে ড্রাইভার শাহাদাত হোসেনের অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। তিনি অটো থামিয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়েন। এরপর তার আর কিছুই মনে নেই। প্রায় ৩৬ ঘন্টা পর তার হুশ হলে তিনি নিজকে হাসপাতালের বেডে দেখতে পান। মূল টার্গেট অটো
ড্রাইভার শাহাদাত হোসেনের পকেটে থাকা টাকা ও মোবাইল নিয়েগেছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। কিন্তু এই সমান্য টাকা ও কম দামী মোবাইল সেট প্রতারকদের টার্গেট ছিলো না। তাদের টার্গেট হচ্ছে অটো। আবার এই অটো নিয়েও অন্য খেলা আছে। এই অটোর মূল্য ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। অটোটির মালিক দাবীদার সিএন্ডবি রোডের সরকারী ব্যবস্থাপনার একটি মসজিদের মুয়াজ্জেম। এই অটো দেখাশুনার দায়িত্বে আছেন কাশিপুরের জনৈক মামুন।
অজ্ঞান পার্টি কবলে পড়া অটোর ড্রাইভার শাহাদাত হোসেনের অভিযোগ কোতয়ালী থানায় পৌছানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ নড়ে না! শুধু তাই নয় অভিযোগের ‘রিসিভ কপি হয় না’। এ কারণে অভিযোগের হদিসও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তার অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে কোনই প্রমান নেই ড্রাইভার শাহাদাত হোসেনের কাছে। এদিকে চালককে অজ্ঞান করে অটো নিয়ে যাবার অপরাধের কোন রেকর্ড নেই সরকারী খাতায়।
উল্লেখ্য, অজ্ঞান পার্টি নিয়ে যাওয়া অটোর টাকা পরিশোধের জন্য ড্রাইভার শাহাদাত হোসেনকে এনজিও’র কাছ থেকে টাকা সুদে ধার নেবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই টাকা অটো চালিয়ে শোধ করতে হবে ড্রাইভার শাহাদাতকে। উল্লেখ্য, মামুন হচ্ছেন অজ্ঞান পার্টির কবলে চলে যাওয়া অটোটির ‘ম্যানেজার।’