
দখিনের সময ডেস্ক:
সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে পড়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলের গঠনতন্ত্রের ‘বিতর্কিত’ ২০(ক) ধারাকে কেন্দ্র করে ফের ভাঙতে যাচ্ছে জাপা। একইসঙ্গে দলের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে শীর্ষপদ থেকে সরাতে জোট বেঁধেছে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের একাংশ। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দল থেকে ২০(ক) ধারার ক্ষমতাবলে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বহিষ্কার হওয়া নেতারা। তবে জিএম কাদেরপন্থি নেতাদের অভিযোগ, এই ভাঙনের পেছনে অতীতের মতো সরকারি ইন্ধন রয়েছে।
এবার জাতীয় পার্টি ভাঙনের পেছনে সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন জিএম কাদেরের অনুসারীরা। তারা বলেন, জাতীয় পার্টির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। তিন বছর পরপর সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে নতুন করে কাউন্সিল করে কমিটি হালনাগাদ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। অথচ বিগত ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপির কাউন্সিল হয় না, তাদেরকে তো কোনো চাপ দিচ্ছে না ইসি। এ কারণেই সরকারের প্রতি আমাদের সন্দেহ।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী জাপা চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ছাড়াই দলের যে কাউকে পদ থেকে সরাতে পারেন, বহিষ্কার করতে পারেন। যে কাউকে যেকোনো পদ দিতে পারেন। এজন্য তাকে জবাবদিহিতা করতে হয় না। যে কারণে দলের বর্তমান কমিটির সিনিয়র নেতাদের বড় একটি অংশ বর্তমান চেয়ারম্যানকে এই ধারা সংশোধন করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তা পরিবর্তন করতে আগ্রহী নন। তাই এই অংশটি যেকোনো সময় পদ হারানোর ভয়ে এখন জিএম কাদেরকে একঘরে করে ২৮ জুন সম্মেলন করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে বিভিন্ন সময় পদ হারানো নেতারা।
গত ২০ মে জাপার প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত হয় ২৮ জুন দলের সম্মেলন হবে। এজন্য জাপা চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া করে। কিন্তু গত ১৬ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জিএম কাদের বলেন, চীন মৈত্রী কর্তৃপক্ষ হল বরাদ্দ বাতিল করায় ২৮ তারিখের সম্মেলন হচ্ছে না। হল পাওয়া গেলে সম্মেলনের পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। তার এই বিবৃতির পর পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও অনভিপ্রেত। সম্মেলনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আগামী ২৮ জুন কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের কাউন্সিল হবে। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের তো ২৮ তারিখের সম্মেলন স্থগিত করেছেন– এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি একক সিদ্ধান্তে এটা স্থগিত করতে পারেন না। কারণ প্রেসিডিয়ামের সভায় এই তারিখ ঠিক হয়েছিল। উনাকে স্থগিত করতে হলে প্রেসিডিয়ামের মিটিংয়ে করতে হবে। সুতরাং ওইদিন দলের কাউন্সিল হবে। তাহলে কী জাতীয় পার্টি আবার ভাঙতে যাচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমরা তো আগের মতো দল ভেঙে বেরিয়ে এসে কাউন্সিল করছি না। চেয়ারম্যানের ঘোষণা দেওয়া তারিখে দলের কাউন্সিল হচ্ছে। সেই কাউন্সিলে দলের কাউন্সিলর-ডেলিগেটরা ভোট দিয়ে পরবর্তী চেয়ারম্যান ঠিক করবেন। কাউন্সিলে উপস্থিত নেতাদের মধ্য থেকে দলের পরবর্তী চেয়ারম্যান-মহাসচিবের জন্য প্রার্থী হবেন। জিএম কাদেরকে বাদ দিয়েই কি জাতীয় পার্টি হচ্ছে– জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, তিনি সম্মেলনে না এলে তো দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে বাদ পড়বেন। কারণ উপস্থিত না থাকলে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে দল থেকে বাদ পড়ছেন না।
Post Views: ৮৭