আলম রায়হান ॥
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাটা জীবন মানুষের জন্য উৎসর্গ করলেন, সেই মানুষটিকে মেরে ফেলা হলো! এতোবড় নিষ্ঠুরতা প্রকৃতি গ্রহণ করেনি। বঙ্গবন্ধুর অভিশাপে তারা শেষ হয়েগেছে। ঢাকায় বৃষ্টির মতো জুতা বর্ষনে খুনী মোশতাকের জানাজার আয়োজন পন্ড হয়েছে। বরিশালে নূরুল ইসলাম মঞ্জুর মতো নেতা রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিকভাবে শেষ হয়ে গেছে। কেউই প্রকৃতির বিচার থেকে রক্ষা পায়নি। এ অভিমত বিশিষ্ট নাট্যজন সৈয়দ দুলালের। তিনি মনে করেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত এবং বেনিফিশিয়ারী সবাই অভিশপ্ত।
দৈনিক দখিনের সময়-এর সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দেশের বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল। উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, সৈয়দ দুলাল বাংলাদেশে স্টুডিও থিয়েটারের প্রবর্তন করেছেন। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ থিয়েটার তার তত্ত্বাবধানে ৮৫১টি নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এছাড়া, তিনি শিশুতোষ শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সিসিমপুর এ “গুণী ময়রা” চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত।
কেবল নাট্যজন নন, সাংবাদিকতার সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন সৈয়দ দুলাল। ছিলেন বরিশাল থেকে প্রকাশিত সর্বোচ্চ মানের প্রচার সংখ্যার দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। তিনি অনেক ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে বরিশালে অনেক কিছু প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষন করেছেন তিনি। বৈরী পরিস্থিতিতে বরিশালেই থেকেছেন আত্মগোপনে। পরে বরিশালের পরিস্থিতি অধিকতর বৈরী হয়ে গেলে সৈয়দ দুলাল ভারতে পালিয়ে যান। যাদবপুরে জ্ঞান ঘোষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কয়েক মাস পর তিনি দেশে ফিরলেও বরিশালে ফেরেননি, ঢাকার কলাবাগানে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছিলেন। জেলখানায় নিহত চার নেতার জানাজায় তিনি অংশ নিয়েছেন। পুরো দৃশ্যপট পর্যবেক্ষণ করেছেন। খালেদ মোশারফের মায়ের নেতৃত্বে মিছিল দেখার পর তার মনে হলো, ঢাকার পরিস্থিতি আবার ঘোলাটে হবে। এই ভেবে তিনি ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠে ৭ নভেম্বর ভোরে বরিশাল পৌঁছান। সেদিন বিশ্ববাসী জানলো জেনালের খালেদ মোশারফসহ কয়েক মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা নিহত হবার নারকীয় ঘটনা।
পারিবারিকভাবে বরিশাল শহরের আদিবাসীন্দা সৈয়দ দুলালের সঙ্গে দৈনিক দখিনের সময়-এর কথা হয় ৬ আগস্ট শহরে তার নাট্য সংস্থা ”শব্দাবলী” কার্যালয়ে। এ সময় তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে এবং পরের কিছু তাৎপর্যপূর্ন ঘটনা তুলে ধরেন। সৈয়দ দুলাল বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গতিশীল করার অসাধ্য সাধন করলেন। ৭৪-এর দুর্ভিক্ষে ভয়াবহ ধকল কাটিয়ে ওঠাও সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে জনমনে নতুন করে আস্থা তৈরী হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ৭৫ সালে বাকশাল গঠন করা হলো। প্রথমে ধারণা করা হলো, এটি একদলীয় শাসন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্কার হলো, এটি আসলে এক দলের মধ্যে বহু দল ও নানান মতকে ধারণ করার একটি প্লাটফর্ম। তখন বাকশালে যোগদান ছিলো পত্রিকায় প্রতিদিনের প্রধান খবর। বরিশালের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আমিনুল হক চৌধুরী। সবাই তাঁর বাড়ির দিকে বিশেষদৃষ্টিতে তাকায়, গভর্নরের বাড়ি দেখে! এভাবেই দৃশ্যত সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলছিলো। কিন্তু ১৫ আগস্ট সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেলো!
ছবিঃ রাসেল হোসেন
Excellent