• ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার সর্বনাশ ছড়িয়ে গেছে ক্যান্সারের মতো

দখিনের সময়
প্রকাশিত মার্চ ৩১, ২০২৫, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষার সর্বনাশ ছড়িয়ে গেছে ক্যান্সারের মতো
সংবাদটি শেয়ার করুন...
বলে রাখা ভালো, সদ্য সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে কোনো অবস্থায়ই অতীতের বাচাল প্রবণতার শিক্ষামন্ত্রীদের সমান্তরালে দাঁড় করানোর কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ২২ ডিসেম্বর বলেছেন, ‘দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে! এর পেছনে রয়েছে শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি, ছাত্র রাজনীতির নামে দুর্বৃত্তায়ন। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগে প্রচণ্ড অনিয়মও দায়ী।’
মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা যা বলেননি বা বলতে তার মনে ছিল না অথবা এড়িয়ে গেছেন তা হচ্ছে, শিক্ষার সর্বনাশের জন্য প্রধানত দায়ী এ খাতে নানান অব্যবস্থাপনা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবাধ বাণিজ্য এবং নিয়ন্ত্রণহীনতা। যেসব কারণে নেতিবাচক আলোচনার শীর্ষে রয়েছে পুলিশ, সে বিষয়গুলো শিক্ষা খাতে অনেক আগেই জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে আছে এবং উচ্চ মাত্রায় বিরাজমান। কিন্তু এটি মুখে এনে সাধারণত কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। একসময় ভাশুরের নাম মুখে আনা হতো না। হয়তো একই কারণে সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টাও ঝুঁকি নিতে চাননি। অথবা সেই প্রবচন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, ‘ওপরে থুথু ফেললে নিজের মুখে পড়ে।’ কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থায় কেউ তো তার ওপরে ছিলেন না; বরং নিচে। তাহলে মূল বিষয়ে তিনি কেন আলোকপাত করেননি? সরকারের নড়বড়ে ভিত আরও নড়বড়ে হওয়ার আশঙ্কায়? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে না, যা পাওয়ার নয় সে চেষ্টা না করাই শ্রেয়। এ বিষয়ে তো প্রকারান্তরে রবিঠাকুরের গানেও ধারণা দেওয়া আছে, ‘যা হারিয়ে যায় তা আগলে বসে রইব কত আর…।’
শিক্ষার সর্বনাশে মূল বিষয় কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা যাক। শিক্ষার সর্বনাশ যে ক্যান্সারের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে, তা কিন্তু রাখঢাকের পর্যায় অতিক্রম করেছে বহু আগেই। ১৯৪৭ ও ৭০-এর পর ব্যাপক হারে উপযুক্ত শিক্ষক সংকট তৈরি হওয়ার পর শিক্ষা খাতের দুরবস্থা স্বাধীন বাংলাদেশে ক্রমাগত অধগতির ধারায় মহামারি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কোচিং আকারে। বহু বছর আগে কোচিং ব্যবস্থা আদম ব্যবসার মাত্রা ছাড়িয়ে গণশৌচাগারের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে অনেকেই মনে করেন। আর এটি কেবল কতিপয় উদ্যোক্তার ব্যবসার প্রয়াস এবং কলেজ-ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের কিছু আয়-রোজগারের পর্যায়ে নেই, যা একসময় টিউশনি হিসেবে পরিচিত ছিল, তা বিরল পান্ডার মতো এখন ধুঁকছে। টিউশনির খাত দ্রুত কোচিং-বাণিজ্য চক্রের দখলে চলে গেছে। এবং বেশ কয়েক বছর ধরেই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী মানেই কোচিং সেন্টারের ছাত্রছাত্রী। এদের এখন আর স্কুল-কলেজে যেতে হয় না। কেবল খাতায় নাম থাকলেই চলে। এবং স্কুলের খাতায় নাম থাকলে অবশ্যই স্কুল কোচিংয়ের খাতায় নাম থাকতেই হবে। স্কুলের কোচিং খাতায় নাম না থাকলে বিভিন্ন রকমের হেনস্তা অনিবার্য। এই ধারায় এক একটি স্কুল পরিণত হয়েছে এক একটি কোচিং বাণিজ্যকেন্দ্রে। এখানেও পড়ানো হয় না, কেবল মাস শেষে নির্ধারিত টাকাটা দিলেই চলে। গবেষণায় দেখা গেছে, চতুর্থ শ্রেণি থেকেই কোচিং-বাণিজ্যের দৌরাত্ম্য শুরু হয়। তবে এটি মনে করার কোনোই কারণ নেই, বিদ্যালয়ে কেবল কোচিং-বাণিজ্য চলে। আরও বহু বাণিজ্য মহামারিতে পরিণত হয়েছে। এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তলানিতে নেমে গেছে। আর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষা গ্রহণ এবং অনেক বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা শিক্ষাবোর্ডগুলোর অবস্থা কেবল কয়েক ধাপ নিচে নয়, একেবারে তলানিতে!
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২৮/৩/২০২৫। শিরোনাম, ‘শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর প্রয়োজন’