• ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাত্ররা সবই করে, কেবল মূল কাজটি করে না

দখিনের সময়
প্রকাশিত মার্চ ৩০, ২০২৫, ১৮:২৬ অপরাহ্ণ
ছাত্ররা সবই করে, কেবল মূল কাজটি করে না
সংবাদটি শেয়ার করুন...

দেশে ভালো-মন্দ এমন কোনো কাজ নেই, যা ছাত্ররা করে না। কিন্তু ছাত্রদের যেটি মূল কাজ, সেই লেখাপড়ার খবর কী? এক কথায় বলা হয়, নিদারুণ! আর এ জন্য দায়ী কেবল ছাত্রদের অতি রাজনৈতিক কর্ম এবং কতিপয়ের অপকর্ম নয়। পেছনে অনেক খেলা আছে, আছেন অনেক ভ্রান্তি। বেশিরভাগ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি। সরকার বিনামূল্যে বই দেয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয়; কিন্তু সেখানে নিয়োগবাণিজ্য চলে। ফলে মানসম্পন্ন শিক্ষক পাওয়া যায় না। কারও কারও মতে, শিক্ষার দায়িত্ব থেকে রাষ্ট্র ক্রমাগত পিছু হটছে।

এদিকে অনেকেই মনে করেন, শিক্ষায় বিরাজমান দশার জন্য অনেকটাই দায়ী সরকারি নিয়মকানুন ও গোঁজামিলের ব্যবস্থাপনা, প্রকাশ্য দুর্নীতি, মসনদে টিকে থাকা ও ক্ষমতা দখলের জন্য শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার করা। মসনদ প্রশ্নে ছাত্রদের ব্যবহার করেছে সবাই। অবশ্য জেনারেল এরশাদ একপর্যায়ে তার দলের ছাত্র সংগঠন বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও এ ঘোষণাকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা হয়। মানতেই হবে, ছাত্রদের অতিমাত্রায় রাজনীতিতে ব্যবহারের কারণে শিক্ষাব্যবস্থার বারোটা বেজেছে। শিক্ষাব্যবস্থার সর্বনাশের আর একটি অন্তর্নিহিত কারণ হচ্ছে, শিক্ষক রাজনীতি এবং শিক্ষা প্রশাসনে শিক্ষকদের গণহারে নিয়োগ প্রদান। বিবেচনায় রাখা ভালো, কোনো ঘটনা একটি মাত্র কারণে ঘটে না। তবে শিক্ষার যে নাকাল দশা তার বীজ লুকায়িত সরকারের বিধিবিধান ও অনুশীলনের মধ্যে। একেই বলে, সরিষার মধ্যে ভূত!

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছর উচ্চতর ডিগ্রিধারী এক লাখের বেশি বেকার চাকরি খুঁজেছে। তারা দেশে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি উচ্চ ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাদের দক্ষতার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা স্নাতকসহ বেকারদের সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৬ হাজার। এক বছর আগে ছিল ৭ লাখ ৯৯ হাজার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুসারে শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার এক বছর আগে ১২ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে। এসব চিত্র উঠে আসছে পরিসংখ্যানে।

অবশ্য পরিসংখ্যান প্রসঙ্গ নিয়ে কেউ কেউ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাণীসম কথাকে উদ্ধৃতি করতে পারেন, ‘মিথ্যা হচ্ছে তিন প্রকার। লাই, ড্যাম লাই, স্ট্যাটিসটিকস!’ সুনীলের এ বচন চেতনায় ধারণ করলে ১৭ কোটি মানুষের দেশে কোটি শিক্ষিত বেকারের স্ট্যাটিসটিকস তথা পরিসংখ্যান নাহয় বিবেচনায় নাই নেওয়া হলো! যেমন ড. ইউনূস সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা বিশ্লেষণের সময় অনেকেই আগের ভয়াবহ পরিস্থিতিকে তেমন বিবেচনায় নেন না। একই প্রবণতায় নিমজ্জিত হয়ে শিক্ষার বিষয়ে পরিসংখ্যান বিবেচনায় নাইবা নেওয়া হলো!

কিন্তু শিক্ষিত বেকার প্রসঙ্গে সদ্য সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের উচ্চারণ কী বিবেচনায় না নিয়ে উপায় আছে?

# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২৮/৩/২০২৫। শিরোনাম, ‘শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর প্রয়োজন’