Home নির্বাচিত খবর নকশালপন্থী নেতা চারু মজুমদারের জন্মদিন আজ

নকশালপন্থী নেতা চারু মজুমদারের জন্মদিন আজ

দখিনের সময় ডেক্স:

ভারতের প্রখ্যাত নকশালপন্থী ও মাওবাদী রাজনীতিবিদ চারু মজুমদারের জন্মদিন আজ। মৃত্যু বরণ করেনস ১৯৭২ সালের ২৮ জুলাই। হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ভারত সরকার কর্তৃক ঘোষণা করা হয়। এর আগে ১৬ জুলাই কলকাতার এন্টালী রোডের এক বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়চারু মজুমদারের।

ভারতবর্ষের ইতিহাসে চারু মজুমদার হলেন সেই নেতা, যিনি সোচ্চার কণ্ঠে বলতে পেরেছিলেন, ‘কৃষি বিপ্লব আজকের এই মুহূর্তের কাজ। এ কাজ ফেলে রাখা যায় না এবং এ কাজ না করে কৃষকের কোনোই উপকার করা যায় না’।

১৯১৯  সালের ১৫ মে রাজশাহী জেলার হাগুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন চারু মজুমদারের। পৈতৃক নিবাস শিলিগুড়ি। মধ্যস্বত্বভোগী ভূমধ্যিকারী পরিবারে তার জন্ম। পিতার নাম বীরেশ্বর। চারু মজুমদারের শিলিগুড়ি বালক হাই স্কুল থেকে ১৯৩৩ সালে মেট্রিক পাস করেন। এরপর পাবনা এডোয়ার্ড কলেজে আই এ ক্লাসে ভর্তি হন। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগেই সাম্যবাদী ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে লেখাপড়া ত্যাগ করে জলপাইগুড়ি জেলায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলেন।

 ১৯৩৬ সালে তার কর্মক্ষেত্র ছিলো জলপাইগুড়ি জেলা। ১৯৩৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। ব্রিটিশ শাসনকালে ছয় বছর আত্মগোপন অবস্থায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন। এ-সময়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ। ১৯৪২ সালে জলপাইগুড়িতে গ্রেফতার হয়ে দুই বছর নিরাপত্তা বন্দিরূপে কারাভোগ করেন। মুক্তি পান ১৯৪৪ সালে। এরপর উত্তরবঙ্গে চা-বাগান শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ। ১৯৪৬-৪৭ সালে পঞ্চগড়, জলপাইগুড়ি ও দারজিলিং জেলায় তেভাগা আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান করেন।

১৯৪৮ সালের ২৬ মার্চ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে তিনি নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন এবং ১৯৫২-তে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৭-তে নকশালবাড়ির কেষ্টপুরে চা-বাগিচার মালিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার অভিযোগে গ্রেফতার। প্রায় চার মাস কারা নির্যাতন ভোগ। ১৯৬২-তে চীন-ভারত যুদ্ধের সময়ে ভারত রক্ষা আইনে গ্রেফতার। ১৯৬৩-তে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে শিলিগুড়ি কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস প্রার্থির কাছে পরাজিত।

চীন ও রাশিয়ার আদর্শগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির পিকিংপন্থি নেতৃবৃন্দ সিপিআই (এম) গঠন করলে (১৯৬৪) তার সংগে একাত্মতা ঘোষণা। ১৯৬৫-তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় গ্রেফতার। একই বছর মুক্তিলাভের পর সিপিআই (এম)-এর নামে একটি বিশেষ ঘোষণাপত্র প্রকাশ। সিপিআই (এম) নেতৃবৃন্দ কর্তৃক একে দলীয় কর্মসূচির পরিপন্থী আখ্যায়িত করে তাকে দল থেকে বহিষ্কার। পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার।

পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদের নির্বাচনে (১৯৬৭) কংগ্রেসকে পরাজিত করে বামফ্রন্ট জয়ী হলে সিপিআই (এম)-এর বামফ্রন্ট সরকারে যোগদানের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সিপিআই (এম)-এর সংগে তার বিরোধ বাধলে সিপিআই (এম) ত্যাগ। বামফ্রন্ট সরকারের অভিষেক অনুষ্ঠান (জুন ১৯৬৭) শেষ হওয়ার পরপরই তার ও কানু স্যান্যালের নেতৃত্বে দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি এলাকায় সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ সংগঠিত। কৃষকদের জমির মালিকানার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরাঞ্চল, কেরালা ও পূর্ব উড়িষ্যায় এই সশস্ত্র আন্দোলনের ব্যাপকভাবে বিস্তারলাভ করে।

১৯৬৮ সালে কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল, সুশীতল রায়চৌধুরী প্রমুখের সহযোগিতায় চারু মজুমদার কমিউনিস্ট কনসোলিডেশন গঠন করেন। ১৯৬৯-এর ১ মে কলকাতা ময়দানে এক জনসভায় কানু সান্যাল কর্তৃক সিপিআই (এমএল) গঠনের কথা ঘোষণা করা হয়। চারু মজুমদার এদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। সিপিআই (এম-এল) গঠনের ফলে একজন সাধারণ কৃষক কর্মী থেকে সারা সর্বাধিক উচ্চারিত বিপ্লবী নেতারূপে পরিচিতি লাভ করেন। তার পরিচালিত আন্দোলন নকশালপন্থী আন্দোলন নামে খ্যাতি লাভ করে।

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের নকশালবাড়ির সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত কৃষকদের জমির মালিকানা লাভ যা থেকে এই আন্দোলনের উৎপত্তি। ১৯৬৯-৭১ খ্রিস্টাব্দের ২ বছর এই নবগঠিত দল পশ্চিম বাংলার সবচেয়ে পরাক্রান্ত, সুগঠিত এবং মারমুখী বিপ্লবী দলরূপে বর্তমান ছিল। এই দলের প্রভাব বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শোষণহীন সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের আশায় অনেক প্রতিভাবান যুবক ও যুবতী তার এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।

ভারত সরকার নকশালদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করে। ১৯৭০-এর মাঝামাঝি সময়ে সিপিআই (এমএল) এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়। চারু মজুমদারের নেতৃত্বকে অস্বীকার করে অসীম চট্টোপাধ্যায় ও সন্তোষ রাণার দলত্যাগ করে। ভারত সরকার কর্তৃক তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা ও সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। চারু মজুমদার কয়েক বছর পলাতক জীবন যাপন করেন। ১৯৭২-এর ১৬ জুলাই কলকাতার এন্টালী রোডের এক বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২৮ জুলাই হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ভারত সরকার কর্তৃক ঘোষণা প্রচার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments