• ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্ণফুলী টানেলে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, আপত্তিকৃত অর্থ আদায়ের সুপারিশ

দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ণ
কর্ণফুলী টানেলে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, আপত্তিকৃত অর্থ আদায়ের সুপারিশ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের দখিনের সময় ডেস্ক:
দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ানো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। এটি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের ১৩ শতাংশের বেশি। শুধুমাত্র চারটি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির হিসাব করা হলে প্রায় এক- চতুর্থাংশ অর্থ কম খরচে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হতো বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। নিরীক্ষার চূড়ান্ত সুপারিশে বলা হয়েছে, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আপত্তিকৃত অর্থ তাদের কাছ থেকে আদায়পূর্বক সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে।
কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২০২০ সালের নভেম্বরে এর উদ্বোধনের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারীসহ কয়েক দফায় পেছায় প্রকল্প শেষ হওয়ার সময়। সাথে বাড়ে ব্যয়ও। প্রাথমিকভাবে যা সাড়ে আট হাজার কোটির কিছুটা কম ছিল সেটা বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। এর মাঝে বাংলাদেশ ব্যয় করছে চার হাজার ৬১৯ কোটি ৭০ লাখ এবং চীনের ঋণ ছয় হাজার ৭০ কোটি টাকা। মোট ৯.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩১৫ কিলোমিটার। দুই লেনের ডুয়েল টানেলটির প্রবেশপথ-চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের কাছে, কর্ণফুলী নদীর ভাটির দিকে নেভি কলেজের কাছে। এর বহির্গমন আনোয়ারা প্রান্তে সার কারখানার কাছে।
জানা গেছে, মূল চুক্তির (টার্নকি) অধীনে টানেল নির্মাণকাজের সুপারভিশন ফি পরিশোধ করা সত্ত্বেও ভিন্ন চুক্তির অধীন সরকারি খাত হতে আবার সুপারিভশন ফি পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩০২ দুই কোটি ৩০ লাখ ২০ হাজার চারশত আটত্রিশ টাকা। এর বাইরে নেগোশিয়েটেড চুক্তিমূল্য বাজারমূল্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হওয়া সত্ত্বেও অপ্রাপ্য প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রদান করায় সরকারের ২২৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭০ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে । এর পাশাপাশি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে সার্ভিস এরিয়ায় কাজ সম্পাদনের নামে প্রকল্প এলাকার বাইরে ২৮টি বাংলো (পর্যটন কেন্দ্র) নির্মাণে সরকারের আর্থিক ক্ষতি ২৭৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। একই সাথে চুক্তির আইটেমের বিপরীতে কোনোরূপ কমপ্লায়েন্স ডকুমেন্টস ও কাজ সম্পাদন ব্যতিরেকে ব্যয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। শুধু এই চার খাত মিলে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৫১৩ কোটি টাকার বেশি, যা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যে মূল প্রস্তাব ছিল তার ১৩ শতাংশের বেশি। অন্যান্য খাতের দুর্নীতির হিসাব করা হলে প্রায় এক- চতুর্থাংশ অর্থ কম খরচে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হতো বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
নিরীক্ষা মন্তব্যে বলা হয়, জবাব আপত্তি নিষ্পত্তি সহায়ক নয়। কারণ, চুক্তিতে সার্ভিস এরিয়া বলতে টানেল নির্মাণকাজের সুবিধার্থে এমপ্লয়ার্স সাইট ফ্যাসিলিটিস আওতায় শুধু সাইট অফিস নির্মাণের সংস্থান রয়েছে। সার্ভিস এরিয়া টানেল নির্মাণের সাথে সম্পর্কিত ছিল না। সুতরাং টানেল নির্মাণে হু করে পর্যটন ব্যবসার জন্য অর্থ ব্যয় করার সুযোগ নেই। চুক্তির আইটেমের বিপরীতে কোনোরূপ কমপ্লায়েন্স ডকুমেন্টস এবং কাজ সম্পাদন ব্যতিরেকে ব্যয় দেখিয়ে বিল পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি ২৫০ কোটি টাকা অনিয়মের বিবরণে বলা হয়, প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কন্টিনজেন্সি আইটেমের অধীন চুক্তির মূল্যের সময় ২৫০ কোটি টাকা চূড়ান্তভাবে পরিশোধ করে। আইটেমের বিপরীতে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশক্রমে বিল পরিশোধ করতে হয়। চুক্তির অন্যান্য আইটেমে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসসহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশক্রমে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আলোচ্য আইটেমের ক্ষেত্রে কন্টিনজেন্সি বাবদ ব্যয়ের উল্লেখ করা হলেও ওই ব্যয়ের স্বপক্ষে প্রমাণক হিসাবে কী বাবদ খরচ করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো বিল-ভাউচার বা কমপ্লায়েন্স ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি। ফলে পুরো অনিয়মের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্প বহির্ভূত খরচ দেখানো সরকারের আর্থিক ক্ষতি।