• ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন প্রশ্নে উত্তপ্ত রাজনীতি

দখিনের সময়
প্রকাশিত মার্চ ২২, ২০২৫, ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ
আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন প্রশ্নে উত্তপ্ত রাজনীতি
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় রিপোর্ট:
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রশ্নে এই মুহূর্তে দেশের রাজনীতি উত্তপ্ত। এই পেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এরপর দলটিকে নিষিদ্ধের পর ভোটের দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একই প্রশ্নে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাদের মতামত জানান।
গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের মন্ত্রী-এমপিসহ বিচার শুরু হয় নানা পর্যায়ের নেতাদের। এরই ধারাবাহিকতায় সামনে আসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি। তবে ২০ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। কোনো দাবিতেই পেছাবে না নির্বাচন।’
এরপর দলটিকে ফেরাতে চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। ২০ মার্চ রাতে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দাবি করেন, দলটিকে ফেরাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চলছে। এর মূলভাগে রয়েছে ভারত। আর সেই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে সাবের হোসেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, গণহত্যা-লুটপাটে জড়িত নয়, এমন নিরপরাধ কারও নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আপত্তি নেই। বিচার শেষে জনগণ চাইলেই রাজনীতিতে ফিরতে পারে আওয়ামী লীগ। শুক্রবার (২১ মার্চ) সকালে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে ফায়দাবাদ মধ্যপাড়া হাজি শুকুর আলী মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে এ জনসভায় তিনি বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনার বিচার নয়, আদালতের ন্যায়সঙ্গত বিচার হলে পরে আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে না। তখন কে রাজনীতি করবেন বা করবেন না, সেই দায়িত্ব জনগণ নেবে।’ চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে। মূলত হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টের পরপরই সারা দেশে এই পরিস্থিতির মাত্রা পায়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। শুক্রবার (২১ মার্চ) রাতে বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। খুনিদের বিচারের কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলছেন, ফ্যাসিস্টদের ফেরা জনগণ মেনে নেবে না।  ফেসবুকে নিজের আইডিতে এক পোস্টে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন মেনে নেবে না জনগণ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গণহত্যার বিচার ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশও দেখছেন না ডা. শফিকুর রহমান। পোস্টের কমেন্টে জামায়াত আমির লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ৩৬ জুলাই ক্লোজড হয়ে গিয়েছে। নতুন করে ওপেন করার কোনই অবকাশ নেই।’ পোস্টের শুরুতে জামায়াতের আমির বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বস্তরের জনগণকে সংযত, সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থেকে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাই। আল্লাহ তাআলার একান্ত মেহেরবানীতে আমরা পবিত্র রমাদানুল কারীম অতিক্রম করছি। বাংলাদেশ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাক অতিক্রম করছে।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির বিরোধিতা করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেলে রংপুর নগরীর সেনপাড়ায় তার বাসভবন দ্য স্কাই ভিউতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে নই। আওয়ামী লীগ একটি দল, যারা দলের ভেতরে বাস করছে, তারা খারাপ হতে পারে। আওয়ামী লীগ একটি গাড়ি তার ড্রাইভার খারাপ হতে পারে কিন্তু গাড়িটা তো খারাপ না। নির্বাচন নিয়ে জিএম কাদের বলেন, হাসিনা ফ্যাসিবাদী আমরা দেখেছি। সে জোর করে অর্ধেক লোককে বাদ দিয়ে ইলেকশন করবে। জোর করে আমাদের নিয়ে আসবে, আবার কাউকে জোর করে বাদ দেবে। এনারা জোর করে আমাদের বাদ দিয়ে ইলেকশন করবে। একটি বিশাল অঙ্কের জনসংখ্যাকে বাইরে রেখে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এতে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না এবং সামনের দিকে দেশ আরও সংঘাতময় দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় চলে যাবে।
আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো চেষ্টা বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এ দেশের তৌহিদি জনতা তাদের বিদায় করেছে। তাদের পুনর্বাসনের কোনো চেষ্টা বরদাশত করা হবে না। যদি দেশে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তা আমাদের লাশের ওপর দিয়ে করতে হবে।’