• ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদা-হাসিনা কিংস পার্টির ব্যর্থ কারিগর

দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
খালেদা-হাসিনা কিংস পার্টির ব্যর্থ কারিগর
সংবাদটি শেয়ার করুন...
আলম রায়হান
কেবল সামরিক শাসকরা নন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রধানরাও কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা করেছেন। পার্থক্য কেবল উদ্দেশ্য ও মাত্রায়। সামরিক শাসকরা কিংস পার্টি গঠন করেছেন গণতন্ত্রের মুখোশ হিসেবে। নির্বাচিত সরকারের প্রধানরা কিংস পার্টি গঠন করেছেন কিঞ্চিত ভারবাহী গাধা হিসেবে। কিন্তু ‘রাজনীতির গাধারা’ মালিককে মকসুদে পৌঁছেদিতে পারেননি বলে প্রমানিত।
প্রধান দলগুলোর বর্জনের মুখে  ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিংস পার্টি গঠন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিশেষ সুবিধা হয়নি। ২৭৮ টি আসন লাভ করে বিপুল বিজয় পায় সেসময় ক্ষমতাসীন বিএনপি। এ নির্বাচনে একমাত্র দল ছিলো ফ্রিডম পার্টি। এবং বিরোধী দল থেকে একমাত্র বিজয়ী সবেধনমনি কর্নেল রশিদ। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ১০ জন। ফাঁকা আসন ছিলো ১১টি। সংসদ নির্বাচনে অকল্পনীয় এই বিজয়ের পর গঠিত খালেদা সরকার মাস খানেক টিকে ছিলো। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে কিংস পার্টি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপি সরকার সফল না হলেও বেশ সফল হয়েছেন ‘মাদার তেরেসা’ ভাব থেকে রাজনীতিতে রাক্ষষে পরিনত হওয়া শেখ হাসিনা। তিনি অসংখ্য কিংস পার্টি গঠন এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। এ কান্ড তিনি শুরু করেন ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে। এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি কিংস পার্টি গঠন করেছেন ব্যাংঙ্গের ছাতার মতো। অবশ্য ভোটের সময় এদেরকে হালুয়া-রুটি তো দূরের কথা, হাড্ডিও দেননি রাজনীতিতে অতি চতুর শেখ হাসিনা।
বরং ‘আমি এবং ডামি’ ধারায় ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে শেখ হাসিনা নির্বাচনী রাজনীতিতে অভূতপূর্ব ভেলকী দেখিয়ে দিয়েছেন। এ নির্বাচনে ২৯টি দল থেকে ১৯৬৫ প্রার্থী এবং ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মোট ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী। দল এবং প্রার্থীর প্লাবন বইলেও আসন ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। ফলে কিংস পার্টিগুলো ভেসেগেছে কচুরীপানার মতো। ২৬৩ আসলে মনোনয়ন দিয়ে সবকটিতেই বিজয়ী হয় অওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভরকরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি শেখ হাসিনা। যেমন পারেনি খালেদা জিয়া ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির তামাশার নির্বাচন করে। দুজনকেই মসনদ থেকে নামতে হয়েছে। তবে বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মসনদ থেকে নামার মধ্যে পার্থক্য বিশাল।
১৯৯৬ সালের সাজানো নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া এক মাসের মধ্যে পদত্যাগ করে পরিত্রাণ পেয়েছেন এবং পরের নির্বাচনের বিরোধী দলের আসনে বসেছেন। আর পরের ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে আবার সেই পুরনো তরিকায় হাটার চেষ্টা করেছেন। এবং অনিবার্য করে তুলেছেন ১/১১ সেনা সমর্থিত কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। খালেদা জিয়ার মতো ইতিহাস থেকে শেখ হাসিনাও শিক্ষা নেননি। ভোটের রাজনীতির ময়দানে ২০১৪ সাল থেকে অনিয়ন্ত্রিত আচরনের সাফল্যে ২০১৮ পেরিয়ে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারীর সংসদ নির্বাচনও করেফেলেন তিনি। ভেবেছিলেন তার রাজত্বের আর এক মেয়াদ শুরু হলো। কিন্তু বিধি বাম। নির্বাচনের ৬ মাসের মাথায় ক্ষমতার মসনদ থেকে নামতে হয়ে। যা বেগম জিয়া ৯৬ সালে করেছিলেন ১ মাসের মধ্যে। ক্ষতা ছাড়র সমং সীমা কেবল নয়। আরো পার্থক আছে। এ পর্থক আকাশ পাতাল। বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছেড়ে পালাননি। কিন্তু শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। তাও আবার ভারতে। যে দেশ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে আগ্রাসী ও বৈরী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত। বলা হয়, ভারতে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন শেখ হাসিনা। যদিও তিনি একাধিকবার বাগারম্বর করেছেন, “শেখ মুজিবের মেয়ে পালায় না!”
একাধিক কিংস পার্টি গঠন করলেও এগুলোকে লেজকাটা শিয়ালের ইমেজে দাঁড় করিয়েগেছেন শেখ হাসিনা। কিংস পার্টি হিসেবে জন্ম লাভকারী বিএনপি রাজনীতির নানান বাস্তবতায় রাজনীতিতে শীর্ষে পৌছে স্থায়ীত্ব পেলেও আর এক কিংস পার্টি জাতীয় পার্টির ক্ষমতাচ্যূত হবার পর ‘ইউয়ুর সঙ্গে কিউ’ হতেহতে রাজনীতির অথৈ পাথারে ভাঙ্গা তরীর মতো হয়েগেছে।
জিয়া-এরশাদ-খালেদা-হাসিনার রাজত্বকাল ছাড়াও কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা হয়েছে ১/১১এর ফকরুদ্দিন-মইন ইউ আহমেদ সরকারের আমলেও। সেময় শিখন্ডি করা হয়েছিলো প্রতিথজশা সাংবাদিক এবং ছাত্র রাজনীতি থেকে বেড়ে ওঠা খুচরা রাজনীতিক ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীকে। কিন্তু এই উদ্যোগ কোন কাজে আসেনি। প্রথমে বিএনপি এবং পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপোষ রফায় ২০০৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচন দিয়ে পালাতে হয়েছে ১/১১-এর প্রধান কুশিলবদের। অবশ্য এদের এক পালের গোদা শেখ হাসিনার আর্শিবাদ নিয়ে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।