• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলু নিয়ে কৃষকের আহাজারি, খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি

দখিনের সময়
প্রকাশিত মার্চ ১২, ২০২৫, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ণ
আলু নিয়ে কৃষকের আহাজারি, খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় রিপোর্ট:
দেশে এবছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এখন আহাজারি করছেন। আলু চাষ করে কৃষকরা লোকশানে পড়েছেন। প্রতিকেজি আলু চাষে অন্তত ২০ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। কিন্তু ফসল তোলার পর আলু বিক্রি করতে হচ্ছে গড়ে ১৩ টাকা দরে। বীজ, সার, লেবার কস্টিং মিলায়ে বিঘাপ্রতি কৃষনের খরচ লাখ টাকার র ওপরে। কিন্তু এখন আলু বিক্রি করে পাচ্ছেন গড়ে ৬৫ হাজার। বিঘায় ৩৫ হাজার টাকা লস।
অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেই বাংলাদেশের বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে রীতিমত হিমসিম খাওয়ার একপর্যায়ে ভারত থেকে আলু আমদানির সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছে সরকারকে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রতিবছর পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়ার পরও সংরক্ষণের অভাবে দেশের আলুর বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এর জন্য সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতাই প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী জেলাগুলোর একটি হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বহু কৃষক আলু চাষ করেছেন। গতবছর আলু চাষে ভালো লাভ পেয়েছিলেন কৃষকরা। ফলে অনেকেই এবার চালু চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। অন্যান্য বছর যেখানে প্রতি বিঘায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার কেজি আলু হয়, এবার সেখানে ফলন হয়েছে প্রায় ৯০০ কেজি বেশি। কিন্তু বাম্পার ফলন হলেও সেই পরিমাণ আলু সংরক্ষণের জন্য যত সংখ্যক হিমাগার প্রয়োজন, সেটা কোনো জেলাতেই নেই। আর এ বছর আলু সংরক্ষণে খরচও বাড়ছে, যার প্রভাবে বাজারে পড়তে পারে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলাটিতে চলতি বছর আলুর উৎপাদন সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর বিপরীতে সেখানকার ৫৮টি হিমাগারে সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আলু রাখা যাবে। এদিকে, হঠাৎ চাপ বেড়ে যাওয়ায় আলু রাখার খরচ বাড়িয়ে দিয়েছেন হিমাগার মালিকেরা। এতে উৎপাদকদের মধ্যে যারা আলু সংরক্ষণ করতে চাচ্ছেন, তারা আরও বেকায়দায় পড়েছেন। এ অবস্থায় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কিছুটা লোকসান মেনে নিয়েই আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষীরা। বিক্রি না করে ঘরে আলু রাখলে সব পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে।
আগে যেখানে প্রতিকেজি আলু রাখতে চার থেকে পাঁচ টাকা খরচ হতো, সেটা এখন আট টাকা করে চাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়। আলুর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন অগ্রিম টাকাও চাচ্ছেন হিমাগার মালিকরা। এদিকে আলু সংরক্ষণের খরচ বৃদ্ধির জন্য হিমাগার মালিকরা বলছেন, এখন যে টাকাটা চাওয়া হচ্ছে, সেটাই সত্যিকারের খরচ। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে এতদিন লস দিয়ে কম টাকা নেয়া হয়েছে। হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও সম্প্রতি একই দাবি করা হয়। তারা বলছেন, প্রতিবছর আমরা লস দিবো, সেটা তো হয় না। যাদের কথা ভেবে আমরা এতদিন লস দিয়েছি, তারাই তো কয়েক মাস আগে ৮০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করেছে। তাহলে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া দিতে অসুবিধা কোথায়? তবে কৃষকদের দাবির মুখে সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি হিমাগারের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী, এখন থেকে হিমাগারে আলু রাখতে গেছে প্রতি কেজিতে চাষীদের ছয় টাকা ৭৫ পয়সা করে দিতে হবে।