Home জাতীয় বিশ্বের ইতিহাসে বর্বরতম হত্যাকান্ডের দিন ১৫ আগস্ট: জাতীয় শোক দিবস

বিশ্বের ইতিহাসে বর্বরতম হত্যাকান্ডের দিন ১৫ আগস্ট: জাতীয় শোক দিবস

বিশেষ প্রতিনিধি:
বিশ্বের ইতিহাসে বর্বরতম হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে ১৯৭৫ সালের আজকের দিন, ১৫ই আগস্ট। ভোর রাতে ঘাতকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতক দল। যথন ফজরের নামাজরে পবিত্র আজানের ধ্বনি মানুষের ঘুম থেকে এবাদতের জন্য ওঠার সময়, তখন আতংকগ্রস্থ মানুষের ঘুম ভাঙ্গে ঘাতক বাহিনীর বুলেট আর মর্টার সেলের শব্দে।
আতংকগ্রস্থ মানুষ কোন কিছু আঁচ করার আগেই বাংলাদেশের কোটি মানুষের আশা-ভরসা-স্বপ্ন এবং বিশ্ব নেতা বঙ্গবন্ধুর লাশ ৩২ নম্বরের বাড়ির সিড়েতে লুটিয়ে পড়ে। সাথে বিজয়ের হাসি হাসে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। যাদের আনুষ্ঠানিক পরাজয় হযেছিলো মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতির বিজয়ের মধ্য দিয়ে। আর যে দিনটি বাঙ্গালীদের জন্য বিজয়ের সেই দিনটিই আবার স্বাদীনতা বিরোধী এবং হানাদার পাকিস্তানের জন্য পরাজয়ের। এই পরাজয় তারা মানেনি। যার নির্মম উদাহরণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু হত্যা। আর এ হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চাকা দ্রুত পিছনের দিকে ঘুরতে শুরু করে। যেই চাকা থামাতে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার সময় লেগেছে ২১ বছর।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনীরা চারটি দলে বিভক্ত হয়। এদের একদল ছিল মেজর হুদার অধীনে বেঙ্গল ল্যান্সারের ফার্স্ট আর্মড ডিভিশন ও ৫৩৫ পদাতিক ডিভিশনের সদস্যরা যারা বঙ্গবন্ধু মুজিবের বাসভবন আক্রমণ করে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বিদেশি গোয়েন্দাদের থেকে ইঙ্গিত পেয়ে চক্রান্তকারীরা সরকার উৎখাত করে নিজেদের সামরিক সরকারের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সাজায়। মুজিবের মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণে সম্মত হন। তবে মোশতাক ও সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি চক্রান্তে জড়িত ছিল বলে  সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ দাবি করেন। বরঅ হয়, তৎকালীন সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স এবং এয়ার ভাইস মার্শাল আমিনুল ইসলাম খান মুজিব হত্যার চক্রান্ত সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। হত্যাকান্ডে সক্রিয় ছিলো সৈয়দ ফারুক রহমান, খন্দকার আবদুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মহিউদ্দিন আহমেদ, এ.কে.এম মহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা এবং এস.এইচ.এম.বি নূর চৌধুরী। এরা সবাই ছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর।
বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কয়েকজন রক্ষীর পরই হত্যার শিকার হন বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামালকে। গোলাগুলির শব্দে উপড় থেকে নীচে নেমে আসার সময় ঘাতকরা হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এর পর ঘাতকরা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ বাড়ির সকলকে হত্যা করে। এমনকি৮ি বছরের শিু রাসেলকেও রেহাই দেয়নি ঘাতক দল। এদিকে দুটি ঘাতক দল বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ ফজলুল হককে (মনি) তার অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রীর সাথে ১৩/১, ধানমন্ডিতে এবং মুজিবের ভগ্নিপতি ও সরকারের  মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে হত্যালীলা চালায়। সেসময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন বিধায় ঘাতকদের বুলেট থেকে বেঁচেগেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনি ব্যবস্থায় শাস্তি এড়াবার ব্যবস্থা প্রদানের জন্য বাংলাদেশে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারিখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ এ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত আইনে এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ হাইকোর্ট।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার এবং ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মামলা করেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল তৃতীয় বিচারক মোহাম্মদ ফজলুল করিম ২৫ দিন শুনানীর পর অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ নিশ্চিত করেন৷ ৯] ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বাদী-বিবাদীর আপিলের প্রেক্ষিতে চার দফায় রায় প্রকাশ হয়, সর্বশেষ আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর থেকে  ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এরই মাধ্যমে ১৩ বছর ধরে চলা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের আইনি ও বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়।
বঙ্গবন্ধু হতার বিচারে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হলেও এখনো বিদেশের মাটিতে পলাতক আছে বঙ্গবকন্ধুর ৬খুনী। পলাতক খুনীদের মধ্য এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বলছে বিবিণ্ন সূত্র।এদিকে এখনো ধরাছোয়ার বাইরে আছে, সেদিন হত্যা ষড়যন্ত্রের কুশিলবরা। এদের মুখোষ উম্মোচন এখন সময়রে দাবি, ইতহাসের অনিবার্যতা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

ফ্যাসিজমের ‘সিম্বল’ চুপ্পুর বিদায় সমাগত?

দখিনের সময় ডেস্ক: ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আনার দাবি সমন্বয়কদের নতুন না। এর আগেও সমন্বয়করা দাবি তোলার পর বিভিন্ন পদে...

কোটি টাকা নেন তৃপ্তি

দখিনের সময় ডেস্ক: তৃপ্তি দিমরি ২০২৩ সালে অ্যানিম্যাল ছবিতে অভিনয়ের জন্য ৪০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। এই চরিত্রে সাফল্যের পর রাতারাতি নিজের পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। এখন দ্বিগুণ...

ক্ষমতার রূপান্তর হয়েছে, নতুনের পুরোপুরি জন্ম হয়নি: সলিমুল্লাহ খান

দখিনের সময় ডেস্ক: অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, দেশে দুই মাস আগে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ক্ষমতার রূপান্তর হয়েছে; কিন্তু নতুনের পুরোপুরি জন্ম হয়নি। এমন সময়ে...

না ফেরার দেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী

দখিনের সময় ডেস্ক: সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বরুদ্দোজ্জা চৌধুরী মারা গেছেন। শনিবার (৫ অক্টোবর ) মধ্যরাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ফুসফুসের সংক্রমণ...

Recent Comments