• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তোমার হুমায়ূন আহমেদের আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলেন, গুলতেকিনের আবেগঘণ পোস্ট

দখিনের সময়
প্রকাশিত অক্টোবর ৪, ২০২৫, ১০:০০ পূর্বাহ্ণ
তোমার হুমায়ূন আহমেদের আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলেন, গুলতেকিনের আবেগঘণ পোস্ট
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
হুমায়ূন আহমেদের প্রাক্তন স্ত্রী গুলতেকিন খানের একটি পোস্ট নেটিজনদের মাঝে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নানাজনে নানা কথা বলছেন। তাকে সমবেদনা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন- হুমায়ূন আহমেদ এখন বেঁচে নেই। তার অনুপস্থিতিতে এমন খোলামেলা পারিবারিক কথা কি জন সমক্ষে প্রকাশ করা উচিত? কবি গুলতেকিন খান কী লিখেছেন ওই পোস্টে? জানতে হলে নিচের লেখাটি পড়ুন- যা তার টাইমলাইন থেকে চয়ন করা হয়েছে।
গুলতেকিন লিখেছেন “এই লেখাতে আমার সম্পর্কে একটিও খারাপ মন্তব্য দেখতে চাই না! এই সত্যি কথাগুলো আমি লিখেছি শুধু মাত্র কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে। এতো ব্যক্তিগত ঘটনা লিখেছি কারণ আর কোনো মেয়ে আমার (পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিলো।)মত ভুল যেনো না করে।
জুন মাসের ৬ তারিখ ছিল রবিবার। শীলাকে যেমন হাসতে হাসতে বলেছিলাম প্রায় একই ভাবে ইকবাল ভাইকেও জানালাম। ড. ইয়াসমীন হক তাঁর পরিচিত কয়েকজন ষধুিবৎ আমার বাসায় পাঠান। তাঁদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ব্যাংকে টাকা পয়সা কেমন আছে?
আমি বলি, কার ব্যাংকে? আপনাদের জয়েন্ট একউন্টে- এ?
আমাদের তো কোনো জয়েন্ট একউন্টে নেই! ব্যাংকে হুমায়ূন আহমেদের কতো টাকা আছে? সেটা তো আমি জানি না তখন উনি ঁঢ়ংবঃ হয়ে বলেন, কিছু একটা বলেন?
আমি বলি, একজন মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আছে! : কী ধরণের সম্পর্ক ? : যতদুর জানি সব ধরণের সম্পর্ক। উনি নিজেই আমাকে জানিয়েছেন! আমি বাকি কারো নাম বললাম না! তারা এখন বিয়ে করে শান্তিতে আছেন। কী দরকার তাদের নাম বলার! খধুিবৎ রা দখিন হাওয়ায় (আমার ফ্যাটে যেখানে আমার মৌখিক ধমৎববসবহঃ নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ থাকছিলেন) সেখানে যান। এবং চলেও আসেন আমার কাছে।
একজন বলেন তিনি তো কয়েকটি বই দেখান যেখানে আগে থেকেই আন্ডার লাইন করা ছিলো। : হোটেল গ্রেভারিন, মেফ্লাওয়ার আরো কিছু বই। আপনি নাকি অনেক আগে থেকেই ডিভোর্স চাচ্ছিলেন? :
ওগুলো সত্যি না। ডিভোর্সের নিয়ম আমি এখনো জানি না! এ্যামেরিকাতে কী ভাবে জানবো? “হোটেল গ্রেভারিনে” ওসব বানিয়ে লেখা! তাঁর আত্মজীবনী মূলক বই এ অনেক কিছুই তাঁর কল্পনা থেকে লেখা। ঐসব বই লেখার সময় আমি তাঁকে বার বার বলেছিলাম ওসব না লিখতে! কিন্তু উনি আমাকে তখন বলেছিলেন, একদম সত্যি হচ্ছে জলের মতো, কোনো স্বাধহীন, তাই কিছু মিথ্যা থাকলে লোকজন পড়ে মজা পাবে! আমি শুধু তাঁর পায়ে ধরে বাকি রেখেছিলাম। বার বার বলেছি, আমার সম্পর্কে কিছু না লিখতে। আমি বাসার থেকে বের হয়ে যাইনি! ওর তখন খারাপ একটি সময় যাচ্ছিল, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির জন্যে একটি পরীক্ষা হয় যার নাম কিউমিলিয়েটিভ, সেখানে দশ নাম্বার থাকে। পরীক্ষার জন্েয সম্ভবত দুই বছর সময় থাকে। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা হয় এবং দশের মধ্েয তিনটি ২ নাম্বার পেতে হয়, বাকি গুলো ১ নাম্বার পেলেই হয়। কিন্তু সেঁ অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েও একটিতেও ২ নাম্বার পাননি তখনো। এটা নিয়ে তাঁর মধ্যে ফ্রাসটেশন কাজ করছিলো। তাছাড়া তিনি রেগে গেলেই বলতেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও। সেদিনও পরীক্ষায় ১ পেয়ে মেজাজ খুব খারাপ ছিল। বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করে। এবং এক পর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে যাও! : আমি বলি কোথায় যাবো? : উনি বলেন যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও! আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরো রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন।
আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প্যান্ট, পায়ে স্পন্জের স্যান্ডেলছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচন্ড ঠান্ডা! আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দেই আর বলি, দরজা খোলো প্লিজ, কলিংবেল বাজাতে থাকি কিন্তু দরজা খুলে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার হাত পা প্রায় জমে যায়! তখন দৌড়াতে থাকি। আমাদের বাসার কাছে একটি দোকান ছিলো। একজন এ্যামেরিকান বৃদ্ধা মহিলা তাঁর বিশাল ড্রয়িং রুমকে নানারকম মসলা, আচার, হারবাল জিনিস দিয়ে দোকান বানিয়েছিলেন। নাম ছিল “টচি”। আমরাও ওখান থেকে মসলা কিনতাম এবং প্রায়ই যেতাম নতুন কোনো মসলার খোঁজে! এমনিতে কাছেই মনে হতো কিন্তু সে শীতের সন্ধ্যায় যেন দোকানটি বাসার কাছে ছিলো সেটি মনে হলো বহু দূরে চলে গেছে! শেষ পর্যন্ত টচি পৌঁছেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম । মনে হলো স্বর্গে ঢুকেছি! বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলাম, আমি একটি ফোন করতে পারি কিনা! টাকা পরে দেবো! উনি বললেন, টাকা লাগবেনা, তুমি ফোন করো। তিনি আমার প্রাইভেসির জন্েয একটু দুরে সরে গেলেন। আমার একমাত্র মুখস্থ নাম্বারে ফোন করলাম । : এ্যান, আমি টিংকু বলছি।
: কী হয়েছে টিংকু, এমন ভাবে কথা বলছো কেনো? : এ্যান, তুমি কি আমাকে একটু তুলে নিতে পারবে?
আমি (এ্যানের ছেলে, এ্যারোনকে আমি বেবিসিট করি। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধুও) ওকে ঠিকানা বলি। এ্যান চলে আসে। আমি টচির বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠি। ও আমাকে একটি জ্যাকেট দেয়। আমি ভাবি, ও কেমন করে জানলো যে আমার গায়ে জ্যাকেট নেই? ওর বাড়িতে যেতে যেতে সবকিছু বলি ওকে। বাসায় পৌঁছে এ্যান আমাকে একটি রুম দেখিয়ে বলে, এখন তুমি ঘুমাওতো! সারাদিন কাজ করার ক্লান্তি, বাসা পরিষ্কার, রান্না কতো কী করেছি! কোনো কিছুতেই ঘুম আসেনা! ভয়ে, উৎকণ্ঠায় এতোক্ষণ কাঁদতেও পারিনি! বালিশে মাথা রাখতেই ঝর্নার মতো দু’চোখের জলে বালিশ ভিজে গেলো! নোভার কথা ভেবে কষ্ট গলার ভেতর আটকে গেলো! এখানে আমার মা-বাবা, ভাইবোন, কোনো আত্মীয়স্বজন নেই! কি করে সে পারলো এমন করতে? সারা রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটলো। বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আমি বসে থাকি। এ্যান আর স্টেইনলি নাস্তার টেবিলে এসে বসে। আমিও বসি ওদের সাথে। টেবিলে এ্যান বলে, কি ঠিক করলে? :
কী বলছো, এ্যান? : লয়্যারের সাথে কথা বলব না? এবারে ডিভোর্স পাঠাতে বলবে?
আমি ভয়ে আতকে উঠি! না, না। হুমায়ূন আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাগের মাথায় ওসব করেছে! তুমি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? নোভার জন্যে খুব মন খারাপ লাগছে!
ওরা দু’জন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে বাসায় ঢুকেই আমি নোভাকে কোলে নিয়ে দুতালায় যাই। বিছানায় বসে নোভাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে থাকি। আর বলি, নোভাকে আমার বোকামি করতে দেবোনা। ওর হাজবেন্ডের যেনো সাহস না হয় ওকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেবার! আমার চোখের সামনে অসংখ্য ছবি দেখতে পাই যেখানে একটি ১৮/১৯ বয়েসের তরুনী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন হুমায়ূন আহমেদ তাকে যা ইচ্ছে তা বলে বকছে। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইয়াসমীনের পাঠানো ঐ লয়্যারকে জিজ্ঞেস করতে কিন্তু পারিনি!”