হ্যালো বিকাশ থেকে বলছি ….

আবরার হাসনাইন ‍॥

বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে টাকা লেনদেনের সব চাইতে জনপ্রিয় সেবার নাম বিকাশ। বিগত বছরগুলোতে বিকাশের সাথে অন্য অন্য আরো অনেকগুলো কোম্পানি এই সেবা দিয়ে আসলেও, বিকাশেই সব চাইতে বেশি গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আসছে। মোবাইল ফোনে দ্রুত টাকা পাঠানো এবং উত্তোলনের সুবিধার কারণে এই সেবাটি অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ব্যাংক-এ না যেয়েও টাকা লেনদেন করতে পারছে গ্রাহকরা । কিন্তু এই সেবা ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকেই হারিয়েছেন তাদের সর্বশ। গত ২ই জুলাই ২০২০ তারিখে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এক বিকাশ ব্যবসায়ীর সাথে। জানা যায়, ঐদিন বেলা ১০:২৪ ঘটিকার দিকে একটি নাম্বার থেকে কল আসে । ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি নিজের পরিচয় দেয়, বিকাশের এজেন্ট হিসাবে। তথা কথিত সেই ব্যক্তি বলেন, বিকাশের কোম্পানির পক্ষ থেকে আমরা একটি সার্ভে করছি আপনি আমাদেরকে কিছু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। তখন দোকানে উপস্থিত ছিলেন মালিকের মামাতো ভাই । তখন মালিকের ভাই বিকাশের পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিকে বলেন, ঠিক আছে আপনি একটু পরে ফোন দিন। এই বলে দোকানের মালিকের ভাই সেই জোনের বিকাশের যে ক্যাশ কালেকশন করেন সেই অফিসারকে ফোন করেন।

উক্ত অফিসার তাকে জানানে যে, হ্যাঁ বিকাশ থেকে এমন একটি সার্ভে চলেছে, তাকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে বলেন। তার কিছু পর আবার সেই প্রতারক চক্র ফোন করেন এবং তার সাথে ১৯ মিনিট যাবত কথা বলেন। এই কথোপকথনের মাঝে প্রতারক চক্র, সেই ব্যক্তির কাছে কোন প্রকারের পিন নাম্বার অথবা ওটিপি নাম্বার চায় নি, তারা শুধু কথা বলেছেন। এরপর প্রতারকরা তাকে বলেন, আমাদের সার্ভে টি আপনি সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করেছেন এবং শুধু আপনার জন্য বিকাশের পক্ষ থেকে একটি অফার আছে যে আপনি এখনই আপানার বিকাশ নাম্বার এ নগদ ৩০,০০০ টাকা ক্যাশ ইন করলে আপনি ৩,০০০ টাকা ক্যাশ ফেরত পাবেন। তাদের কথার উপরে ভিত্তি করে উক্ত ব্যক্তি ৩০,০০০ টাকা ক্যাশ ইন করেন। এরপর ভুক্তভোগী ব্যক্তি তার বিকাশ একাউন্ট এ ঢুকতে চেষ্টা করলে তিনি দেখতে পান, তার অ্যাকাউন্ট টি বার বার ব্লক দেখাচ্ছে। তার কিছুক্ষণ পর তিনি জানতে পারেন, তাদের দোকানের নাম করে সেই প্রতারণায় ব্যবহারকৃত নাম্বার থেকে নগদের এজেন্ট কে ৫০,০০০ টাকা পাঠাতে বলেন। এই কথা তাদের কাছ থেকে শুনে ভুক্তভোগী ব্যক্তির সাথে তার নগদ অ্যাকাউন্ট এ ঢুকতে গেলে দেখে সেটিও ব্লক হয়ে গেছে।

পরবর্তীতে সে তার রকেট অ্যাকাউন্ট এ ঢুকতে গেলে একই ঘটনা দেখতে পান। তিনি বুঝতে পারলেন যে, তিনি সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন। তার এই ১৯ মিনিটের কথা বলার সময় প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে মোট ১ লখ্য ২৬ হাজার টাকা। এই ঘটনার ঠিক পরের দিন ভুক্তভোগী ব্যক্তি বিমান বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ভুক্তভোগীরা  জানান, বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব, জাহিদ বিন ইসলামের সাথে তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এবং পরবর্তীতে তার সহযোগিতায় তারা গত ৩রা জুলাই ২০২০ তারিখে একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন। এই ঘটনার তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে, এসআই দিপায়নকে। এই ঘটনার তদন্তকারি কর্মকর্তার সাথে কথা বললে, তিনি জানান তারা বিকাশ, নগদ এবং রকেটের কাছে ঘটনার দিনের যাবতীয় লেনদেনের সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়েছেন। তাঁরা এই কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন এটি একটি সঙ্ঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এছাড়া বিকাশ কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে সেই সকল অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে রেখেছেন। বিকাশ কর্তৃপক্ষ আরো বলেন, আমরা এই ধরণের প্রতারণার ব্যাপারে বিভিন্নভাবে সতর্ক করার পরও ব্যবহারকারীরা সতর্ক হচ্ছেন না। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দাবি এই ধরণের ঘটনা দমনে শুধু সতর্ক করায় যথাযথ ব্যবস্থা হতে পারে না। তাঁরা বলেন, যেহেতু আমাদের টাকা বিকাশের অ্যাকাউন্ট থেকে বিকাশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চুরি হয়েছে, তাই বিকাশসহ অন্যান্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কিভাবে তাঁদের দায় এড়িয়ে যায়? ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, নগদের ডিলার কিভাবে একটি অপরিচিত নাম্বার পেয়ে তারা আমাদের এজেন্ট নাম্বারে এতো গুলো টাকা পাঠিয়ে দিলেন? তিনি আরো দাবি করেন এই ঘটনার সাথে অবশ্যই কোম্পানীর কিছু অসাধু কর্মচারীও জড়িত থাকতে পারেন। ভুক্তভোগীদের দাবি অতি দ্রুত এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা হোক ।