Home অন্যান্য নির্বাচিত খবর বরিশাল মুক্তদিবস আজ, অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী

বরিশাল মুক্তদিবস আজ, অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায় হানাদার বাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥

বরিশাল হানাদার মুক্ত হয় একাত্তরের আজকের দিনে। ৮ ডিসেম্বর বরিশাল মুক্ত দিবস। এদিন বেলা ১১টার পরই জনগণ জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির দালালেরা দ্রুত পালাতে থাকে। সকল বাসভবনে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

পাক সেনারা ১৬ নভেম্বর হতে বরিশাল, পটুয়াখালীর ক্যান্টনমেন্টে সীমাবদ্ধ থাকে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রায় সকল থানা মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয়। ৩ ডিসেম্বর পাক ভারত যুদ্ধ শুরু হয়। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর বরিশাল ও রহমতপুর বিমান ঘাঁটিতে মিত্র বাহিনী বোমা বর্ষণ করে। ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় বরিশালে পাক সেনারা কার্ফু দেয়।

যশোর ও খুলনা থেকে পাক সেনারা পালিয়ে আসে এবং তারা কয়েকটি লঞ্চ ও স্টিমারের করে ঢাকা অভিমুখে যাবে। বরিশাল ওয়াপদা অফিসের পাকসেনা বেলা ১১টার মধ্যে লঞ্চে আরোহণ করে। তারা ১২টার মধ্যে লঞ্চ ও স্টিমারযোগে বরিশাল ত্যাগ করে। এদিকে মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা চলতে থাকে।

৮ ডিসেম্বর বিকালে সুলতান মাস্টার তার বাহিনী নিয়ে বরিশাল শহরে প্রবেশ করে। মেজর শাহজাহান ওমর ১০ ডিসেম্বর শহরে আসে। তারপর সকল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাদের দল নিয়ে শহরে আসতে থাকে। চারদিকে বিজয় উল্লাস। আবার অনেকে প্রিয়জনদের হারানো ব্যথায় আনন্দাশ্রু ফেলছে। মুক্তিযোদ্ধারা দালালির অভিযোগে শর্ষিনার পীর মওলানা আবু জাফর মুহম্মদ সালেহ, মুসলিম লীগনেতা সৈয়দ মুহম্মদ আফজাল, আবদুর রব, শমসের আলী, সুলতান সর্দার, ইলিয়াস মাস্টারকে গ্রেফতার করে। অনেক দালালকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তখন জেলার শাসন নিয়ে সমস্যা হয়। সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আবদুর রহমান বেসামরিক প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তার দপ্তর ছিল পেশকার বাড়িতে নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের বাসায়। কিন্তু মেজর শাহজাহান ওমর দাবি করলেন সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তিনি জেলায় প্রধান। ১৭ ডিসেম্বর নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ৫০০ মুক্তিযোদ্ধাসহ বরিশাল শহরে পৌঁছেন এবং তিনি সাময়িকভাবে জেলার প্রশাসন পরিচালনার ভার গ্রহণ করেন। এনিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়।

বরিশালের পাকবাহিনীর সঙ্গে বরিশাল শান্তি কমিটির সম্পাদক সাজাহান চৌধুরী চলে যান। সাজাহান চৌধুরীর লঞ্চটি চাঁদপুরের পশ্চিম তীরে ফরিদপুরের চরে ৯ ডিসেম্বর বিমানের হামলায় ধ্বংস হয়। তিনি সেখানে মারা যান। গ্রামবাসীরা পরে তাকে নদীর তীরে কবর দেয়। পাক সেনাদের কয়েকটি লঞ্চ বরিশাল শহর থেকে ১৫ মাইল দূরে নন্দীবাজারের নিকট বিমান হামলায় আক্রান্ত হয়। লঞ্চ ডুবে গেলে পাক সেনারা পশ্চিম পারে ঠাকুর মল্লিক ও পূর্ব পারে নন্দীরবাজারে ওঠে। সংবাদ পেয়ে আগরপুর হতে নূর হোসেন কমান্ডার ও হাজার হাজার গ্রামবাসী ছুটে আসে। নূর হোসেন অনেক পাক সেনা হত্যা করে। গ্রামবাসীরা তাদের দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এমনকি মেয়েরা ঝাড়ু দিয়ে তাদের পিটায়।

নভেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধারা বরিশাল, পটুয়াখালী রিভিন্ন রণাঙ্গণে সুশিক্ষিত এবং সুসজ্জিত পাক সেনাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে তাদের শক্তি ও বীরত্বের পরিচয় দেয়। এ মাসে অধিক সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা মুজিবনগর থেকে বরিশাল আগমন করে। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকশ’ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। নভেম্বর মাসের পূর্বে মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী ক্যাম্প ছিল না। পাক সেনাদের আক্রমণের ভয়ে তারা এক জায়গায় বেশি দিন থাকতো না। কিন্তু নভেম্বর মাস হতে তারা অনেকগুলো স্থায়ী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পগুলোর মধ্যে ছিল বরাকোটা, বিন্না, শরিকল, পাদ্রীশিপপুর, কেউন্দিয়া, শ্যামপুর, দুধাল, চরামদ্দি  , কামারখালী, বিনয়কাটি, চাঁদপাশা, আগরপুর, ঠাকুর মল্লিক, বদরটুনী, পয়সারহাট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

একমাত্র ভোলয় ৪৮টি ক্যাম্প ছিল। সুন্দরবনে ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিনের অধীনে অনেক ক্যাম্প ছিল। তাদের প্রধান ক্যাম্প ছিল বগী। বরাকোটা যুদ্ধের পর ক্যাপ্টেন ওমর তার ক্যাম্প স্বরূপকাঠি থানার বিন্না গ্রামে স্থানান্তর করেন। নভেম্বর মাসে তিনি তাঁর ক্যাম্প পাদ্রীশিবপুরে নিয়ে আসেন। পাদ্রীশিবপুরের ফাদার জার্মান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপুরুষ। তার সেবায় সকল মুক্তিযোদ্ধা ছিল মুগ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি-আমেরিকান কিশোর হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল

দখিনের সময় ডেস্ক: এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমেরিকান-ইহুদি কিশোর (১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী) 'আমি হামাসের সাথে সহানুভূতিসম্পন্ন'- এমন বক্তব্যের সাথে একমত। ইসরাইলের একটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে...

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

মোহিনীর প্রেমের এআর রহমানের বিচ্ছেদ, যা বলছেন পুত্র

দখিনের সময় ডেস্ক: ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে এআর রহমান। সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যের অবসান। বুধবার রাতে রহমানের স্ত্রী সায়রার আইনজীবী এই খবর...

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

Recent Comments