দখিনের সময় ডেক্স:
অনেকেরই ধারণা গরুর মাংস খেলেই বুঝি স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। গরুর মাংসে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকায় অনেকেই সেটি খাওয়া এড়িয়ে চলেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, গরুর মাংসের ক্ষতিকর দিক যেমন আছে, তেমনি এই মাংস অনেক উপকারও করে থাকে। গরুর মাংস কতোটা নিরাপদ সেটা নির্ভর করবে আপনি সেটা কিভাবে কাটছেন ও রান্না করছেন এবং কতটুকু খাচ্ছেন। গরুর মাংস খাওয়ার সময় ঝোল খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে।
গরুর মাংস মানেই হাই ক্যালোরি, তা নয়। একটি মুরগির ডিমের কুসুমে ১৯০ মিলিগ্রাম ভালো কোলেস্টেরল থাকে যা চর্বি ছাড়া ২১০ গ্রাম গরুর মাংসের সমান, বলছেন মিসেস হাসিন। তাই গরুর মাংস মানেই অনেক বেশি কোলেস্টেরল এই ধারণা ভুল। গরুর মাংস বেশি তেল মসলা দিয়ে কসিয়ে ভুনা করে রান্না না করাই ভালো।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি হেলথ জার্নাল থেকে জানা গেছে, গরুর শরীরের ২টি অংশে চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে। একটি হল গরুর পেছনের রানের উপরে ফোলা অংশের মাংস। এবং পেছনের দিকের উপরের অংশের মাংস। তবে মাংসের বাইরে যে চর্বি লেগে থাকে সেটা রান্নার আগে কেটে ফেলে দিলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়। মাংসের টুকরো যতো ছোট হবে ততোই এর চর্বির পরিমাণ কমে যাবে। এ কারণে গরুর মাংস কিমা অথবা মাংস বাটায় চর্বি সবচেয়ে কম থাকে।
গরুর মাংসে যতো পুষ্টিগুণ আছে সেগুলো অন্য কোন খাবার থেকে পাওয়া কঠিন। তবে মাংস খেলে ক্ষতিকর হবে না উপকারী, সেটা নির্ভর করবে কতোটা নিয়ম মেনে, কি পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে। গরুর মাংস নিয়ম মেনে খেলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। কখনোই প্রতিদিন একটানা মাংস খাওয়া যাবে না। পুষ্টিবিদ তাসনিম হাসিনের মতে, গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হল সপ্তাহে দুই দিন, মোট তিন থেকে পাঁচ বেলা খাওয়া। সহজ করে বললে, প্রতি বেলায় ঘরে রান্না করা মাংস ২/৩ টুকরার বেশি খাবেন না।
উপকারিতা
পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, গরুর মাংসে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেমন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি২ বি৩, বি৬, এবং বি১২। আর এই পুষ্টিকর উপাদানগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পেশি, দাঁত ও হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে। ত্বক/চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অতিরিক্ত আলসেমি/ ক্লান্তি বা শরীরের অসাড়তা দূর করে কর্মোদ্যম রাখে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে। রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। খাবার থেকে দেহে শক্তি যোগান দেয়। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এবং অবসাদ/ মানসিক বিভ্রান্তি/ হতাশা দূর করে।
গরুর মাংস, হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি প্রোটিন থাকে মগজে, এরপর কলিজায়, তারপর মাংসে। পুষ্টিবিদ চৌধুরী তাসনিম হাসিনের মতে প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা নির্ভর করে আপনার ওজনের ওপর। ধরাযাক একজন মানুষের আদর্শ ওজন ৫০ কেজি। তিনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে প্রতিদিন তার ৫০ গ্রামের মতো প্রোটিন প্রয়োজন, তবে যদি তার কিডনি জটিলতা থাকে তাহলে তিনি প্রতিদিন ২৫ গ্রাম প্রোটিন খাবেন। মানে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক। আবার মেয়েদের মাসিক চলাকালীন কিংবা গর্ভবতী অবস্থায় এই পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
ক্ষতির দিক
অতিরিক্ত গরুর মাংস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। কারণ গরুর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। আর উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। গরুর মাংসে যে কোলেস্টেরল থাকে সেটি বেশি বেড়ে গেলে হার্টের শিরায় জমে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেয়। এতে হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচল করতে পারে না, অক্সিজেনের অভাব হয়। যার কারণে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। যারা গরুর মাংস বেশি খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এছাড়া গরুর মাংস বেশি খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।