রাশিয়ার সঙ্গে একগুচ্ছ চুক্তি করল ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ উপেক্ষা
দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ২০:২৮ অপরাহ্ণ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একগুচ্ছ চুক্তিতে সই করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে দুই নেতার দীর্ঘ বৈঠকের পর এই ঐতিহাসিক চুক্তিগুলো স্বাক্ষর হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ চুক্তিটি জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে। দীর্ঘ বৈঠকের পর পুতিন নিশ্চিত করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জেরে যখন রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে, তখনও ভারতের জন্য ‘অনবরত জ্বালানি সরবরাহ’ অব্যাহত রাখবে মস্কো। ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই আশ্বাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ কম দামে বিপুল পরিমাণ তেল কেনার কারণে ভারত বর্তমানে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা।
মূলত, রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানির জেরেই সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদি-পুতিনের এই চুক্তি সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সেই অর্থনৈতিক চাপকে উপেক্ষা করার নামান্তর। দুই দেশের বাণিজ্য ও কৃষি খাতের সম্পর্ক জোরদার করতেও একাধিক চুক্তি হয়েছে। চুক্তির দর-কষাকষি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন পুতিন। দুই দেশের বাণিজ্যে নিজেদের জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়ায় নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া ভারতের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণেও সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন পুতিন।
ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তিগুলোকে ‘আকর্ষণীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, আলোচনায় দুই দেশের সহযোগিতা জোরদারের উদ্দেশ্যে বহু নতুন চুক্তি সই হয়েছে। তিনি বলেন, তেল, গ্যাস, কয়লা- ভারতের জ্বালানি উন্নয়নের জন্য যা যা প্রয়োজন, রাশিয়া সব কিছুরই নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী। দ্রুত বর্ধনশীল ভারতীয় অর্থনীতির জন্য আমরা জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত। পুতিন আরও জানান, আজকের দিনটি হবে ‘ফলপ্রসূ’, কারণ প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, বিমান ও মহাকাশ- এসব খাতের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও শ্রমের গতিশীলতা। তবে কোন কোন নতুন চুক্তি হয়েছে- সেসব বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের এই সফরটি ছিল ভারতের জন্য এক কূটনৈতিক ভারসাম্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা। ভারত একদিকে যেমন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও জ্বালানির ওপর নির্ভর করে, তেমনি অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ) ভারতের রপ্তানি অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যক। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক প্রবীণ দোনথি উল্লেখ করেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ভারত পশ্চিমা বিশ্বের কৌশলগত অংশীদার হতে চাইলেও রাশিয়ার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক বজায় রাখাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই সফরের মাধ্যমে ভারত ওয়াশিংটনকে স্পষ্ট বার্তা দিল যে, তারা তাদের ঐতিহাসিক মিত্রতাকে কোনো চাপের মুখে বিসর্জন দেবে না।