Home শীর্ষ খবর অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হালিমা খাতুন স্কুল, ১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ

অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হালিমা খাতুন স্কুল, ১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ

মামুনুর রশীদ নোমানী, অতিথি প্রতিবেদক:
অনিয়ম ও দুর্নীতিতে চরম সংকটে পড়েছে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী হালিমা খাতুন স্কুল। শিক্ষকরা নিয়োজিত কোচিং বানিজ্যে। স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে স্কুলের লেখা-পড়ার মান তলানীতে পৌছেছে। বিভিন্ন ‍উৎসের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্ধ ও কোন্দল চরমে পৌছেছে। কোনকোন ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের শিক্ষকদের দমন করা হচ্ছে স্পর্শকাতর বিষয়ে অভিযোগ ‍এনে। ‍এ বিষয়ে ১৩ ছাত্রীকে য়ৌন হেনস্থা করার চেষ্টা করার অবিযোগ আনা হয়েছে ‍এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। চুক্তিভিত্তিক ‍এই শিক্ষক মাইদুল ‍ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

১৩ ছাত্রীর অভিযোগে বরখাস্তকৃত শিক্ষক মাইদুল ‍ইসলাম

টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ
স্কুলটিতে অবৈধভাবে ও জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ, কোচিং বানিজ্যের টাকার ভাগ- বাটোয়ারা, কোন্দল ও অনিয়মের কারনে স্কুলটির সুনাম আজ তলানীতে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সচেতন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতি, ভুয়া সনদ দিয়ে শিক্ষকতা, বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্রয়ের নামে ভুয়া বিল ভাউচারসহ শত অভিযোগ বলে জানিয়েছেন স্কুল সংশ্লিষ্টরা। জেলা শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় অফিসে আবেদন করেও কোন সাড়া পাচ্ছেনা অভিযোগকারীরা। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ‍এস ‍এম ফকরুজ্জামান। তিনি সাবেক ‍এক সচিবের আত্মীয় হিসেবে পরিচয়ে প্রভাবশালী বলে বিবেচিত হন।

প্রধান শিক্ষক এস এম ফখরুজ্জামান

১৩ ছাত্রীর অভিযোগ
হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবসা শাখার শিক্ষক মাইদুল ইসলাম কোচিং বানিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক এস এম ফখরুজ্জামানের সাথে। প্রথমে মাইদুল প্রধান শিক্ষককে কোচিং বানিজ্যের শতকরা ৪০ ভাগ টাকা দিতেন। প্রধান শিক্ষক ৬০ ভাগ টাকা দাবী করলে মাইদুল ৬০ ভাগ টাকা দিতে নারাজ হলে প্রধান শিক্ষকের সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে কথিত অভিযোগে বরখাস্ত হন বলে জানান স্কুলটির সহকারি শিক্ষক মোঃ মাইদুল ইসলাম। আর এখান থেকে শুরু দ্বন্ধের। এ দ্বন্ধের কারনেই চলতি বছরের জানুয়ারীতে ক্লাশ টিচার থেকে প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
মোঃ মাইদুল ইসলাম ছিলেন প্রধান শিক্ষক এস এম ফখরুজ্জামানের বাসার গৃহ শিক্ষক। এ সুবাধে প্রধান শিক্ষক ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই ১৬ নং স্মারকে মাইদুলকে অস্থায়ী ভাবে খন্ডকালীন (ব্যবসায় শিক্ষা) শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। বেতন ৯ হাজার পাচঁ শত টাকা। প্রথা ভেঙ্গে মাইদুল ইসলামকে প্রাথমিক শাখায় শ্রেনী শিক্ষক হিসেবে দ্বায়িত্ব প্রদান করেন প্রধান শিক্ষক। মাইদুল ইসলামকে দিয়ে প্রধান শিক্ষক কোচিং ও প্রশ্ন পত্র বানিজ্য করাতেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবকরা। কোচিং ও প্রশ্ন পত্র বানিজ্যের ভাগের টাকা প্রধান শিক্ষকের দাবী অনুযায়ী দিতে অস্বীকার করলে ক্ষিপ্ত হন প্রধান শিক্ষক। এর পর থেকেই মাইনুল ইসলামকে স্কুল থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে অভিযোগ আছে। অবশেষে ১৩ ছাত্রির কথিত অভিযোগ এনে মাইদুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয় গত ৯ মে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পেন্ডোরাস বক্স খুলে যায়

বরিশাল বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী

যত অভিযোগ
গত ৯ মে ২০২৪’ তারিখ হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ মহিউদ্দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালকের নিকট হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ে সনদবিহীন ও জাল সনদে চাকুরীরত শিক্ষক, শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য লিখিত অভিযোগ করেন।

বরিশাল বোর্ড বিদ্যালয় পরিদর্শক মো: রফিকুল ‍ইসলাম খান

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘আমি মোঃ মহিউদ্দিন হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইংরেজী বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় ১ম হই। কিন্তু আমাকে নিয়োগ না দিয়ে অন্য দুজন প্রার্থী যাদের একজন হলেন মোসাঃ রওশন আরা বেগম এবং দ্বিতীয় জন রোকেয়া বেগম। যাদের ইংরেজী বিষয়ে বি.এ (পাস), বি.এ (অনার্স) ইংরেজী কোনটাই নাই এবং উক্ত প্রার্থীদ্বয়ের ইংরেজী বিষয়ে নিবন্ধন সনদও নাই। গনিত বিষয়ে নিয়োগ প্রাপ্ত হন অনিমেষ ঘোষ। যার গনিত বিষয়ের নিবন্ধন সনদ নেই বলে চূড়ান্ত নির্বাচিত তালিকায় উল্লেখ আছে। এ ব্যাপারে জনাব মহিউদ্দিন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করেন উপ পরিচালক বরাবর। এ ব্যাপারে উপ-পরিচালক মাহবুবা হোসেন বলেন, বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর উপ-পরিচালকের মাহবুবা খান

স্কুলটির সহকারি শিক্ষক মহিউদ্দিন জানান, আমার সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষ অন্যায় করেছেন। আমি যথাযথ ব্যবস্থা চাই। তিনি বলেন, কিভাবে একটি স্কুলে নিবন্ধন বিহীন শিক্ষকরা শিক্ষকতা করেন। এছাড়া তিনি বলেন, রোকেয়া বেগম নামে এক শিক্ষকের অর্থনীতিতে নিবন্ধন রয়েছে অথচ সে নিয়োগ পেয়েছে ইংরেজী বিষয়ে। যা সম্পুর্ন দুর্নীতি ও অনিয়ম। সে সময়ে নিয়োগের শর্ত ছিল নিয়োগের দু’বছরের মধ্যে এমপিও ভুক্ত হতে পারবে না। অথচ অবৈধ উপায়ে আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে দু বছরের মধ্যে এমপিও ভুক্ত হন বলে অভিযোগ করেন মহিউদ্দিন। স্কুলটির নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে সহকারি শিক্ষক মহিউদ্দিন একাধিকবার বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অফিসে লিখিত আবেদন করলেও রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি তদন্তও হয়নি। এ নিয়ে স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
লুটপাট ও ভাগ বাটোয়ারা
হালিমা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ে চলছে লুটপাট- এমন অভিযোগ সংশিষ্টদের। এছাড়া শ্রেনী কক্ষ ভেঙ্গে করা হয় প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন। অভিযোগ আছে, স্কুলের আয়ের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করেন করেন ‍একটি চক্র। অথচ নানান বিষয়ে সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেই। কোনবিধি বিধান না মেনেই সম্প্রতি একজন শিক্ষিকাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ নিয়ে নানান কথা চলছে স্কুল জুড়ে।
বিতর্ক পিছু লেগেই আছে:
২০২০ সালে এস এস সি পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রে বহু নির্বাচনী পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্র দেয়ায় হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের হল সুপার সহকারি প্রধান শিক্ষক নাজমা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত এবং কেন্দ্রের ৪ শিক্ষক মাসুদা বেগম,মোঃ সাইদুজ্জামান,শাহানাজ পারভিন শিমু ও শেখ জেবুন্নেছাকে পরীক্ষা কেন্ত্রের দ্বায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। তখন এ নিয়ে নগরী জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পুকুর ভরাট
হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুকুরের একাংশ ভরাট করে ২০২৩ সালে উদ্যান করা হয়। ৯৫ বছরের পুরোনো এ বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশের সময় পশ্চিম পাশে বড় আয়তনের পুকুরটির চারপাশ ভরাট করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বিদ্যালয়টির সাবেক প্রধান শিক্ষক এম এম আমজাদ হোসাইন বলেন, বড় আয়তনের পুকুরটিতে আগে মাছ চাষ হতো। স্কুল কমিটির লোকজন বড়শি দিয়ে মাছ ধরতেন। কয়েক বছর আগে নির্মিত লাইব্রেরি ভবনের কিছু অংশ পুকুরের মধ্যে পড়েছে। এখন উদ্যান করায় পুকুরটির অর্ধেকের বেশি ভরাট হয়ে গেল।

সাবেক প্রধান শিক্ষক এম এম আমজাদ হোসাইন

এ ব্যাপারে, স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল বলেন, আমি স্কুলটির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমি কোচিং বানিজ্য বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ সাধ্য অনুযায়ী শৃংখলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক এস এম ফখরুজ্জামান এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, আমি বিষয়গুলো অবহিত হয়ে বলতে পারবো।

1 COMMENT

  1. এরকম আরও অনেক প্রতিষ্ঠানই খুঁজলে পাওয়া যাবে। হালিনা খাতুন তো মেয়েদের স্কুল ছিল। সেখানে মহিলা শিক্ষক নিয়োগ দিলে তো যৌন হয়রানি বিষয়টি এড়ানো যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

ঈদকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা হুমকি নেই : র‍্যাব ডিজি

দখিনের সময় ডেস্ক: পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট কোনো হামলা বা নাশকতার তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) ব্যারিস্টার মো....

প্রতারণার নতুন ফাঁদ, টার্গেট বয়স্করা

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে নানান বয়সের মানুষ সর্বস্বান্ত হওয়ার নজির নতুন নয়। প্রতারিতদের বেশির ভাগই তরুণ এবং বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রয়েছেন শিক্ষক,...

গরমে মোবাইলের ব্যাটারির যত্ন নেবেন যেভাবে

দখিনের সময় ডেস্ক: বাড়ছে গরম। এই সময় ইলেকট্রনিক জিনিসের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এমনিতেই তাপমাত্রা থাকে বেশি। তারপর দীর্ঘক্ষণ তা ব্যবহার করলে বা চালিয়ে রাখলে খুব...

ডিপ্রেশনে ভুগছেন? এই পানীয়গুলো পান করুন

দখিনের সময় ডেস্ক: ডিপ্রেশন শব্দটির সঙ্গে এখন অনেকেই পরিচিত। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকে এই সমস্যায় ভুগছেন। বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে প্রভাবিত করছে এই...

Recent Comments