দখিনের সময় ডেক্স:
বৃদ্ধাশ্রমের বাবা-মায়ের জীবনের গল্প প্রায় একই রকম। সেলিম হোসেন ৩২ বছর শিক্ষকতা করেছেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তার দুই মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর ৫ বছর ধরে আছেন বৃদ্ধাশ্রমে। এর মধ্যে একবারও তাকে কেউ দেখতে আসননি। এখন তার বয়স ৭০ বছর। পক্ষাঘাতে অসুস্থ এই মসানুষটির শেষ চাওয়া দুটি। এক. দ্রুত মৃত্যু। দুই.মৃত্যুর আগে অন্তত একবার যেন তার সন্তানরা তাকে দেখতে আসেন।
এইভাবে বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন মাহফুজা বেগম। ইংরেজিতে বেশ সুন্দরভাবে কথা বলতে পারেন। পাকিস্তান আমলে জন্মের পর ওই সময় মাধ্যমিক স্কুলেও পড়েছেন। থাকতেন পুরান ঢাকায় ওয়ারী এলাকায়। স্বামীর মৃত্যুর পরে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিজেই মানুষ করেছেন। কখনো ছোট খাটো চাকরি করেছেন। কখনো বাসা বা কোনো বড় অনুষ্ঠানে গিয়ে রান্নারও কাজ করতেন।
এভাবেই কষ্ট করছেন দুই ছেলেমেয়েকে বড় করতে। এখন মেয়ে চিকিৎসক এবং ছেলে সরকারি চাকরিজীবী। তবুও তার ঠাঁই মেলেনি সন্তানদের সংসারে। এই সংগ্রামী মানুষের জায়গা এখন বৃদ্ধাশ্রমে! কিন্তু বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মাহফুজা এখনো হাত তুলে দোয়া করেছেন দুই সন্তান যেন ভালো থাকেন। যদিও গত ৭ বছরে দেখতে আসেনি তার ছেলেমেয়ে কেউই।
বৃদ্ধাশ্রমে থাকা শেলী বেগমের বুকফাটা আক্ষেপটা। তিনি বলেন, সারা জীবন ওরা (সন্তানেরা) আমাদের কাছে কত বায়না করেছে। কত কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তখন তো ওদের ঝামেলা মনে করি নাই। এখন আমরাই ঝামেলা। তিনি আরও বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পরে ওরা আমার সাথে যা যা করেছে তা কোনো দিন ভুলতে পারছি না। এখানে বেশ ভালো আছি। খালি ওদের কথা যখন মনে হয় তখন বুকটা ফেটে যায়।