# মমতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় থাকার পরও তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কোন কারণে?
# তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো পেন্ডিং মামলা নেই।
# “তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল, কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না…।”
আলম রায়হান:
হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ অবস্থায় দ্রুতই তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রহর গুনছেন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকেই বিষয়টি নিয়ে উদ্ভব হয়েছে তুমুল এক বিতর্কের। কারণ, এদিন সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মায়ের অসুস্থতা নিয়ে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন খোদ তারেক রহমান, যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকলেও এখনই দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তার জন্য অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’
দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবনে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২৪-এর ৫ আগস্টের পর একাধিকবার তার দেশে ফেরার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি সুনীলের কবিতার মতো থেকে গেছে, “তারপর কত চন্দ্রভুক অমবস্যা এসে চলে গেল, কিন্তু সেই বোষ্টুমি আর এলো না…।” প্রসঙ্গত, ১/১১ সরকারের কাছে ‘রাজনীতি না করার’ মুচলেকা দিতে বাধ্য হলেও সঙ্গত কারনেই তাঁর রাজনীতি বন্ধ থাকেনি। বরং সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে তিনি অধিকতর সঠিকভাবে দেশের রাজনীতি মূল্যায়ন করতে পেরেছেন বলে মনে করা হয়। এ নিয়ে কারোই কোন সংশয় নেই, দীর্ঘ প্রবাস জীবনে তারেক রহমান ঝানু রাজনীতিক হয়ে উঠেছেন। এ বিষয়টি একবারেই পরিস্কার। কিন্তু পরিস্কার নয় তার দেশে না ফেরার বিষয়টি। এটি বেশ ঘোলাটে হয়ে আছে। অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন, মামতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুশয়ায় থাকার পরও তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না কোন কারণে?
এদিকে সকলে না জানলেও কেউকেউ জানেন, ২০২৪-এর ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ১৫ আগস্টই তারেক রহমানের দেশে ফেরার কথা ছিলো। এ ব্যাপারে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিলো। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ পাবার আগেই স্থগিত হয়ে যায়। এরপরে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে একাধিক ‘সম্ভাব্য সময়’ আলোাচনায় এসেছে। কিন্তু সবই রংধনুর মতো থেকেগেছে। এর মধ্যেই নভেম্বরের শেষ দিকে তারেক রহমানের দেশে ফেরার আলোচনার পালে হঠাৎই যেনো জোর হাওয়া লাগে। সর্বশেষ খবর রটেছিলো, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। জোর দিয়ে বলা হয়েছিলো, তফসিল ঘোষণার আগে বা পরপরই তিনি দেশে ফিরতে পারেন। এইসব সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছে দেশে ফেরা নিয়ে তারেক রহমানের ফেইসবুক স্টাটাস।
অনেকেরই জানা, ডিসেম্বরে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত ধরে নিয়েই রাজধানীর গুলশান-২ এর এভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে প্রস্তুত করা হয়েছিলো। তারেক রহমান এই বাড়িতেই উঠবেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান জানিয়েছিলেন, বাড়িটির অভ্যন্তর ও বাহ্যিক পরিবেশ তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। বাড়ির সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে এবং এটি এখন পুরোপুরি বসবাসযোগ্য। দুই লাইন অতিরিক্ত বয়ান দেবার মতো সেলিমা রহমান আরো বলেছিলেন, দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই ছায়াঘেরা বাড়িটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মালিকানাধীন, যা সম্প্রতি তারেক রহমানের নামে নামজারি করা হয়। কেবল সেলিমা রহমান নন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িটির ভেতর-বাইরের সংস্কারকাজ এখন প্রায় চূড়ান্ত। দেশে ফিরে তারেক রহমান এখানেই থাকবেন। খালেদা জিয়ার বাড়ির পাশেই ছেলের অবস্থান দলীয় কার্যক্রমের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে। দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িটির মালিক বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার তাকে বাড়িটি বরাদ্দ দেন। এত দিন এটি খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকলেও নাম জারি ছিল না। কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকার এই বাড়ির নামজারির কাগজপত্র তার হাতে তুলে দেয়। বাড়িটিতে তিন বেড, ড্রয়িং, ডাইনিং, লিভিং রুম, সুইমিংপুলসহ আধুনিক সব সুবিধা রয়েছে।
স্মরণ করা যেতে পারে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রকাশ্যে বলেছিলেন, নভেম্বরের শেষ দিকেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে আশা করছি। শুধু তাই নয়। গত ৬ অক্টোবর প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে দেশে ফেরার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেছিলেন, ‘খুব দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।’
প্রসঙ্গত, ৫৯ বছর বয়সী তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে রয়েছেন। ২০০৯ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন এবং ধীরে ধীরে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালে তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তখন থেকেই তিনি বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করছেন। ভার্চুয়ালি সভা ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি পাঁচটি ভিন্ন মামলায় দণ্ডিত হন এবং তার বিরুদ্ধে প্রায় ১০০টি মামলা করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান তারেক রহমান। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পেন্ডিং মামলা নেই। এরপরও অজানা কারণে দেশে অসছেন না তারেক রহমান!