২০০৭ সালের ১২ই জানুয়ারিতে প্রকাশিত পত্রিকার প্রধান খবর
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
বিএনপি মহাসচিব এবং সরকারের তথ্য উপদেষ্টার একে অপরকে লক্ষকরে বাক্যবান ছোড়ার পর সম্প্রতি আবার আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছ ওয়ান ইলেভেন প্রসঙ্গ। কিন্তু কিভাবে এসেছিলো ওয়ান ইলেভেন? কী কী ঘটেছিলো পর্দার পিছনে ও সামনে। বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন- এই ইস্যুতে শুরু হওয়া আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক সহিংসতা সংকট সৃষ্টি হয়।
এর জেরে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারিতে জরুরি অবস্থা জারি হয়। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘ওয়ান ইলেভেন’ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলোর দাবি অনুযায়ী তখনকার প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, ১১ই জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। একই সাথে তিনি সে বছরের ২২শে জানুয়ারি যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সেটি বাতিল করেন। এর সূত্র ধরেই ক্ষমতায় এসেছিলো সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার প্রধান হয়েছিলেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ। আর তখন সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। ড: ফখরুদ্দিন আহমেদ সরকার প্রধান থাকলেও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ।
তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের বর্ণননা মতে, তিনি প্রেসিডেন্টকে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি, নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের আল্টিমেটাম এবং বিদেশি রাষ্ট্র সমূহের অবস্থান, বিশেষ করে নির্বাচনের ব্যাপারে জাতিসংঘের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান। জাতিসংঘ মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করা হলে যে বিপর্যয় ঘটতে পারে তা সবিস্তারে বর্ণনা করেছিলেন বলে তিনি তার বই শান্তির স্বপ্নে উল্লেখ করেছেন। নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধান নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রেসিডেন্টকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাবার চেষ্টা করেন। সার্বিক বিবেচনায় সামরিক কর্মকর্তারা তখন জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরেছিলেন, যা তখনকার পরিস্থিতিতে উপেক্ষা করা প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন ইয়াজউদ্দিন আহমেদের।
কারফিউ, সংবাদপত্রে সেন্সরশিপ আরোপ, ইয়াজউদ্দিন সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই আর পিজিআর প্রধানকে সরিয়ে দেয়ার মতো বিষয়গুলো ১২ই জানুয়ারির পত্রিকাগুলোতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিলো। ‘বঙ্গভবনে ১২ জানুয়ারি দিনভর নানা তৎপরতার পর সন্ধ্যায় জরুরি অবস্থা ও কারফিউ এর ঘোষণা দেয়া হয়। দুপুরে রাষ্ট্রপতি তিনবাহিনী প্রধানসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে দীর্ঘসময় বৈঠক করেন। বিকেলে উপদেষ্টাদের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। উপদেষ্টারা বিকাল সাড়ে চারটায় বঙ্গভবনে যান ও কিছুক্ষণ পর ফিরে আসেন’।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৯ জন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। বিচারপতি ফজলুল হককে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। নানান খবরে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিলো যে ‘সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথকে সুগম করার লক্ষ্যে আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি এবং আমি আগামী ২/১ দিনের মধ্যে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবো। নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের পূর্ব পর্যন্ত বর্তমান পরিষদের জ্যেষ্ঠতম উপদেষ্টা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নবগঠিত অন্তর্র্বতী সরকার সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা দেশ শাসনের ব্যবস্থা করবেন’।
দৈনিক প্রথম আলো রাষ্ট্রপতির ভাষণ নিয়ে করা সংবাদটির শিরোনাম দিয়েছিলো ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে পদত্যাগ করেছি’। শেষ পর্যন্ত ড. ফখরুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে নতুন অন্তর্র্বতী সরকার গঠন করেছিলেন তখনকার রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পত্রিকাটিতে ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কূটনীতিকদের বৈঠক’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসায় রাজনীতিক-কূটনীতিকরা বৈঠক করেছেন। পরে উভয় দলের নেতারা নিজ নিজ দলীয় প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করেন।
এর বাইরে দৈনিক সংবাদের আরেকটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘সব বেসরকারি চ্যানেলে খবর বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পিআইডি’। রাতে রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সারাদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পরপরই বেসরকারি চ্যানেলের সব ধরনের সংবাদ ও টকশো প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই বেসরকারি সব চ্যানেল সঙ্গীতানুষ্ঠান ও নাটকসহ বিনোদনমূলক সংবাদ প্রচার করেছে। জানা গেছে, সরকারি তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি) সব বেসরকারি চ্যানেলে খবর বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে’। উল্লখ্য, ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকার ক্ষমতায় ছিল দুই বছর। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিলো আওয়ামী লীগ।