• ৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাঠে নামার আওয়ামী বাসনা পুরণ হবে?

দখিনের সময়
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ২১:১৪ অপরাহ্ণ
মাঠে নামার আওয়ামী বাসনা পুরণ হবে?
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় রিপোর্ট:
রাজনীতির মাঠে নামার ‍উদ্যোগ নিয়েছে পতিত ফেসিস্ট আওয়ামী লীগ। পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সাংগঠনিকভাবে রীতিমত বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ ঘুরে দাড়াবার চেস্টা করছে। গণঅদ্ভুত্থ‍ানে ক্ষমতাচ্যুত হবার প্রায় ছয় মাসের মাথায় অন্তর্র্বতী সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ইউনূস সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১৬ ও ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে দলটি। নিজেদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ-সমাবেশ পালনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই যোগাযোগের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। তৃণমূলেও কেউ কেউ এলাকায়ও ফিরতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে, দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের এক ধরনের হতাশা ও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছে দলটি। ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন হচ্ছে, তৃনমূলে কতটুকু সাড়া মিলবে? এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিকে ঘিরে তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করছেন যে, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তাদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যদিও তারা কেউই নাম প্রকাশ করতে চাননি। “মামলা-হামলার ভয়ে আমরা এমনিতেই বাড়িঘরে থাকতে পারতেছি না। এর মধ্যে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে যাওয়া মানে নিশ্চিত গ্রেফতার,” ‍-এ বক্তব্য আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতার। তিনি বলেন, “দেশের বাইরে বসে নেতারা তো কর্মসূচি দিয়েই খালাস। তাদের তো মাঠেও নামা লাগবে না, গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকারও হতে হবে না। যা কিছু যাবে সব আমাদের ওপর দিয়ে।” একই সুরে কথা বলেছেন তৃণমূলের অন্য নেতারাও। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই অংশ নেবেন না বলেও জানিয়েছেন কেউ কেউ। “কর্মসূচি দিয়েছে ভালো কথা। সিনিয়র নেতারা আগে মাঠে নামুক, তারপর আমরাও নামবো,” বলেন তৃণমূলের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গত ছয় মাস ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা হয় কারাগারে, না হয় ‘পলাতক’ রয়েছেন। অন্যদিকে, গত পাঁচই অগাস্টের পর মামলা-হামলার ভয়ে ঘরছাড়া কর্মীরাও সবাই এলাকায় ফিরতে পারেননি। অল্প যে কয়েকজন ফিরেছেন, তারাও প্রকাশ্যে আসতে চাচ্ছেন না। এ অবস্থায় দলটি কীভাবে হরতাল-অবরোধের মতো রাজপথের কর্মসূচি পালন করবে এবং সেক্ষেত্রে তারা কতটুকু সফল হবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বরেছেন, “জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া এই অবৈধ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই,”। এদিকে, আওয়ামী লীগ হরতাল-অবরোধ পালনের চেষ্টা করলে সেটি প্রতিহত করা হবে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো না হলেও ফেসবুকের একটি পোস্টে এনিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেচেন, “আওয়ামী লীগ যতক্ষণ পর্যন্ত না গণহত্যা, খুন ও দুর্নীতির জন্য ক্ষমা চাইবে, এর জন্য দায়ী নেতাকর্মীদের বিচারের মুখোমুখি করবে এবং বর্তমান নেতৃত্ব ও তাদের ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে আওয়ামী লীগ যতক্ষণ সরে না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেয়া সম্ভব না।”
প্রসঙ্গত, এর আগে, ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে গত দশই নভেম্বর দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেও শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নামতে পারেনি আওয়ামী লীগ। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে সেদিন মাঠ দখলে রেখেছিল বিএনপি-জামায়াত এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
খবর সুত্র: বিবিসি বাংলা।