উন্নত দেশে কোরবানীর পশু তো দূরের কথা, কোন পশুই নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া জবাই করার উপায় নেই। শুধু তাই নয়, মুসলিম দেশেও নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করার বাধ্যবাধকতা আছে অনেক মুসলিম দেশেও। এর বাইরে নয় কোরবানীর পশুও। বাংলাদেশেও কোরবানির জন্য শহরাঞ্চলে প্রতি বছরই নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু শহরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ির সামনে রাস্তার অথবা ভবনের গ্যারেজে আঙ্গিনায় কোরবানি দেয় মানুষ। তবে কোরবানী যেখানেই দেয়া হোক না কেন, বর্জ ফেলা হয় রাস্তায়। আর যা পরিস্কারে গলদঘর্ম হতে হয় কর্তৃপক্ষকে। শুধু তাই নয়, ঘন্টা বেধে বর্জ অপসারণের ঘোষণা দেয়া হয়। বিশেল করে রাজধানীতে। যদিও কোনবারই ঘোণার প্রতিফলন বাস্তবে ঘটেনা। এবং তা আসলে সম্ভবও নয়।
প্রতি বছর ঈদের সময় দেখা যায়, কোরবানির পর পশুর বর্জ্য সঠিকভাবে অপসারণ না হওয়ায় নগরজুড়ে সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধ, ভেঙে পড়ে স্যানিটেশন ব্যবস্থা, আর জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে পড়ে। যদিও প্রশাসন প্রতি বছর নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে, বাস্তব মাঠপর্যায়ে অনেক সময়ই কার্যকারিতা দেখা যায় না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ না হলে শহরের রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি এমনকি ড্রেনেজ ব্যবস্থায়ও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
প্রকট এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। কুরবানির আগেই প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা, জনসচেতনতা কার্যক্রম ও প্রশাসনের তৎপর তদারকি। নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেয়া, নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলা এবং দ্রুত অপসারণ নিশ্চিত করা।
পরিবেশ দূষণ
সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে পশুর রক্ত ও উচ্ছিষ্টাংশ থেকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের আশংকা থেকে যায়। আর বর্জ্য থেকে বিভিন্ন রোগবালাই ছড়ানোর আশঙ্কা তো থাকেই। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কুরবানির পশুর বর্জ্য যথাযথভাবে পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবেই নানারকম মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
পশু কুরবানি দেওয়ার আগেই স্থান নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত বসতবাড়ি থেকে কুরবানির জায়গা একটু দূরে হলে ভালো হয়। যদি যথাযথ ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে কুরবানির পশু নির্ধারিত স্থানে জবাই করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে, তেমনি অন্যদিকে জবাই পরবর্তী উদ্দিষ্টাংশগুলো সম্পদে রূপান্তরিত করা সহজ হবে। কারণ পশুর ফেলে দেওয়া নাড়ি-ভুঁড়ি থেকে উৎকৃষ্টমানের মাছের খাদ্য বা পশু খাদ্য তৈরি করা সম্ভব, একইভাবে পশুর হাড় গুঁড়া করে পশু খাদা বা উৎকৃষ্ট মানের সারও তৈরি করা যায়। ওষুধ শিল্পেও কুরবানির পশুর হাড়, বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পশু বর্জ্যকে এভাবে ব্যবস্থাপনায় আনলে কুরবানি পরবর্তী নগর গ্রাম দূষণমুক্ত থাকবে এবং জনস্বাস্থ্যও বিঘ্নিত হবে না।
নির্ধারিত স্থানে কুরবানির ব্যবস্থা করলে সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো সহজ হয় এবং সহজেই বিক্রি করে ভালো মূল্য পাওযা যায়। এছাড়া এককভাবে কোরবানি না করে, মহল্লাভিত্তিক একটি নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করা যেতে পারে। এতে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সম্মিলিতভাবে বর্জ্য অপসারণও সহজ হয়।