দখিনের সময় ডেক্স:
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত আসামিদের একের পর এক ভয়াবহ গোপন তথ্য বেরিয়ে আসছে। এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেনি। প্রকাশ হচ্ছে তাদের বংশ পরিচয়, চরিত্র, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পারিবারিক অবস্থান। অভিযোগ আছে গ্রাম থেকে আসা এই মেধাবী ছেলেরা এক সময় হয়ে উঠে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা এলাকার বড় ত্রাস। সবাই তাদের সমীহ করে। চাঁদা দেয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন সদস্যও তাদের বন্ধু হয়ে উঠেছে।
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণ করার মামলার প্রধান আসামি এম. সাইফুর রহমান। পিতা তোয়াইদুল্লাহ। সে বালাগঞ্জ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। ঐ সময় থেকেই সাইফুর অনেকটা উশৃঙ্খল প্রকৃতির ছিল বলে স্থানীয়রা জানান। এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে এমন কোনো অপকর্ম নেই যেখানে তার হাত ছিল না। তৃতীয় ও চতুথর্ শ্রেণির কর্মচারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করা ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। ছাত্রাবাসের পাশে বালুচর বাজারের ব্যবসায়ীরা তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিল। সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছর সে এক সাংবাদিককেও শাসিয়েছিল।
শাহ মাহবুবুর রহমান রনি। হবিগঞ্জ সদরের বাগুনী পাড়ার বসিন্দা। পিতা শাহ জাহাঙ্গীর। তিনি মাজার ভক্ত লোক। রনি একজন মেধাবী ছাত্র হলেও তার সম্পর্কে এলাকাবাসীর ধারণা ভালো নয়। সে তার এলাকায় ও সিলেটে একজন নারী উত্যক্তকারী হিসাবে পরিচিত। সিলেটে ছাত্রলীগের বড় নেতা হিসেবে জাহির করে সে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতো। সেখানেও সে বখাটেদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তোলে। এলাকায় গেলে তাদের নিয়ে নেশার আড্ডা বসাতো। তার জীবন ছিল অনেকটা বিলাসবহুল। মোটরসাইকেল চড়ে, দামি কাপড় পরে রীতিমত এলাকায় রাজপুত্রের বেশে চলাচল করতো।
রবিউল ইসলাম। সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার বড় নগদীপুর গ্রামের বাড়ি। পিতা, দেলওয়ার হোসেন। এলাকাবাসীর অনেকেই জানান, তার পরিবার বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় চেয়ারম্যান শিবলী আহমদ জানান, এই পরিবার যখন যে ক্ষমতায় তার সঙ্গেই তাদের রাজনীতি। একসময় তাদের আবদুস সামাদ আজাদ, জাতীয় পার্টি নেতা ও পরে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন চৌধূরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।
তারেক আহমদ। পিতা মৃত, রফিকুল ইসলাম। সুনামগঞ্জ শহরের হাসন্নগরস্থ ৫৭ নিসর্গ ঠিকানা থাকলেও সেখানে তারা থাকে না। তাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার উমেদ নগর। বেশ কয়েক বছর থেকে সে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় বসবাস করে। পরিবারের অনেকেই লন্ডন প্রবাসী।
অর্জুন লস্কর। পিতা, মৃত অমলেন্দু কুমার লষ্কর। জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলশাহ ইউনিয়নের মরিচা আটগ্রামের বাসিন্দা। তার চাচা অক্ষয়কুমার লষ্কর (কানু লষ্কর)। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকায় তাদের পারিবারিক সুনাম রয়েছে। এলাকার একজন বলেন, সে কিভাবে ঐ চক্রের সঙ্গে মিশল আমরা ভাবতে পারছি না।
অপর আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম। তার বাড়ি কানাইঘাট। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র। তবে শাহ রনি গত বছর এমসি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করলেও হলের রুম তার দখলেই ছিল। আর সাইফুর শিক্ষকদের বাংলো দখল করে বসবাস করতো এবং ঐ বাংলায় ছিল তার জন্য নিরাপদ। রাতে সেখানে জুয়া আর মাদকের আসর বসতো। ভয়ে আশেপাশের কেউ কিছু বলতো না।