কনটেন্ট সরাতে গুগলসহ কোনো প্ল্যাটফর্মকে অনুরোধ করা হয়নি, বলছে সরকার
দখিনের সময়
প্রকাশিত নভেম্বর ২৯, ২০২৫, ০৬:৪২ পূর্বাহ্ণ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গুগলের কাছে ২৭৯টি কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাতে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, মিসইনফরমেশন, প্রোপাগান্ডা এবং মিসইনফরমেশন–কেন্দ্রিক চরিত্রহননের বাইরে দেশের কোনো পত্রিকার নিউজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত পোস্ট, ভিডিও কনটেন্ট, রিলস, অনলাইনে প্রকাশিত আর্টিকেল, অভ্যন্তরীণ কোনো সমালোচকের রাজনৈতিক সমালোচনামূলক কোনো কনটেন্ট সরাতে সরকার কোনো প্ল্যাটফর্মকে অনুরোধ করেনি।
উল্লেখ্য, মিসইনফরমেশন, প্রোপাগান্ডা এবং মিসইনফরমেশন–কেন্দ্রিক বেআইনি মানহানিকর তথ্য দিয়ে কারো চরিত্রহননের চেষ্টা সংক্রান্ত তথ্য অপসারণের অনুরোধ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ এবং জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মাধ্যমে বিটিআরসিতে যায়। বর্তমান সরকার সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগের সিআরআই বা এ জাতীয় কোনো বট বাহিনী পরিচালনা করে না। বিটিআরসি বা এনটিএমসিসহ বাংলাদেশের কোন এজেন্সি বা সংস্থা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্ট ডাউন করার ক্ষমতা রাখে না, সেজন্য যেকোনো অনুরোধ সোশ্যাল মিডিয়া ও টেক প্ল্যাটফর্মকে জানাতে হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গুগলের ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট অ্যানালাইসিস করে দেখা যায়, ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৭৯টি অনুরোধ যায়। এটা আওয়ামী লীগ সরকারের ২০২২ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর সময়কালে পাঠানো ছয় মাসের মোট সংখ্যা ৮৬৭-এর তিন ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম। তার আগের ছয় মাসে অর্থাৎ গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর, এই ৬ মাসে বাংলাদেশ রিকুয়েস্ট করেছে মাত্র ১৫৩টি, যা আওয়ামী আমলের সর্বোচ্চ অনুরোধ সংখ্যার সাড়ে পাঁচ ভাগের একভাগ।
এ ছাড়া আওয়ামী আমলের সর্বনিম্ন রিকুয়েস্ট ২০২৩ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর সময়ের ৫৯১টির অর্ধেকেরও কম। অর্থাৎ স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকার এত কমসংখ্যক রিকুয়েস্ট পাঠাচ্ছে, যা উল্লেখযোগ্য নয়। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, গুগলের ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট মতে ৬৫ শতাংশ অনুরোধ হচ্ছে ‘ঘড়ঃ বহড়ঁময রহভড়ৎসধঃরড়হ’ ক্যাটাগরিতে, অর্থাৎ এসব বিষয় বিশেষ উদ্দেশ্যপূর্ণ ছিল না।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ ভেতর ও বাহির থেকে এক অনাকাঙ্ক্ষিতহারে মিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইনের শিকার হয়। প্রতিবেশী দেশের মিডিয়া থেকে ক্রমাগত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিসইনফরমেশন ও প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন শুরু হয়। সরকারকে এসবের বিরুদ্ধে বেশকিছু রিপোর্ট প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গুগলকে দিতে হয়েছে।
পাশাপাশি এসময়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষিদ্ধ হয় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিটি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানুষ খুনেরর বিচার শুরু হলে আওয়ামী লীগ সাইবার স্পেইসে ক্রমাগত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এবং সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিসইনফো ক্যাম্পেইনসহ সন্ত্রাসের আহ্বান শুরু করে।
দেশের সাইবার স্পেইসকে নিরাপদ রাখা, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, ধর্মীয়, জাতিগত এবং নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোকে অনলাইনে ও অফলাইনে সুরক্ষাদান সরকারের দৈনিক দায়িত্বের অংশ। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার স্পেইস দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম এলিমেন্ট হয়ে উঠেছে, তাই বিশ্বের সব দেশের মতই বাংলাদেশ সরকারকে এখানে রেগুলেশনের নিমিত্তে কিছু রিপোর্ট করতে হয়। পাশাপাশি সরকার অনলাইন জুয়া এবং গ্যাম্বলিং সংক্রান্ত কিছু টেক-ডাউন রিকুয়েস্টও করেছে।
যেহেতু গুগলের স্বচ্ছতা রিপোর্টে মিসইনফরমেশন, প্রোপাগান্ডা এবং ক্যারেক্টার এসাসিনেশন বিষয়ক আলাদা কোনো ক্যাটাগরি নেই, এসব রিপোর্ট সরকারের সমালোচনা ক্যাটাগরিতে দেখানো হয়েছে। তথাপি এই সংখ্যা আওয়ামী সরকারের তুলনায় সংখ্যায় পাঁচ ভাগের এক ভাগেরও কম।
অত্যন্ত হতাশার বিষয় এই যে, বাংলা ও ইংরেজিতে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পূর্বে সরকারের ব্যাখ্যা কিংবা বক্তব্য চাওয়া হয়নি। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে এরকম চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশের হীনম্মন্য প্রবণতা, সমাজের স্থিতিশীলতা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যাহীন খণ্ডিত সংবাদ প্রকাশ, কোনোভাবেই দায়িত্বশীল মিডিয়ার ভূমিকা হতে পারে না।
উল্লেখযোগ্য যে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, শতাধিক বড় আন্দোলন হয়েছে, বেশকিছু মব হয়েছে, মাজার ভাঙ্গাসহ সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ‘মব লিঞ্ছিং’ বা গণপিটুনিতে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে কয়েকটি। বছরের শুরুতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছিল, যার সাথে সরকারের একটি স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ কার্যক্রমও সম্পর্কিত ছিল। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক অঙ্গনেও ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং প্রতিশোধের প্রবণতা দেখা গেছে। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে সোশ্যাল হারমনি রক্ষায় সরকার প্ল্যাটফরমগুলোকে সরকারি দায়িত্বশীল রিপোর্ট করেছে।
সরকার অত্যন্ত গর্বের সাথে নাগরিকদের জানাতে চায় যে, আন্তর্জাতিক র্যাংকিং এ প্রকাশিত সূচকে দেশের বাকস্বাধীনতা ও ইন্টারনেট সূচকের অসামান্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা ও ইন্টারনেট সূচকের অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ফ্রিডম হাউসের ঋৎববফড়স ড়হ ঃযব ঘবঃ ২০২৫ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এ বছর বাংলাদেশ ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একক দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে সর্বোচ্চ অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশটির স্কোর গত বছরের ৪০ থেকে বেড়ে ৪৫ হয়েছে, যা সাত বছরে সর্বোচ্চ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থী নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের ফলে দমনমূলক সরকার অপসারিত হওয়ায় এবং অন্তর্বর্তী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ প্রতিরোধে পদক্ষেপ এবং সাইবার সুরক্ষায় ইতিবাচক সংস্কার নেওয়ার ফলে এই উন্নতি হয়েছে।