• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সারের অভাব নেই, খাদ্য সংকট তৈরীর চক্রান্ত?

দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ
সারের অভাব নেই, খাদ্য সংকট তৈরীর চক্রান্ত?

বিএডিসির গুদামে সার নিয়ে ডিলারের অপেক্ষা। দৈনিক দখিনের সময়-এর ক্যামেরায় ২৮ নভেম্বর তো ছবি।

সংবাদটি শেয়ার করুন...
আলম রায়হান:
প্রকাশিত খবর হচ্ছে, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় চাহিদামতো সার না পেয়ে বকশীগঞ্জ-রৌমারী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক শত কৃষক। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার বাট্টাজোড় নতুন বাজার এলাকায় এ অবরোধ করা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে কৃষকরা অবরোধ তুলে নেন। এদিকে খবর নিয়ে জানাগেছে, দেশে আসলে সারের সংকট নেই। সূত্র বলছে, নেপথ্য অপশক্তি ডিলার চক্র ব্যবহার করে কৃত্রিম সংকট তৈরী করার অপচেষ্টা করছে।
এ ক্ষেত্রে স্থানীয় চত্রের সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানীও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আর শুধু সার নয়, শস্য বীজ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ডিলাররা রহস্যজনকভাবে অনীহা দেখাচ্ছে বলে হনাগেছে। ফলে এই সমযের মধ্যে বিএডিসির’র বিভিন্ন শস্য বীজ ৮০ শতাংশা কৃষকদের হাতে পৌছানোর কথা থাকলেও ডিলাররা এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংও উত্তোলন করেননি। বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, বাংলাদেশের কৃষি ব্যাবস্থা জিম্মি করার যড়যন্ত্র আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। এই চক্রটি বিএডিসিকে ব্যর্থ করার জন্য আগের খেলায় সক্রিয় হয়েছে। প্রসঙ্গত, কথিত দাতাদের প্রেসক্রিপশনে বিএনপি সরকারের সময় বিএডিসি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।
প্রসঙ্গত, আগামী জুন-জুলাইতে খাদ্য সংকট হবার একটি আগাম আশংকা আক্টোবর মাসেই বেশ আলোচনায এসেছে। ২৯ অক্টোবর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘের শিশু তহবিল ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি যৌথভাবে ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) এক প্রতিবেদনে এই আশংকা প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় বছরের শেষ আট মাসে খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই আশংকার বিষযটি অস্বীকার করেননি খোদ খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান।
প্রতিবেদন অনুসারে ডিসেম্বরের মধ্যে বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। এই সময়ে চরম অপুষ্টির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে ১৬ লাখ শিশু। দেশের দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর মানুষ এই সংকটে পড়তে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাশিবিরসহ দেশের ৩৬ জেলার ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির অবস্থা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) ও জাতিসংঘের তিন সংস্থা। প্রকাশিত প্রতিবেদনে খাদ্যঘাটতি, অপুষ্টি ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে মূল্যায়ন করা হয়েছে পাঁচটি ফেজ বা ধাপে। ধাপ ১ : সর্বনিম্ন বা স্বাভাবিক, ধাপ ২ : চাপে থাকা, ধাপ ৩ : সংকটে থাকা, ধাপ ৪ : জরুরি অবস্থা এবং ধাপ ৫ : দুর্ভিক্ষ। এতে বলা হয়েছে, দেশের ৩৬ জেলায় বসবাসরত ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ বছর কোনো জেলায় ধাপ–৫ অর্থাৎ দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি, দেখা যাওয়ার আশঙ্কাও নেই। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ধাপ-৪ বা জরুরি অবস্থাতেও ছিল না কোনো জেলার জনগোষ্ঠী। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় জরুরি অবস্থা দেখা দিতে পারে। এ সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজারের বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এবং মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্য আলাদাভাবে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ৩৬টি জেলার মধ্যে ১৬টি জেলার (রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ) ১ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ খাদ্যসংকট বা ধাপ ৩–এ ছিল। আর মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৩টি জেলার ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ খাদ্যসংকট বা ধাপ–৩-এর সম্মুখীন হচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বান্দরবান, রাঙামাটি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজার। কক্সবাজারের যে অংশে রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে ও যে অংশে শিবির নেই—দুই এলাকার স্থানীয় লোকজনও খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে। জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে কক্সবাজারের মানুষ, বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের জনসাধারণ। এই জেলার ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন। কক্সবাজার ও ভাসানচর মিলিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ ডিসেম্বরের মধ্যে খাদ্যসংকট ও জরুরি অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত খাদ্যসংকটে থাকা নোয়াখালী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কিছুটা কমেছে। এ চার জেলা ধাপ–২-এ উন্নীত হয়েছে। অপর দিকে ধাপ ২-এ থাকা বাগেরহাট এবার খাদ্যসংকটের তালিকা অর্থাৎ ধাপ ৩–এ ঢুকেছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনসহ দুর্যোগের কারণে ওই সব জেলায় খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ‘আইপিসি প্রতিবেদনের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি না, সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা কমানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্লেষণ করা জেলার ১৭ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। যে প্রাথমিক কারণগুলো এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা, জলবায়ু বিপর্যয়, তহবিলের অভাব, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং খাদ্যবৈচিত্র্যের অভাব।