আলম রায়হান:
রোডম্যাপের নামে নির্বাচনের দিনক্ষণ প্রসঙ্গ যতই সামনে নিয়ে আসাহোক, তা এখনো তেমন জোলালো ভিত্তি পাচ্ছে না। এমনটাই মনে করেন পযৃবেক্ষক মহল। এদিকে কিংস পার্টি নিয়ে গুঞ্জণ কিঞ্চিত ইস্তিমিত হবার পর আবার বেশ জোরালো হয়েছে। অনেকের মতে, কিংস পার্টি গঠনের বিষয়টি ‘ধীরে বহে মেঘনা’ দশা থেকে ওঠার খোলশ ত্যাগ করে জোরায়ের মেঘনায় পরিনত হযেছে। যদিও এক পর্যায়ে কেউকেঊ ধারণা করেছিলো, কিংস পার্টি গঠনের উদ্যোগ পরিত্যাক্ত হয়েছে। কিস্তু বাস্তবতা মোটেই তা নয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষদের মতে, বিরাজমান বাস্তবতায় কিংস পার্টি গঠনের উদ্যোগ পরিত্যাক্ত হওয়া বাস্তবতার সঙ্গে মোটেই যায় না। বরং কিংস পার্টি অনিবার্য বলে অনেই মনে করেন। স্মরণ করা যেতে পারে, স্বাধীন বাংলাদেশে জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ কিংস পার্টি গঠন করেছিলেন। এই তৈরীতে তারা সফল কারিগর। এমনকি কিংস পার্টি গঠন করার চেষ্টা খালেদা-হাসিনাও করেছেন। আর ১/১১ সরকার তো কিংস পার্টি গঠনে হাকডাক দিয়েই মাঠে নেমেছিলো।
অবশ্য, কিংস পার্টি অধুনা কোন বিষয় নয়। বরং উপ-মহাদেশের রাজনীতির ধারায় বেশ প্রাচীন। আবুল মনসুর আহমেদের লেখা ‘ফুড কনফারেন্স’ বইতে লিখেছেন, “রাজনীতিতে যোগ দেবে বলে শহীদ মনস্থির করল। কিছুদিন কংগ্রেস করে বুঝল এখানে ‘শাইন’ করার সম্ভাবনা নেই। কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগ দিল শহীদ। লীগের সভা-সমিতিতেও শাইন করতে পারল না। বহু চিন্তার পর সে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হল- নিজস্ব একটি পার্টি করতে হবে, কারণ মন্ত্রী তাকে হতেই হবে।”
‘ফুড কনফারেন্স’ বই-এর শহীদের মতো কিছু চরিত্র চিরকালই প্রাসঙ্গিক। আর এদের উপর ভর করেই গড়ে ওঠে কিংস পার্টি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস বলছে, প্রতিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে নতুন দল গঠিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ছিলো সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, কোন ক্ষেত্রে একান্তই নিজস্ব প্রয়োজন। কখনো আবার সরকারের নেকাব বদলের জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়েছে। এসব দলই ‘কিংস পার্টি’, মানে রাজার দল! কয়েক সপ্তাহ আগে নতুন একটি ‘রাজার দল’ ভুমিষ্ঠ হবার প্রসব বেদনা বেশ স্পষ্ট ছিলো। রাজনীতির অঙ্গনে বিষয়টি জোর অলোচনায়ও ছিলো। বিচেনায় রাখা প্রয়োজন, চিরকালই কিংস পার্টির জন্য রাজনীতির ভূমি উর্বর। সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করে চাষীদের দক্ষতার উপর।
বর্তমান সরকারের আমলে ছাত্রদের নানান উদ্যোগকে অনেকেই দেখেছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ধাপ হিসেবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বক্তব্যকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি ১৫ নভেম্বর বলেছেন, ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক শক্তি আবির্ভূত হবার সময় এসেছে।’ রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ‘চব্বিশ’-কে ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে বয়সের তুলনায় বেশ মেধাবী এই উপদেষ্টা আরো বলেছেন, ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ এই ২৪-এর প্রজন্মই বিনির্মাণ করবে!’ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, কিংস পার্টির বিষয়ে হয়তো আরো পরিস্কার ধারণা পাওয়া যাবে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে। যদিও, কিংস পার্টি এখন প্রবসব বেদনার পর্যায়ে আছে বলে বোদ্ধাদের ধারণা।
শব্দ-৩৭৫