ড. ইউনূস নির্বাচনী ট্রেন ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক সংশয় কি কেটেছে? বরং নানান সংশয়ের মধ্যে ড. ইউনূসের নিয়োগকর্তাদের একজন তো গত ১২ আগস্ট গলার রগ ফুলিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। তাদের শিরোমণি এক-এগারোর আশঙ্কা জানান দিয়েছেন। এরপরও ধরা যাক নির্বাচন করার ব্যাপারে আমাদের সরকারপ্রধান খুবই আন্তরিক এবং এ ব্যাপারে ধনুর্ভঙ্গ পণ করে আছেন। কিন্তু তার এ ‘আন্তরিক’ বাসনা বাস্তবায়নের জন্য তো অনেক ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করতে হবে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আর এ বিষয়ে প্রধান হচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের ওপর গ্রহণযোগ্য মাত্রায় আস্থা সেই অর্থে কখনোই ছিল না। এখন পুরো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাজুল এবং নানান ঘটনায় পুরো দেশেই পুলিশের ভাবমূর্তি তলানিতে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই পুলিশ দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে? যদিও আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আশাবাদী। তিনি সজ্জন ব্যক্তি, আশা তো করতেই পারেন! এ পর্যন্ত ঘোষণা আছে, নির্বাচনে ৮০ হাজার সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির ধারায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী আগে থেকেই মাঠে বহাল। কোনোই সন্দেহ নেই, সেনাবাহিনী মাঠে বিরাজমান না থাকলে পরিস্থিতি হয়তো ভয়াবহ হতো; যা কল্পনা করলেও অনেকের রক্ত হিম হয়ে আসে। এর অর্থ এই নয় যে, বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাবে। বরং সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ লাগবেই। কিন্তু চলমান পুলিশ দিয়ে কি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পুলসুরাত পার হওয়া যাবে? আলামত কিন্তু আশঙ্কার ইঙ্গিত দেয়!
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা পলায়নের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের কঠিন সময়ে ৬ আগস্ট রাতে রাজারবাগে অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছিলেন, ‘পুলিশে চেইন অব কমান্ড ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, সেই চেষ্টার বাস্তবায়ন কোন পর্যায়ে আছে? প্রসঙ্গত, শহিদুর রহমান এখন পুলিশে নেই, আছেন অকার্যকর র্যাব। যে র্যাবকে ১১ আগস্ট পলিথিনবিরোধী অভিযানে কাঁচাবাজারে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে ঠোঁটকাটা একজনের বাঁকা প্রশ্ন, এলিট ফোর্স র্যাব কি পলিথিন ফোর্সে রূপান্তরিত হয়েছে?
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ১৮ আগস্ট ২০২৫। শিরোনাম, ‘নির্বাচনী ট্রেন প্রসঙ্গে কিছু কথা’