Home মতামত এবার কেন বেপরোয়া হলেন আ স ম ফিরোজ?

এবার কেন বেপরোয়া হলেন আ স ম ফিরোজ?

চলতি মাসের ৯ তারিখে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোঝের মন্তব এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘৃন্য ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিত পটুয়াখালী আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. জাহিদুল হক বাদী হয়ে ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে পটুয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলা গ্রহণ করা হবে কিনা, সে বিষয়ে আদেশ প্রদানের তারিখ আগামী ১৯ ডিসেম্বর।

দায়েরকৃত মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে বসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর ছবিতে জুতা-ঝাঁটা লাগিয়ে আনন্দ মিছিল করেছি, তাতেই কিছু হয়নি। আর বাউফল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যারা আমার বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদের ডজনখানেক খুন করলেও আমি আ স ম ফিরোজের কোনো ক্ষতি হবে না।’

গত ৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে বসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ যে মন্তব করেছেন বলে মামলার এজাহার উল্লেখ করেছেন তা আদালতে প্রমান সাপেক্ষ। আর এজাহারে উল্লেখ্য করা ১৯৭৫ সারেল ১৫ আগস্ট আ স ম ফিরোজের যে ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাও আদালতে প্রমানের বিষয়। তবে এটি কিন্তু বহুল শ্রুত এবং সেই ঘটনার  দেখা স্বাক্ষি অসংখ্য মানুষ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বরিশালে আ স ম ফিরোজোর ন্যাক্কারজনক ভূমিকা যারা দেখেছেন তাদের মধ্যে আমিও একজন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সূর্য ওঠার ঠিক আগে বাংলাদেশের সূর্যকে নিভিয়ে দেবার পর বরিশালে নূরুল ইসলাম মঞ্জু, মহিউদ্দিন আহমেদ(পিস্তল মহিউদিন) ও আ স ম ফিরোজসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে উল্লাশ করতে দেখেছে শহরবাসী। দেখেছি আমিও। আমি তখন বিএম কলেজের আইএসসি’র ছাত্র এবং সদর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে থাকি। গ্রামের নাম, ধর্মাদী।

আমাদের একটি ফিলিপস রেডিও ছিলো। খুব ভোরে বাবার খেয়াল শোনার আভ্যাসের কারণেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়ংকর দুঃসংবাদ: ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’। রেডিও থেকে এ ঘোষণা সারা দেশে ত্রাস ছড়িয়ে দেয়। মানুষের মনে অজানা ভয় ও আতঙ্ক জেকে বসে।

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকার আমলেরর ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার আমল, ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। আমাদের বিরোধিতার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ছিলেন না। এটি অন্তত বরিশালের বাস্তবতা। বরং বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় আমাদের বলা হতো, বঙ্গবন্ধু এক সময় সমাজতন্ত্রের পতাকা তলে আসবেন। এ জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে, চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

এ কথা কেন্দ্রে বলা হতো কিনা তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না। তবে বরিশালে বলা হতো। একই কথা ৭৪ সালে বরিশাল এসে বিএম কলেজের ক্যান্টিনে বৈঠকে প্রকারন্তরে বলেছিলেন জাসদ কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া। তখন তো মাঠের নেতা-কর্মীরা জানি না, আসলে কোন ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। কে বাড়ছে গোকুলে! হয়তো কেন্দ্রে কেউ কেউ জানতেন। অথবা জানতেন না। যেমন, তখনও আমরা জানতাম না, জাসদের নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হয়েছিলো ভারতে, মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত পর্বে। উদ্দেশ্য ছিলো বঙ্গবন্ধু সরকারকে চাপে রাখা। পরে এই উদ্দেশ্যকে আরো জটিল রূপ দেয়া হয়েছিলো কিনা তা গভীর গবেষণার বিষয়।

সেই সময় বিএম কলেজ ক্যান্টিনে কোন ভরসায় শরীফ নূরুল আম্বিয়া আমাদের নিয়ে ‘গোপন’ বৈঠক করলেন, তা বলা কঠিন! তাঁকে কে বা কারা ভরসা দিয়েছিলো, জানি না। তবে আমরা কয়েকজন মোটেই ভরসা পাচ্ছিলাম না। আরো পরিস্কার করে বলাচলে, আমরা চরম আতংকে ছিলাম। এই আতংক বহুগুণ বেড়ে যায় আ স ম ফিরোজ ক্যান্টিনে প্রবেশ করায়। তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ মিনিট খানেক। আমাদের দিকে সরাসরি তাকিয়েছেন বলেও মনে হলো না। কারো সাথে কোন কথাও বলেননি। কেবল সুজির হালুয়ার মান নিয়ে টেবিল বয়ের সঙ্গে মৃদু উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘এতো রুগীর খাবার!’

এরপর আ স ম ফিরোজ দ্রুত ক্যান্টিন ত্যাগ করেন। তাহলে তিনি কি আমাদের নিয়ে এক ধরনের ভয়ে ছিলেন, নাকি অভয় দিতে এসেছিলেন। এটি জানা যায়নি। তবে এটি সবাই জানেন, ১৫ আগস্ট কাকডাকা ভোরে বরিশালে যে বিশাল ‘আনন্দ মিছিল’ বের হয়েছিলো তার উদ্যোক্তা নেতা ছিলেন নূরুল ইসলাম মঞ্জু, মহিউদ্দিন আহমেদ(পিস্তল মহিউদ্দিন) ও আ স ম ফিরোজ।

কলংকের এই তিন নেতার মধ্যে নূরুল ইসলাম মঞ্জু খুনী মোশতাক সরকারের মন্ত্রী হলেও মহিউদ্দিন আহমেদের কপালে তা জোটেনি। যদিও তিনি ‘মোশতাক কোট’ বানিয়ে তড়িঘড়ি করে ঢাকা গিয়েছিলেন। অবশ্য, পরে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে একাধিকবার এমপি হয়েছেন। আ স ম ফিরোজও একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের টিকিটে। শুধু তাই নয়, অনেকের কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপও হয়েছেন আ স ম ফিরোজ।

যত দিন যাচ্ছে আ স ম ফিরোজকে নিয়ে নানান ধরনের প্রশ্ন ততই ঘণীভূত হচ্ছে। এর সাথে বড় প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছ, তিনি এবার কোন সাপের পা দেখলেন যে,  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজের ন্যাক্কারজনক ঘটনা নিজর মুখেই স্বদম্ভে প্রকাশ করলেন গত ৯ ডিসেম্বর? তবে কী তিনি দেশে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদর ক্রীড়নক হিসেবে এবার আগেভাগে মাঠে নেমেছেন?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে: ওবায়দুল কাদের

দখিনের সময় ডেস্ক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের যেসব আত্মীয়-স্বজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি, তাদের ব্যাপারে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি...

কাদের ভাইর পরামর্শ রাখিনি

কাদের ভাই না পাল্টানোর বিষয়ে অনেক ঘটনা আমার স্মৃতিতে আছে। একটি বলি। গত মেয়াদের প্রথম দিকে সুপারসনিক গতিতে চলছে সরকার। কাদের ভাই যোগাযোগমন্ত্রী। তার...

উপজেলা নির্বাচনের ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী

দখিনের সময় ডেস্ক: উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে সাতজন চেয়ারম্যান, নয়জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এই সংখ্যা...

বাউফলে পুলিশ সদস্যর মৃত্যু

নয়ন সিকদার, বাউফল থেকে: পটুয়াখালীর বাউফলে হার্ট অ্যাটাকে মো. শাহআলম খান (৫৮) নামের এক পুলিশ সদস্যর মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজধাণীর গুলশানে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত...

Recent Comments