শেখ হাসিনা সরকারের পতনের অসাধ্য সাধনে সম্মুখ সমরে নেতৃত্ব প্রদানকারী ছাত্রদের একাংশের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি। অভ্যুদয়ের আগে থেকেই এটি নিয়ে ছিল নানা আলোচনা, বিতর্ক, আগ্রহ, কৌতূহল। সমালোচনাও। এ ধারা চলমান। আছে নানান প্রশ্ন। এটি কি বড় কোনো দল হতে পারবে? কী হবে দলের মার্কা? শেষতক নেতৃত্বে কারা থাকবেন অথবা আসবেন?
অনেকেই বলছেন, দৃশ্যত বর্তমান নেতৃত্ব খুববেশি ‘ভাতিজা’ গোছের মনে হচ্ছে। মঞ্চের দিকে তাকালে মনে হয়, ‘কচিকাঁচার আসর!’ যা দেখে দেশের মানুষ অভ্যস্ত নয়। যেখানে নাহিদ ইসলাম আহ্বায়ক সেখানে চাচা গোছের কাউকে দলের নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসার উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারে। এ অবস্থায় উপদেষ্টা পরিষদ অথবা অন্য নামে, নতুন দলের একটি ‘চাচা’ কাঠামো প্রয়োজন বলে শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন। আবার এমনটি হলেও সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। কারণ, তখন কে কাকে নাড়বে? এমন নানান প্রশ্ন বেশ আলোচিত হচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পর থেকে কিছু প্রশ্নে সুরাহা হলেও প্রধান প্রশ্নের উত্তর বাতেনেই থেকে গেছে। এ নিয়ে আছে অনেক ধোঁয়াশা। এদিকে নানা আলোচনার মধ্যেই দলটির বর্তমান নেতৃত্বে এক ধরনের দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্যে এসেছে দল গঠনের আগেই। রামের জন্মের আগে রামায়ণ রচনার মতো। নেতৃত্ব নিয়ে দফায় দফায় সমঝোতা, মনোমালিন্য, সামাজিক মাধ্যমে পাল্টাপাল্টি কথার লড়াই আছে এখনো। এদিকে সরকারের উপদেষ্টা পদে ২৫ ফেব্রুয়ারি ইস্তফা দিয়ে নাহিদ ইসলাম হয়েছেন নতুন দলের আহ্বায়ক। বাকি শীর্ষ পদগুলোতেও স্থান পেয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া পরিচিত মুখগুলো। কারও কারও মতে, সময় যত গড়াবে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে পরিচিত মুখের সংখ্যা ততই বাড়বে। এমনকি বর্তমান সরকারের একাধিক মুখ নতুন দলে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টিও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বাতেনের এই ধারায় বেশ গতি পেয়েছে সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের একটি মন্তব্যে।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব চলমান। অনেকেই মনে করেন, নতুন এই দলে যেভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আদর্শের লোক সমবেত হয়েছেন, তাতে দীর্ঘ সময় এ দলের ঐক্য ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। বিভিন্ন দলের ছাত্র সংগঠন থেকে আগত ছাত্ররা আগের আদর্শ নতুন দলে ইনজেক্ট করার চেষ্টা করতে পারেন। অথবা এই এজেন্ডা নিয়েই নতুন দলে শামিল হয়েছেন। আর পতিতদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বলে তো গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। যেমন হাসিনা সরকারের সময় ছাত্রলীগে আশ্রয় নিয়েছিল ছাত্রশিবির। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাসদে যেমন আশ্রয় নিয়েছিল ’৭১ সালে পরাজিত পাকিস্তানি চেতনার ব্যক্তিরা। বলে রাখা ভালো, রাজনীতিতেও ‘কাকের বাসায় কোকিলের ছা’ প্রবণতা আছে! প্রকৃতির মতো রাজনীতিতেও অন্য চেতনার লোকরা লুকানোর ঘরে স্থায়ী হন না। পরিবেশ এলে কোকিলের ছানা-পোনায় সাজানো ঘর খালি হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর যেমন হয়েছে জাসদের সাজানো ঘর।
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২০ মার্চ ২০২৫। শিরোনাম, ‘নতুন দল ও দন্তের অদৃশ্য অংশ’