• ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যর্থ হলে সর্বনাশ

দখিনের সময়
প্রকাশিত মার্চ ১৫, ২০২৫, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ
ব্যর্থ হলে সর্বনাশ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
ফেসিস্ট হাসিনা সরকারের আনুষ্ঠানিক পতন হয়েছে ৫ আগস্ট ২০২৪। ধারাবাহিকভাবে চারবার ক্ষমতাসীন হাসিনা সরকার চতুর্থ মেয়াদে আর পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কেবল ক্ষমতা ছাড়া নয়, দেশ ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু ‍এরপর কী পরিস্থিতে আছি আমরা? ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান সতর্ক করে বলেছেন, ‘আপনারা যদি ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, তাহলে এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, না হলে আপনারা বলবেন আমি সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। এই দেশ আমাদের সবার, সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন ১৪ মার্চ রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে বলেন, ‘সুযোগ পেলেই আমরা ড. ইউনূসকে শূলে চড়াই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করি। যেটা না সেটাও বলি। কিন্তু বিগত ৭ মাসে ২০০’র অধিক আন্দোলন আর হঠাৎ করে সকল ক্ষেত্রে তীব্র বৈষম্য অনুভূত হওয়া জাতিকে নিয়ে তিনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোটাও জরুরি।’ কিন্তু করা ‍উচিত ‍এবং যা জরুরী তা কি আমরা করছি? ‍এ ‍এক মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন!
জনবিচ্ছিন্ন হলে বটগাছ
হয় পাটগাছ
নাটক-সিনেমার চিত্রায়ণ অনুসারে সিংহাসন হারিয়ে বন্দি অবস্থায়ও নবাব মির্জা মুহম্মদ সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতায় ফেরার আস্ফালন করেছিলেন। যদিও ইতিহাস এরকম কোনো ঘটনার সাক্ষ্য দেয় না। বরং ইতিহাস বলে, বাগাড়ম্বর করার কোনো সুযোগ নবাব সিরাজ পাননি এবং সিংহাসনে ফেরার কোনো রকম চেষ্টা করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই বন্দি অবস্থায়ই ইংরেজদের ডামি নবাব মীর জাফরের পুত্র মিরনের নির্দেশে নিহত হয়েছেন বাংলার ইতিহাসের ট্র্যাজেডি নায়ক। আর সামগ্রিক বাস্তবতায় সিরাজের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো সুযোগও ছিল না। এই ট্র্যাজেডি নায়ককে নিয়ে নাটক-সিনেমা-কথামালায় যতই আহাজারি করা হোক না কেন, সেই সময় বন্দি ও নিহত নবাবের ব্যাপারে জনতার কোনো আগ্রহ অথবা ভাবান্তর ছিল না। ইতিহাস এমনটাই বলে।
ইতিহাসের গভীরের শিক্ষা হচ্ছে, জনবিচ্ছিন্ন হলে বটগাছ নিমেষে পাটগাছ হয়ে যায়। ক্ষমতার শক্ত খুঁটিগুলো হয়ে যায় পাটখড়ির মতো। যেমনটি হয়েছে শেখ হাসিনার বেলায়। বলাবাহুল্য, প্রাচীনকাল থেকেই রাজনীতিতে একই প্রবণতা চলে আসছে। সুদূর ও নিকটে অনেক উদাহরণ আছে, ক্ষমতা হারানো ফ্যাসিস্ট শাসকরা আর ক্ষমতায় ফেরার সুযোগ পান না। তবে নিরাপদ আশ্রয় এবং আশকারা পেলে হম্ভিতম্ভিতে তো কোনো বাধা নেই, যা শেখ হাসিনা করে যাচ্ছেন।
শত-সহস্র বছর পেরিয়ে ক্ষমতায় থাকা, হারানো এবং পরিণতির রাজনীতি মোটামুটি একই ফরমেটেই আছে। শুধু কৌশল ও ধরনে কিঞ্চিৎ হেরফের হয়েছে। এই পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী, ঘটেছে বাংলাদেশেও। দেশের উদাহরণই ধরা যাক। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য তাকে সপরিবারে হত্যা করা গেছে। তার বিরুদ্ধে সাড়ে তিন বছরে অনেক অভিযোগের পাশাপাশি অসংখ্য হত্যা-গুমের অভিযোগ ছিল। তার প্রিয় কন্যার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। অবশ্য, কোনো কোনো পর্যবেক্ষক বলছেন, শেখ মুজিবের চেয়ে শেখ হাসিনার অরাজকতা ও নৃশংসতার মাত্রা ছিল বহুগুণ বেশি। শেখ মুজিবের আমলে আর যাই হোক, শিশু হত্যা হয়নি। শেখ হাসিনার বুলেটে শতাধিক শিশু নিহত হয়েছে। বলা হয়, ১৬ বছরের ঘটনাবলির বাইরে মাত্র ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার নৃশংসতাই তার পরিণতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। জনতা তাকে হাতের কাছে পেলে কী করতে পারত, তার নমুনা কিন্তু ৫ আগস্ট গণভবনে কিছুটা দেখা গেছে। মনে করা হয়, ৭৫-এর চেয়ে ২৪-এর থিঙ্কট্যাঙ্ক অধিকতর দক্ষ ও কৌশলী ছিল। অথবা বিশ্ব পরিস্থিতি হাসিনা সরকারকেন্দ্রিক কর্মপদ্ধতি ও সাফল্যের ধরন নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ কারণেই হাসিনা ‘পালাবার’ সুযোগ পেয়েছেন। আগে-পরে পালিয়েছেন তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা দিল্লিতে আছেন ৫ আগস্ট থেকেই। একটি বিমানে করে তাদের নিয়ে দিল্লির উপকণ্ঠে হিন্দোন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর আগে সুরক্ষিত গণভবন থেকে ধীরলয়ে বেরিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেলিকপ্টারে ওঠার দৃশ্য তো ভাইরাল। এ ঘটনাবলি অবশ্য গভীর রাজনীতির বিষয়।
অনেকেরই আমলনামা
বেশ ভারী হয়ে গেছে
রাজনীতির সাধারণ আলোচনায় বেশ প্রাধান্য পাচ্ছে শেখ হাসিনা প্রসঙ্গ। পাশাপাশি আছে বিভিন্ন রকমের আশঙ্কাও। বিরাজমান ঘটনাবলি নিয়ে নানান ন্যারেটিভ তো আছেই। আর মানুষ শুধু পলাতক ফ্যাসিস্টদের কুষ্টিনামা নিয়ে পড়ে নেই। সবার বিষয়েই চোখ-কান খোলা রাখছে। ফলে এরই মধ্যে অনেকেরই আমলনামা বেশ ভারী হয়ে গেছে। এটি কেউ কেউ জানেন। আর সবাই জানেন, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে পালিয়ে গেছে। অনেকে পালিয়েছে সন্ত্রস্ত হয়ে রুদ্ধশ্বাসে, কেউ কেউ পালিয়েছেন সমঝোতায়, অনেকটা নির্ভয়ে গজেন্দ্র চালে। যেন সেই গান, ‘মেলায় যাইরে..।’ এসব এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। অথচ কেউ তা খোলাসা করে বলছেন না। শত শত লোক পালিয়ে যাওয়া নিয়ে নানান রকমের ধোঁয়াশাও আছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের ভাষায়, ‘ঠিক পালানো বলা যায় না। কৌশলগত কারণে সাময়িক আত্মগোপন।’ যদিও রাজনীতির কোনো পরিভাষায়ই একে আত্মগোপন হিসেবে আখ্যায়িত করার উপায় নেই। বরং এসব কর্থাবার্তা দেশের অভ্যন্তরে এখনো কায়ক্লেশে টিকে থাকা কর্মীদের মনোবল ধরে রাখার এক ধরনের চেষ্টা, যা ব্যর্থ চেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যার অকাট্য প্রমাণ, ১৮ ফেব্রুয়ারি আহূত আওয়ামী হরতাল। ওই দিন হরতালের ‘হ’ও দেখেনি দেশবাসী। টের পায়নি কাকপক্ষিটিও! হয়তো এটি ছিল বড়জোর গায়েবানা হরতাল।
আওয়ামী লীগের যেসব নেতা ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গে আছেন। কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় আছেন অনেকেই। কেউ দিল্লিতে, কেউ আবার ত্রিপুরায় বাসা ভাড়া নিয়ে বেশ আয়েশেই আছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। আবার ইউরোপসহ অন্যান্য দেশেও আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ অবস্থান করছেন। তাদের কেউ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর গেছেন, কেউ গেছেন কয়েক মাস পর। প্রকাশিত খবর অনুসারে, প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন পশ্চিমবঙ্গে বাস করছেন। এই নেতাদের মধ্যে আছেন দল এবং সাবেক সরকারের শীর্ষ পদের ও মন্ত্রী, আছেন সংসদ সদস্যরাও। তাদের সংখ্যা প্রায় শ ছুঁইছুঁই। আছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেক জেলা সভাপতি-সম্পাদকও ভারতে অবস্থান করছেন। উপজেলা স্তরের সভাপতি-সম্পাদক, জুনিয়র এবং কম গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতাদের সংখ্যাটা প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মী নয়, দেশান্তরিতদের মধ্যে অছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তাও। সব মিলিয়ে ৫ আগস্টের পর বিদেশের মাটিতে আওয়ামী লটবহর কিন্তু কম নয়। তাদের নিয়ন্ত্রণে বেশুমার লুটের টাকা থাকার বিষয়টি একেবারে ওপেন সিক্রেট।
ভারতের সঙ্গে হাসিনার
‘ইয়ে’ চিরন্তন
আওয়ামী লীগের নেতাদের ভারতে অবস্থানের বিষয়টিকে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সঙ্গে তুলনা করার এক ধরনের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতে অবস্থানকারী পলাতক নেতারা বলছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়েও তো লাখ লাখ মানুষ ভারতে চলে এসেছিলেন।’ এসবই ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। অবশ্য, মানুষ এই তুলনা বিবেচনায় নিচ্ছে বলে মনে হয় না। কারণ সবাই বোঝে, তেলাপোকার সঙ্গে পাখির তুলনা হাস্যকর!
ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার অন্যরকম ‘ইয়ে’ চিরন্তন। এর মধ্য দিয়েই পরিস্থিতি এগিয়েছে, যা অনেকেরই দৃষ্টিগোচর হয় এরশাদ সরকারের আমলেই। আওয়ামী ঘরানার সাংস্কৃতিক বিকাশের নামে আগ্রাসন স্পষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান হঠাৎ বৃষ্টির মতো কোনো ঘটনা নয়। বরং নানান ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং ব্যবহৃত হয়েছেন, হচ্ছেন ও হবেন দাবার গুটি হিসেবে। আর এই গুটি ভারত নানাদিকে চালবে। এটি পানির মতো পরিষ্কার। যদিও পানি নিয়ে ভারত অনেক ধরনের অপরিষ্কার খেলা খেলছে, যা মরণ খেলা আমাদের জন্য। সবই হচ্ছে রাজনীতির খেলা।
আর ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই!’ এটি যেমন বহুল উচ্চারিত, তেমনি প্রমাণিত সত্য, পানি ঢালুতে গড়ায়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন পানির চিরন্তন প্রবণতায় আছে। কিন্তু আওয়ামী রাজনীতির জল সাধারণ নিয়মের ঢালুতে প্রবাহিত হবে, নাকি উল্টো দিকে বইবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন সরকারের দক্ষতা এবং বিএনপি-জামায়াতসহ মুক্ত চিন্তার রাজনীতিক দলগুলোর প্রজ্ঞার ওপর। এ বিষয়ে কোনো বালখিল্য আচরণ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়! এ ব্যাপারে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের একটি উক্তি উল্লেখ করা যায়। তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি বরগুনায় বলেছেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা আরেকটি ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়েছি। ’৭১ এবং ’২৪-এর পরাজিত শক্তি গোপনে গোপনে প্রেম করে আবারও বাংলাদেশের ভেতরে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কোনো পরাজিত শক্তিই বাংলাদেশের পক্ষে নেই। কেউ দিল্লির সঙ্গে আবার কেউ ইসলামাবাদের সঙ্গে প্রেম করছে।’ শুধু ছাত্রদল নেতা আমান নয়, এ ধারণা অনেকেই পোষণ করেন, যা বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। আরও বিবেচ্য হচ্ছে, কিংস পার্টির তকমাপ্রাপ্ত নতুন রাজনৈতিক দলটি কোন পথে হাঁটে। অথবা তাদের কোন পথে নিয়ে যায় নেপথ্যে কুশিলবরা।
ব্যর্থ হলে সর্বনাশ
একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা দরকার, জনসমর্থনের রাজনীতিতে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই বলে অরাজকতা সৃষ্টির সক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই- তা কিন্তু নয়। সঙ্গে একটু বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বেশি লোক দরকার হয় না। জরুরি হচ্ছে মাল্লু! যা বেশুমার আছে আওয়ামী লীগের কাছে। আর নিরাপদ আশ্রয় তো আছে সীমান্তের ওপারে। খাও দাও ফুর্তি করো! যেমন ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও। সেই সময় তো সোনাগাছিও বেশ আলোচনায় এসেছিল। তবে চলমান সময়ের প্রেক্ষিত এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-প্রেক্ষিত অনেক ফারাক। আর প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যেও বেশ ব্যবধান রয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি অনেকটা স্পষ্ট করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান সতর্ক করে বলেছেন, ‘আপনারা যদি ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, তাহলে এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, না হলে আপনারা বলবেন আমি সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। এই দেশ আমাদের সবার, সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।’
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের অবসান হয়েছে ৫ আগস্ট। কিন্তু এর মানে তো এই নয়, সমস্যার সামাধান হয়ে গেছে! বরং ক্যান্সারাস টিউমার অপসারণের পরের সতর্কতা প্রয়োজন ছিল। কারণ, বোধগম্য কারণেই বাংলাদেশের শত্রুরা চেষ্টা করবে, জুলাই-আগস্টের অর্জন যেন বর্জনের আস্তাকুঁড়ে নিপতিত হয়। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অধিকতর সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তার লেশমাত্র দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। বরং উল্টোটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি বন্যহাতি তাড়ানোর পর গ্রামের সাধারণ মানুষগুলো যে সতর্কতায় থাকে, তা-ও যেন নেই ৫ আগস্ট-পরবর্তী দেশের নানান পর্যায়ের হর্তা-কর্তা-বিধাতাদের।
যারা সরকারে আছেন তাদের অনেকেরই এমন ভাব, যেন নৌযানের পিকনিকে আছেন। ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।’ কিন্তু বিবেচনায় নেন না, পিকনিক জাহাজটি আসলে নড়বড়ে এবং আছে অথৈয় পাথারে। আর ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনীতিকদের অনেকেই মসনদের স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু আচরণ করছেন হাড্ডি নিয়ে বিবাদের মতো। অথচ বাংলাদেশ এমন এক জটিল ইকোয়েশনের চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, যার তিনটিই বিপজ্জনক। কেবল একটি পথ আছে, যা বাংলাদেশেকে আলোর পথে নিয়ে যেতে পারে। আর এই একমাত্র আলোর পথটি বাছাই করে সবাই একযোগে চলার প্রজ্ঞা সংশ্লিষ্টরা দেখাতে ব্যর্থ হলে দেশের সর্বনাশ হতে আর বাকি থাকবে না। নিজের বিবেচনায় যারা বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারবেন না তাদের উচিত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া ২৫ ফেব্রুয়ারি বক্তব্য বারবার শোনা এবং মূল কথা অনুধাবনের চেষ্টা করা। তা না হলে জাতির কপালে যা আছে তা কল্পনা করলে অনেকেই শিউরে ওঠেন। কারো আশংকা, ‘পালাবি কোথা’ নাটকের বাস্তবতা সৃষ্টি হতে পারে!
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ৯ মার্চ ২০২৫, শিরোনাম, ‘স্বপ্নবিলাস ও নানান শঙ্কা’
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক