Home মতামত শকতি নাহি উড়িবার, আবাবিল পাখির অপেক্ষায় বিএনপি!

শকতি নাহি উড়িবার, আবাবিল পাখির অপেক্ষায় বিএনপি!

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এমনই দাবি দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের। এর আগ পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে অবস্থান ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন করে দলটি। এ ক্ষেত্রে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং এ ইস্যুতে সরকারের নানান ধরনের উক্তি বিএনপির জন্য সুবিধাজনক অবস্থা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এর মধ্যে, ‘নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন কমিশন গঠন না হলে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়ে রেখেছে দলটি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে মাসখানেক ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দলটির সিদ্ধান্ত হচ্ছে, একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে মাঠ চাঙ্গা রাখা হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে বুধবার(২২ডিসেম্বর) ৩২ জেলায় সমাবেশ শুরু হবে। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ নেতারা অংশ নেবেন। লক্ষ্য হচ্ছে মাঠ গরম রাখা। এর পাশাপাশি ইসি পুণঃগঠনে রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টিকে ইস্যু করার প্রয়াস ছিলো বিএনপির। কিন্তু এই প্রত্যাশাও হারে পানি পাচ্ছে না। বরং এ নিয়ে দলে স্পষ্ট বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে সংলাপ শুরু হয়ে যাবার পরও বিএনপি চিঠি না পাবার বিষয়টি অন্যরকম ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকটা হাহুতাশের সুর শোনা যাচ্ছে বিএনপি মির্জা আলমগীরে কন্ঠে। অন্য নেতারা সংলাপে না যাবার বুলন্দ আওয়াজ দিয়েও বিএনপি মাহাসচিব ২১ ডিসেম্বর বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ শুরু করছেন তাতে আমন্ত্রণ পেলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’  এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখনও রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ পাইনি ।’ তার  উচ্চারণ অনেকের কাছে ব্যাকুল আহাজীর মতো মনে হয়েছে। আর একদিন পরই ২২ ডিসেম্বর তিনি টাঙ্গাইলে বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় ঢালাও করে সংলাপ সংলাপ খেলা শুরু হয়ে গেছে আবার। সেখানে নাকি রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে সংলাপ করছেন। কীসের সংলাপ?’ বোঝাই যাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে যাওয়া প্রশ্নেই স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিএনপি। এরপরও আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানোর কথা বলছেন বিএনপি নেতারা, বলছেন কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্টানের কথা।

পাশাপাশি বিএনপি নেতারা এও স্বীকার করছেন, রাজপথে নামার জন্য বিএনপির সামনে সুস্পষ্ট সুযোগ কম। খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সীমিত সুযোগ সামনে এসেছে। তাই এই ইস্যুটিকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না দলের হাইকমান্ড। এ কারণে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমাদের এ দাবি যদি মানা না হয়;  সে ক্ষেত্রে আমাদের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। বাধ্য হয়েই আমাদের সরকার পতন আন্দোলনে নামতে হবে। সে প্রস্তুতিও আমাদের আছে।’

এদিকে সরকারের অন্য রকম প্রস্তুতি আছে বলে জানাগেছে। যার ইঙ্গিতও মিলেছে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে। এ ব্যাপারে জল অনেকখানি ঘোলা করার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে করা আবেদনের ওপর খুব শিগগিরই মতামত জানানো হবে।’ আইনমন্ত্রীর এই উক্তিকে বেগম জিয়ার বিদেশ যাবার এক প্রকার গ্রীন সিগনাল হিসেবেই বিবেচনা করছেন। অভিজ্ঞ মহল করেন, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাবার সুযোগ দিলে আন্দোলন চাঙ্গা করার বিএনপি নেতাদের আশার আলো ফুটো বেলুনের মতো চুপষে যেতে পারে।

এদিকে আন্দোলনের কথা বললেও বিএনপির সেই সক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় দলটি ‘আবাবিল পাখির’ আগমনের আশার বিভোর রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষরা। এ ক্ষেত্রে র‌্যাব এবং এর বর্তমান-সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে আশার আলো দেখছে রাজনীতিতে হীনবল বিএনপি। এ দলের বিষয়ে নেতারা মনে করছেন, এ নিষেধাজ্ঞা সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, মার্কিণ এ নিষেধাজ্ঞার পর দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের চাপমুক্ত ভাবছেন। এ কারণে বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গেছে। বিশেষ করে সারাদেশের কর্মসূচিগুলোতে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও উজ্জীবিত করতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আরও কর্মসূচি দেবে বিএনপি।

তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত লক্ষ্য ও ফল সম্পর্কে এখনো তারা পরিষ্কার নন। এ ক্ষেত্রে ভূরাজনীতির দিকেও খেয়াল রাখছেন বিএনপি। নেতাদের ধারণা, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও পাল্টাবে। সে ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ২০২৩ সালে সংসদ নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য হবে। এ জন্য বিএনপিকে রাজপথে নামতে হবে মনে করেন তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এ প্রসঙ্গে নম প্রকাশে বিএনপির এক নেতা দখিনের সময়-এর সঙ্গে আলাপকালে বলেছন, ‘স্বাধ থাকলেও আমাদের আসলে সাধ্য নেই। আমাদের অবস্থা হয়েছে, রবি ঠাকুরের কবিতার খাচাঁর পখির মতো, ‘খাঁচার পাখি বলে, হায়,   মোর  শকতি নাহি উড়িবার।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

জনসমর্থন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে বিএনপি

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক-এগারোর সরকারের মতো দুই নেত্রীকে মাইনাস করার কোনো কৌশল এ সরকারের...

নতুন সিইসি সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন, নিয়োগ পেলেন চার কমিশনারও

দখিনের সময় ডেস্ক: সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে...

Recent Comments