যুগে যুগে কিছু মানুষ তাঁদের কর্ম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। শহীদ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা এমনই মানুষগুলোর একজন। তিনি আমাদের আদর্শ ও অনুকরণীয় শিক্ষক হিসেবে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।
১৯৬৯ সালের শুরু থেকে পূর্ব পাকিস্তানে শোষন বিরোধী গণআন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ১৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে জেলের ভিতর গুলি করে হত্যা করে। এই হত্যার প্রতিবাদে ফুসে উঠে পূর্ববাংলার জনগণ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্রদের একটি প্রতিবাদী মিছিল রাজশাহী শহরে পুলিশী হামলার সম্মুখীন হয় এবং সেখানে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়। তৎকালীন প্রক্টর ড. জোহা সেখানে ছুটে যান এবং ছাত্রদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ঐ দিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের এক প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতাকালে ড. জোহা নিজের জামায় লেগে থাকা রক্ত দেখিয়ে বলেন “আজ আমি ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত। এর পর কোন গুলি হলে তা ছাত্রকে না লেগে যেন আমার গায়ে লাগে”।
পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজশাহী শহরের উদ্দেশ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দিকে এগিয়ে যায়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বাইরে পাকিস্তানি মিলিটারিরা সশস্ত্র অবস্থান নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ভাষা সৈনিক ড. জোহা মুখোমুখি অবস্থানের ভয়াবহতা স্পষ্টতই বুঝতে পারলেন। এ অবস্থায় তিনি ছোটাছুটি শুরু করলেন, একবার ছাত্রদের দিকে তাদের মিছিল নিবৃত্তের জন্য, তো অন্যবার সেনাসদস্যদের দিকে তাদের ফায়ার করা থেকে বিরত রাখার জন্য। তিনি হাত উচিয়ে সেনাসদস্যদের উদ্দেশ্যে বার বার বলছিলেন “প্লিজ ডোন্ট ফায়ার, দে আর ষ্টুডেন্টস্”। ড. জোহা সহ অন্যান্য শিক্ষকদের আশ্বাসে ছাত্ররা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ফিরছিল ঠিক তখনই ঘটে ইতিহাসের এক জঘন্যতম ঘটনা। পাক সেনারা অতর্কিত গুলি শুরু করলেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে গেলেন ড. শামসুজ্জোহা, এবং উগ্র পাকিস্তানি সৈনিক বেয়নটের আঘাতে র্জজরিত হল এই মহান শিক্ষকের বুক।
আহত ড. জোহাকে মিলিটারি ভ্যানে করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় মিউনিসিপ্যাল অফিসে। সেখানে তাঁকে চিকিৎসা না দিয়ে দীর্ঘসময় অবহেলায় তাঁর নিথর দেহ ফেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে, বেলা ৪.০০ টার দিকে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেলের সার্জিক্যাল রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই এই মহান শিক্ষক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর শেষ কথা ছিল “আমি কি বাঁচব”?
ড. জোহার এই আত্মত্যাগ বৃথা যায় নি। তাঁর এই শহীদ হবার ঘটনা বিদ্যুদ্বেগে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। যে সরকার একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যা করতে পারে, না তাদের সাথে আর কোন সমঝোতা নয়। রাজধানী ঢাকাসহ গ্রামে গঞ্জে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সারাদেশে ১৪৪ ধারা নয়, কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু অমিত শক্তি নিয়ে জেগে ওঠা মানুষকে নিবৃত্ত করার মত নৈতিক শক্তি ওই দুর্বৃত্তদের থাকার কথা নয়, ছিলোও না। ১৯ ফেব্রুয়ারীতেই দেখা গেল বিক্ষুব্ধ মানুষের সামনে পিছু হটছে পুলিশ, ইপিআর, সেনাবাহিনীর নির্দেশ অমান্য করছে তারা অস্বীকৃতি জানাচ্ছে স্বজনদের বুকে গুলি চালাতে ১৯ তারিখ দুপুরে ক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় আগরতলা মামলার বিচারকের বাসায়, প্রাণভয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে পলায়ন করেন। জনতা অগ্রসর হতে থাকে ঢাকা সেনানিবাসের দিকে। ৬৯ এর গণ আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ড.জোহার রক্তে পরিণত হয় দাবানলে। অবস্থা বেগতিক দেখে ফেব্রুয়ারীর ২০ তারিখে সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ অন্য সব বন্দি।
১৯৭০ থেকে এই দিনটি শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহা। জাতীয় পর্যায়ে তো দূরের কথা, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়না। আমরা প্রায়ই অনুযোগ করে বলি দেশে মেরুদন্ডসম্পন্ন আত্মমর্যাদাবান শিক্ষক তৈরি হচ্ছেনা। ইতিহাস এই কথাই বলে- যে জাতি তার বীরের সম্মান দিতে জানেনা সেখানে বীরের জন্ম হয় না। ড. জোহার আত্মোৎসর্গের কাহিনি স্কুল কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া খুবই জরুরি। ছাত্র-অন্ত প্রাণ এই মহান শিক্ষক ‘৬৯ এর সেই উত্তাল দিনগুলোতে শুধু প্রক্টরের দায়িত্বই পালন করেননি, ছাত্রদের নিরাপত্তাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। আজ যখন বাংলাদেশের শিক্ষায়তনগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নাজুক হয়ে পড়েছে, সামান্য স্বার্থের তাগিদে শিক্ষকেরা ছাত্রদের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থানে যাচ্ছেন, প্রক্টরেরা প্রায়শই নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন তখন ড. জোহা আমাদের সামনে এক আলোর দিশারী হিসেবে আবির্ভূত হন। মৃত্যুর ঠিক আগের দিন তিনি বলেছিলেন, “কোন ছাত্রের গায়ে একটিও গুলি লাগার আগে সে গুলি আমার বুকে লাগবে”। তিনি তাঁর কথা রেখেছিলেন। কিন্তু আমরা কি পেরেছি তাঁকে যথোপযুক্ত সম্মান দেখাতে? ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে যেয়ে যিনি নিজের প্রাণটি অকাতরে বিলিয়ে দিলেন যে মানুষটির আত্মাহুতি ‘৬৯ এর গণআন্দোলনকে দাবানলে পরিণত করল, ত্বরাণ্বিত করল দেশের স্বাধীনতা- তিনি কেন বৃত্তাবদ্ধ হয়ে রইবেন কেবলমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে? কেন তাঁর আত্মোৎসর্গের দিনটি অর্থাৎ ১৮ই ফেব্রুয়ারি সারাদেশে শিক্ষক দিবস অথবা ছাত্র-শিক্ষক সংহতি দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে না সারা দেশ জুড়ে? আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ড. জোহাকে তাঁর চেয়ে ভাল আর কেউ মূল্যায়ন করতে পারেন বলে আমি মনে করিনা। যতবার তিনি রাজশাহী এসেছেন ড জোহার মাজার জেয়ারত করে গেছেন। ড. জোহার আত্মত্যাগের অর্ধশতবার্ষিকী সামনে রেখেই আসুন আমরা ড. জোহাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্ত থেকে মুক্ত করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেই। ড. জোহা আমাদরে মাঝে নেই কিন্তু তিনি অমর হয়ে আছেন কোটি বাঙালির হৃদয়ে একজন আর্দশ ও শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষক হয়ে। সোচ্চার হই- আমাদের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার আত্মোৎসর্গের দিনটি যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সারা দেশে পালিত হোক।
রাষ্ট্রপতি প্রশ্নে সিদ্ধান্তের মধ্যে বিএনপির সুদূরপ্রসারী বিচক্ষণতার প্রতিফলন ঘটে। পর্যবেক্ষরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বর্তমানে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য ক্ষমতাসীনদের স্পষ্ট মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছে...
সংসদ নির্বাচন কবে? এটি টক অব কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এদিকে রাজনীতিতে জোর আলোচনায় আছে, নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি বেশ কৌশলী পথে হাঁটার প্রসঙ্গটি। এ ক্ষেত্রে...
সংসদ নির্বাচন কবে? এটি টক অব কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এদিকে রাজনীতিতে জোর আলোচনায় আছে, নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি বেশ কৌশলী পথে হাঁটার প্রসঙ্গটি। এ ক্ষেত্রে...
দখিনের সময় ডেস্ক:
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...
দখিনের সময় ডেস্ক:
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক-এগারোর সরকারের মতো দুই নেত্রীকে মাইনাস করার কোনো কৌশল এ সরকারের...
দখিনের সময় ডেস্ক:
সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে...
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept”, you consent to the use of ALL the cookies.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.