Home মতামত ভারতের পথে নেপাল, লকডাউনের ‘লক’ খুলে গেছে বাংলাদেশে

ভারতের পথে নেপাল, লকডাউনের ‘লক’ খুলে গেছে বাংলাদেশে

করেনা মহামারীর আগ্রাসন ভারতেকে লন্ডভন্ড করেদিয়েছে। এ তান্ডব আব্যাহত। শ্মশানে ঠাই নেই, গণচিতায়ও লাইন। আপেক্ষমাস লাশ খায় কুকুরে। অক্সিঞ্জের আভাবে রোগী মারা যায় আইসিউতে, ভয়ে পালায় ডাক্তার-নার্স। ভারতে সে এক ভয়াবহ অবস্থা। যেনো হ-র-র সিনেমা।

বেশ আগে থেকেই লাগাতরভাবে সর্ককর্ত করা হচ্ছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে পারে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য দেশেও। এই সতর্কবার্তা আমলে নিয়ে সুদূর অস্ট্রেলিয়া সতর্ক হয়েছে। বলেছে, ভারত থেকে সে দেশে যাওয়া যাবে না, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও না। গেলে পাচ বছরের জেল, সঙ্গে জরিমানা!

ভারতের করোনা পরিস্থিতি পুরো আমলে যারা নেয়নি, অথবা নেবার সুযোগ সীমিত তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ হচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপাল। ফলে এরইা মধ্যে শুরু হয়েছে নেপালের খেসারত দেবার পালা। ভারতের মতো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হিমালয় কন্যা নেপাল। দেশটির করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সেখানে দৈনিক সংক্রমণে নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। দৈনিক সংক্রমণ দশ হাজার ছুইছুই।  সংকট সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি সেনাবাহিনীকে জরুরি স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন। এদেক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে নেপাল সরকার।  রাজধানী কাঠমান্ডুসহ দেশের উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিমাঞ্চলে সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেড়েছে। এই এলাকাগুলোতে সংক্রমণের হার ৪৭ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে একদিকে দেখা দিয়েছে টিকার সংকট অন্যদিকে হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলো মানুষের দীর্ঘ লাইন। প্রধান শহরগুলোতে লকডাউনের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ওষুধ সরবরাহে প্রভাব পড়েছে। ফেডারেশন অব রেড ক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক আলেক্সান্ডার ম্যাথিউ বলেছেন, ভাইরাস দ্রুত ছড়াচ্ছে। আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নেপালের এই মানব বিপর্যয় ঠেকাতে আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

ভারতের মতো প্রতিবেশি নেপপাল করোনার গ্রাসে পড়ার পরও আমাদের হুশ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। যদিও আমাদেরে দেশে লকডাউন চলছে। তবে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, লকডাউনের ‘লক’ খুলেগেছে। আন্তজেলা বাস-যাত্রীবাহী ট্রেন-লঞ্চ ছাড়া সবই চলছে আগের মতোই।  যদিও যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ। কিন্তু তাতে কী? মালবাহী ট্রেনে যাচ্ছে যাত্রী।জরুরি মালামাল পরিবহনে রেলওয়ের বিভিন্ন রুটে কিছু পার্সেল ট্রেন চালু রয়েছে। মালামাল ছাড়া এসব ট্রেনে যাত্রী বহন নিষিদ্ধ থাকলেও বর্তমানে সব পার্সেল ট্রেনে অবাধে যাত্রী বহন করছেন রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী।

আর মানা হচ্ছে না ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি। ভাবখানা যেনো, কিসের স্বাস্থ্য বিধি, কিসের কি!মানুষ বেপড়োয়া। যেনো পঙ্গপাল। ঈদের বাজারে ভীড়। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে গণপরিবহন। রাস্তায় জটলা। চায়ের দোকানে আড্ডা। কারও কারও মুখে মাস্ক আছে, বেশিরভাগ মানুষের নেই। যাদের আছে তাদের বেশির ভাগই শোভাপায় থুতনিতে। দেথে মনে হয়, দেশে করোনা মহামারি বলে কিছু নেই। যদিও দৃশ্যমান করোনা মহামারীতে মৃত্যুর চলমান মিছিল। কিন্তু মানুষ কি কারনেই যেনো বেপরোয়া।

এই হলো ভিতরের অবস্থা্। সীমান্তের দিকে কিন্তু আশংকা আরো বেশি। আমাদের তিনদিকে ভারত। এক দিকে সাগরের জলরাশি। প্রতিবেশী ও বন্ধু ভারত করোনায় বিপর্যস্থ। সেই কেরোনা আবার ভয়াবহ প্রকৃতির। যে কারণে সুদূরে থেকেও আস্ট্রেলিয়া সতর্ক হয়েছে। কিন্তু বোধগম কারনেই আমরা তা পারিনি। ভারতের প্রতিবেশি নেপালও হয়তো পারিনি। এই না পারার চরম খেসারত শুরু হছেয়ে নেপালে!

বাংলাদেশও ভারতের প্রতিবেশি। আর ভয়ানক করোনা ভাইরাস খাবলে ধরেছে পুরো ভারতকে। এ অবস্থায় সার্বজনীন শংকার প্রশ্ন, করোনাকালে আমাদের দেশে যা চলছে তাতে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে যেতে পারে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশের জন্য নতুন হুমকি। তিনবার রূপ পাল্টাতে সক্ষম করোনার এ নতুন ধরন, ছড়ায় অতি দ্রুত। সেই সঙ্গে এটি তিন গুণ বেশি শক্তিশালীও। এ অবস্থায় বাংলাদেশে এর সংক্রমণ রোধে আপাতত ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এটি কতটা কার্যকর তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গে যে ট্রিপল মিউটেটেড ভাইরাস এসেছে, সেটা বাংলাদেশে এলে পরিস্থিতি কী হবে-সেটা নিয়ে অনেকে গবেষকই শংকিত।

এদিকে  ভারত ফেরত বাংলাদেশীদের কোয়ারেন্টাইনে হিমশিম খাচ্ছে যশোর প্রশাসন। যশোর ও বেনাপোলের সকল আবাসিক হোটেল এখন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার।  এর সংখ্যা অন্তত ২৯টি। এ হোটেলগুলো এবং বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থানে কোয়ারেন্টাইনে ভারত ফেরত বাংলাদেশীরা  সংখ্যা সহস্রাধিক। এছাড়া, যশোরের আশপাশের চার জেলা, সাতক্ষীরা, খুলনা, ঝিনাইদহ ও নড়াইলের হোটেলগুলোও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রূপান্তর করা হয়েছে। ভারতে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীরা বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরছেন। অনেকের দেহে মিলছে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট। এরপরও স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র বলছেন, আরো কিছু দিন সময় লাগবে। হায় আমরা কোথায় যাচ্ছি!

1 COMMENT

  1. বাঙালি সাহসী জাতি।অতি ক্ষুদ্র এ করোনাতে তাদের কোনও ভয় নেই। তাই কোন বিধি নিষেধ তোয়াক্কা না করেই অতি স্বাভাবিক চলন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

আপনার যেসব ভুলে ফ্রিজ দ্রুত নষ্ট হতে পারে

দখিনের সময় ডেস্ক: আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে যে যন্ত্রগুলো, তার একটি যে ফ্রিজ এতে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। একটি ফ্রিজ থাকা...

“আমি যদি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হইতাম”

দখিনের সময় ডেস্ক: ফেসবুক পোস্টে পিনাকী ভট্টাচার্য লিখেছেন, আমি যদি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হইতাম তাইলে জুলাই আগস্ট বিপ্লবে আহতদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতাম। ঢাকা...

নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে জামায়াত

দখিনের সময় ডেস্ক: নির্বাচন থেকে সংস্কার বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম শুরুর আগে যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের...

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছে বিএনপি

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ভোটার আইডি কার্ড...

Recent Comments