শিক্ষাবিদ এস এম ফজলুল হকের ২৯তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ
দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এস এম ফজলুল হকের আজ ২৯তম মৃত্যু বার্ষিকী। ক্ষিকতা জীবনে কিছুদিন গফরগাও কলেজে এবং পরে ১৯৫৭ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। এস এম ফজলুল হক বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। অবসর পরবর্তী সময়ে বরিশাল ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বরিশাল ইসলামিয়া কলেজে দায়িত্ব থাকাকালীন অধ্যাপক এস এম ফজলুল হক ১৯৯৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
এক সময়ের দেশজুড়ে উচ্চতর মানের কলেজের সংখ্যা ছিল নগন্য। এই নগন্য সংখ্যক কলেজ অংগনের অধ্যাপকগণ ও তাদের চলনে, বলনে, নীতিনৈতিকতায় ছিলেন শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরনীয়। তাদের জ্ঞানের গভীরতা এবং শ্রেণী কক্ষের উপস্থাপনা, শিক্ষার্থীদের গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করতো, শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে। এই শিক্ষকরা তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রাখতেন তাদের সহকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য। অধ্যাপক এস.এম.ফজলুল হক তাদেরই একজন।
গোপালগঞ্জের উলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে স্নাতক ও মাস্টার্স করে তিনি প্রথমে কিছুদিন গফরগাও কলেজে এবং তারপর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ১৯৫৭ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন সময়ে এস.এম.ফজলুল হক বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে, ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সংগ্রামে অংশ নিয়ে আহত হয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলন – তাকে প্রভাবিত করেছিল ছাত্রত্ব শেষে পেশা হিসাবে শিক্ষকতাকে বেছে নিতে। তার প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক এবিএম হাবিবউল্লাহ।
এস এম ফজলুল হকের সহধর্মীনি, মিসেস হামিদা হক হলেন ১৯৫৪-র পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকার আবদুল হাকিমের কন্যা। ১৯৭১-এ পাকবাহিনী বরিশালে বিমান হামলা চালালে শহরস্থ বাসা ছেড়ে এস এম ফজলুল হক গ্রামে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে জ্যেষ্ঠ পুত্রকে সংগে নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্যোগ ব্যর্থ হলে পুনরায় গ্রামে ফিরে আসেন।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে অধ্যাপক এস.এম.ফজলুল হকের ভাই ও ভাগ্নে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিল। শান্তি কমিটির স্থানীয় নেতাদের হুমকিতে, জুন মাসের শেষে তিনি ব্রজমোহন কলেজে ফিরে এসে সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন। এবার মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ না করে যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি নানাভাবে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় সাহায্য সহযোগিতা করেন, যারা ছিল ব্রজমোহন কলেজে তারই ছাত্র।
১৯৫৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘসময় অধ্যাপক এস.এম.ফজলুল হক বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। অবসর পরবর্তী সময়ে বরিশাল ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন যেন তারা শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে না পড়ে।
ব্রজমোহন কলেজ ক্যাম্পাসে শিশুদের জন্য বাংলা মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেন ‘শিশু নিকেতন’ প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক এস.এম.ফজলুল হক উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে এর নাম অশ্বিনী কুমার শিশু নিকেতন। এছাড়া ও নিজ গ্রাম রহমতপুরে স্কুল নির্মাণে ভূমিকা রাখেন। বর্তমানে এটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে উন্নীত হয়েছে। দীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপনার পাশাপাশি অধ্যাপক এস.এম.ফজলুল হক দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন যেন তারা শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে না পড়ে। তার যোগ্য উত্তরসুরী দুই পুত্র, বিএম কলেজের সাবেক অদ্যক্ষ অধ্যাপক শ ম ইমানুল হাকিম এবং বামধারার বিশিষ্ট রাজনীতিক ডাঃ ফয়জুল হাকিম। যিনি লালা নামে অধিক পরিচিত।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এস এম ফজলুল হকের ২৯তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার(১৫ডিসেম্বর) বরিশাল নগরীর কলেজ রোস্থ বাসভবনে কোরআরখানি এবং আসরবাদ দোয়ামাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনে অংশ নেবার আনুরোধ জানিয়েছেন মরহুমের স্ত্রী হামিদা হক।