বৃটিশ রাজত্বে নীল করের আদলে শিক্ষাবোর্ডগুলো নানা ধরনের ফি আদায় করে। স্কুল-কলেজ এবং সরাসরি শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে টাকা আদায় করা হয়। শিক্ষা বোর্ডের টাকা আদায়ের খাতগুলোর বেশির ভাগই বিস্ময়কর ও অদ্ভূত । এর মধ্যে কতগুলো অনুমোদিত এবং কতগুলো আরোপিত- তা বলা কঠিন। আর সরকার নির্ধারিত রেটের বাইরে ঘুষ আদায়ে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড শীর্ষে আছে বলে জানাগেছে। উল্লেখ্য, এই বোর্ডের আওতায় ১৮ হাজার মাধ্যমিক স্কুল এবং ৪ হাজার কলেজ রয়েছে।
১. প্রথমেই ধরা যাক স্কুল পরিচালনা কমিটি প্রসঙ্গ। পরিচালনা কমিটি হয় দুই ধরনের, এডক ও রেগুলার। এডক কমিটির মেয়াদ ৬ মাস এবং রেগুলার কমিটির মেয়াদ দুই বছর। এডক কমিটির জন্য দিতে হয় দুই হাজার এবং রেগুলার কমিটির জন্য ফি হিসেবে শিক্ষা বোর্ডকে প্রকাশ্যে দিতে হবে চার হাজার টাকা। আর অপ্রকাশ্যে কিছু টাকা তো দিতেই হবে! এই টাকার অংকে হেরফের আছে। তবে অংকটি বেশ মোটা। প্রসংগত উল্লেখ্য, সরকারী কলেজে কোন ম্যানেজিং কমিটি নেই। ফলে এই খাতে কোন টাকা দিতে হয় না। তবে রেজিষ্ট্রেশন এবং পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের জন্য টাকার অংকটা বেশ বড়।
২. স্কুলে ষষ্ঠ থেকে নবন শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। ষষ্ঠ শ্রেনীতে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য রেজিষ্ট্রেশন ফি ১৭৫ টাকা। অষ্টম শ্রেনীতে এ ফি ২৫০ এবং নবম শ্রেনীতে ৩৮০ টাকা। এখানেই শেষ নয়! ষষ্ঠ শ্রেনীতে নবম শ্রেনী পর্যন্ত কোন শ্রেণীতে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে শিক্ষার্থী বেশি হলে বাড়তি টাকা গুণতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। উল্লেখ্য, স্কুলে প্রতি শ্রেণীতে অনুমোদিত আসন হচ্ছে ৫৫। এর বেশী হলে নতুন সেকশন অনুমদোন করার বাধ্যবাধকতা আছে। এ জন্য প্রকাশ্যে ও অপ্রক্যাশ্যে টাকা গুণতে হয়।
৩. এসএসসি পরীক্ষা ফর্ম ফিলাপের সময় প্রতি শিক্ষার্থীর মাথাপিছু নির্ধারিত টাকা হচ্ছে বিজ্ঞানে ২২৪০ টাকা এবং কলা ও মানবিকে ২১৪০ টাকা। এ টাকা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত স্কুলগুলোকে দেয়া হয় শিক্ষার্থী প্রতি ৪৭৫ টাকা। বাকী টাকা রাখে বোর্ড। এ টাকা থেকে প্রবেশ পত্র, প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র সরবরাহ ও উত্তরপত্র পরীক্ষা খাতে খরচ দেখানো হয়। কিন্তু এ খরচের স্বচ্ছতা নিয়ে নানান অভিযোগ রয়েছে।
৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নানান উছিলায় টাকা আদায়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানান কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়। এই খরচ সরাসরি পড়ে শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে। যেমন রেজিষ্ট্রশনে ভুল সংশোধন করতে গুণতে হবে ৮৫০ টাকা। নামে ভুল সংশোধনে নাগবে ১০০০ টাকা। বোর্ড ট্রান্সফার করতে দিতে হবে ১০০০ টাকা।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, স্কুলের চেয়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের উপর জুলুম তুলনামূলক কম চলে। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কলেজের ছাত্রদের উপর বেশী চাপ দিয়ে ‘ছ্যাচা’ খাবার চাঞ্চ আছে!
সবমিলিয়ে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড যেনো বৈধ-অবৈধ্য টাকাখেকো সংস্থায় পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ্য, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা বছরে দুটি বোনাস পেলেও শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পান ছয়টি। এদিকে বোর্ডের পিয়নের বেতনও অন্তত ৫০ হাজার টাকা।