আওয়ামী লীগহীন নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হবে কিংস পার্টি
দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪, ১৭:৫৩ অপরাহ্ণ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
আলম রায়হান:
জাতীয় নির্বাচন দূরে না কাছে- এর সমান্তরালে আলোচনা আছে নির্বাচনের নানান ইকোয়েশন নিয়ে। আর এ ইকোয়েশনের কেন্দ্রে আছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ গ্রহণ করা-না করার বিষয়টি। গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না তা নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানা আলোচনা আছে। আর এতে কার লাভ, কার ক্ষতি? সব মিলিয়ে কী দাড়াচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনের ইকোয়েশন?
সাধারণভাবে মনে করা হয়, নির্বাচন কমিশনের বিরাজমান আইনে নিষিদ্ধ করা না হলে অথবা বিচারিক প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্ত না হলে ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ আওয়ামী লীগের রয়েছে। কিন্তু গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ও নতুন দল (কিংস পার্টি) গঠনের দ্বারপ্রান্তে থাকা ছাত্ররা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সুযোগ না দেয়ার কথা বলে আসছেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ভাবনার বিষয়ে বিবিসি বাংলা একাটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ২৭ ডিসেম্বর। নির্বাচনে অংশ নেয়া, না নেয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের দুজন কেন্দ্রীয় নেতা বিবিসির সঙ্গে দুই ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, তারা নির্বাচনকে স্বাগত জানায় এবং উপযুক্ত পরিবেশ পেলে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। তবে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষায় এই অর্ন্তর্বতী সরকারের কোনো কার্যক্রমকে তারা বৈধতা দিচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে এখনও কোনো উৎসাহ বা উদ্বেগ কিছুই নেই আওয়ামী লীগে।
আওয়ামী লীগের একটা ভোটব্যাংক আছে- এটি ধরে নিলেও নির্বাচনে কতটা সুবিধা করতে পারবে ক্ষমতাচ্যূত দলটি? এই ভোট ব্যাংক পুরোটা কেন্দ্রে আনার বিষয়টি কিন্তু অনিশ্চয়তার দোলাচলেই রয়েগেছে। কারণ, সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত সাবেক শাসক দলটি। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান নিয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও পর্যায়ক্রমে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছেন। সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতারা ঘরছাড়া হয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জের অবস্থা সেই এলাকার মানুষের কাছে ‘কল্পনাকেও হার মানিয়েছে’। শুধু গোপালগঞ্জ নয়, সারাদেশেই আওয়ামী লীগ নেতাদের একই রকম অবস্থা। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ দেশে নেই। রাজনীতি এবং কর্মসূচি দূরে থাক, বাড়িতে অবস্থান করাও এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিলেও আক্রমণের শিকার হতে হয বলে অভিযোগ আছে।
গত পনের বছর কর্তৃত্ববাদী শাসন, দুর্নীতি, ভোটে অনিয়ম, গুম-খুন এবং জুলাই আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান যে পর্যায়ে নামিয়েছে সেখান থেকে উত্তরণ খুব সহজ নয়। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ ‘স্বৈরাচার’, ‘ফ্যাসিস্ট’ তকমা আর গণহত্যায় দায়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের জন্য বড় সংকট হয়েই থাকবে।
সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, নিষিদ্ধ না হলেও আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চাইবে না। এদিকে বিরাজমান আইন এবং রাজনীতির সাধারণ বিশ্লেষণে মনে করা হয়, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারে। তারা আওয়ামী লীগকে নির্বাচন প্রবনতার দল হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু বিচেনায় রাখা প্রয়োজন, জেনারেল এরশাদের ৮৮ সালের এবং বেগম খালেদা জিয়ার অধীনে ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। ফলে ‘আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকবেই’- এমনটা ভাবা বাস্তবতার সঙ্গে যায় না। প্রসঙ্গত, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে জটিল পরিস্থিতে আছে আওয়ামী লীগ। কারোকারো মতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের চেয়েও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জটিলতর পরিস্থিতে নিপতিত হয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এ অকল্পনীয় ঘটনার নায়কদের সঙ্গে প্রকাশ্য আপোষ করতে চাইবে না আওয়ামী লীগ। আরো খেলা থাকতে পারে।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না এলে এ দলটির ভোট ব্যাংক কোন অবস্থাতেই বিএনপির দিকে ঝুকবে না। এই সুযোগে এদেরকে কিংস পার্টির দিকে টানা সহজ হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী ভোট ব্যাংক, বিএনপির বঞ্চিত ও অতি সুবিধাবাধী গ্রুপ এবং ফ্লটিং ভোট টানতে পারলে জুলাই আন্দোলনের ছাত্রদের প্রসব উম্মুখ কিংস পার্টি আগামী নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াতে পারে। আর রাজনীতির অধিকতর সুবিধাজনক অবস্থানে পৌছে যাবে জামায়াত।