বাংলাদেশে একটি প্রধান প্রবণতা হচ্ছে, শিক্ষার প্রতি সর্বস্তরের মানুষের আগ্রহ। বিত্তহীন থেকে উচ্চবিত্ত, সবাই সন্তানকে লেখাপড়া করাতে চান। কিন্তু প্রচলিত ধারায় এ আকাঙ্ক্ষার ফলাফল কী? গত বছর ১৩ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রধান সংবাদের শিরোনাম, ‘দেশে কোটির বেশি বেকার!’ পরীক্ষায় পাসের সার্টিফিকেটধারী বেকারদের নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের আলোকে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। যাদের প্রসঙ্গে রিপোর্ট করা হয়েছে তাদের অনেকেই প্রয়োজনীয় পর্যায়ে লেখাপড়া না জানলেও কাগজপত্র অনুসারে তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং স্বাক্ষরের স্থলে লিখতে হয় না ‘নিংবং’। অর্থাৎ, ‘ব-কলমের পক্ষে নিশান সই’।
এই হচ্ছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভেতরের খানিক চিত্র। আর কিঞ্চিৎ পরিষ্কার করে বললে বলতেই হবে, দেশের শিক্ষা মোটের ওপর সর্বনাশের কফিনে শায়িত। এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার মতো লোকের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। নেই বললেই চলে। তবে কীভাবে এই সর্বনাশ হলো? এই প্রশ্ন করার লোক অগুনতি, এবং এ ব্যাপারে উদ্বেগ আকাশ প্রমাণ। এ ক্ষেত্রে হিমালয়ও ছোট। এদিকে প্রমাণিত প্রবচন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু আমাদের শিক্ষা কাঠামো এবং নানান ধরনের অনাচারী ধারা কি জাতির মেরুদণ্ড তৈরি করে, নাকি অভিজাত বেকার শ্রেণি এবং বিভিন্ন কাণ্ডের দণ্ড, মানে লাঠি বানায়? এটি কিন্তু বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেই পাকিস্তান আমল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের মহিমান্বিত করা হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কারণে। আইয়ুব-ইয়াহিয়া থেকে শুরু করে মুজিব-জিয়া-এরশাদ-খালেদা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ভূমিকা মহিমান্বিত করার ধারা চলমান। সর্বশেষ রাজনীতিতে হায়নাসম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিদায়ে তো ছাত্ররাই যেন সব! এমনকি সরকারপ্রধান হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস তাদেরই নিয়োগকর্তা হিসেবে প্রকাশ্যে আখ্যায়িত করেছেন। আর সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা জাতীয় নাগরিক পার্টিকে তো বলাই হয়, ছাত্রদের রাজনৈতিক দল।