• ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের জন্য বিডিআর হত্যাকাণ্ড: জেনারেল মইন উ আহমেদ

দখিনের সময়
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ণ
সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের জন্য বিডিআর হত্যাকাণ্ড: জেনারেল মইন উ আহমেদ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনর সময় ডেস্ক:
বিডিআর হত্যাকান্ড নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন সে সময়ের সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। তিনি বলেন, জাতির প্রত্যাশা পূরণে গঠিত কমিশনের তদন্তে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটিত হবে। কারণ ওই হত্যাকান্ডের ভিকটিমরা ছিলেন বাংলাদেশের চৌকশ অফিসারদের অন্যতম। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের অভিপ্রায়ে ওই হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। বিডিআর হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ২৯ মিনিটের একটি ভিডিও-বক্তব্য সম্প্রতি ইউটিউবে আপলোড করেছেন জেনারেল মইন। সে ভিডিওর চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলোঃ
৭৪ জনকে হত্যা করা হয়
 জেনারেল (অব.) মইন উ আহমেদ বলেছেন, তখন সেনাবাহিনী কী ভূমিকা নিয়েছিল এবং ঘটনা কী ছিল, সে সম্পর্কে মানুষের জানা উচিত। উল্লেখ্য, বিডিআরের কথিত ওই বিদ্রোহে ওই সময় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়।
সাবেক এই জেনারেল উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনীর অব্যবহৃত কিছু অস্ত্র (৮১ মিলিমিটার মর্টার, যেগুলো সেনাবাহিনী ব্যবহার করে না) বিডিআরকে দেওয়া নিয়ে বাহিনীটির তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের (হত্যাকান্ডে নিহত) সঙ্গে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে কথা হয়। তিনি অস্ত্রগুলো নিতে রাজি হন। তখন পর্যন্ত বিদ্রোহ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না বলেই সাবেক সেনাপ্রধানের বিশ্বাস।
কর্নেল ফিরোজ জানান
একটি বৈঠকে থাকার সময় ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ‘আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কর্নেল ফিরোজ সভাকক্ষে প্রবেশ করেন এবং আমাকে কানে কানে বলেন, স্যার পিলখানায় গন্ডগোল হচ্ছে। আপনার দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।’
মইন উ আহমেদ বলেন, তখন ওই সভা স্থগিত করে সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমার অফিসে এলাম। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিডিআরের ডিজির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। এডিসি ক্যাপ্টেন জুনায়েদকে নির্দেশ দিই টেলিফোনে যুক্ত করার জন্য। তাঁদের তাৎক্ষণিক সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি। সামরিক গোয়েন্দারা তখন পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সময় বাঁচাতে কারও নির্দেশ ছাড়াই সেনাবাহিনীর ৪৬ ইনডিপেনডেন্ট পদাতিক ব্রিগেডকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিই। তারা তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করে, যার নামকরণ করা হয় ‘অপারেশন রিস্টোর অর্ডার’। গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে পিএসও এফডি জেনারেল মবিনকে অবহিত করি।
সকাল ৯টা ৪৭ মিনিটে বিডিআর
 ডিজিকে ফোনে পাওয়া যায়
সকাল ৯টা ৪৭ মিনিটে বিডিআরের ডিজিকে ফোনে পাওয়া গেল। আমি ওনাকে বল্লাম কী হয়েছে। তিনি এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। তিনি বলেন, দরবার চলাকালীন দুজন সশস্ত্র সৈনিক দরবার হলে প্রবেশ করে। একজন আমার (ডিজির) পেছনে এসে দাঁড়ায় এবং অজ্ঞান হয়ে যায়। অপরজন দরবার হল ক্রস করে বাইরে চলে যায়। তার পরপরই বাইরে থেকে গুলির শব্দ আসে।
গুলির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে দরবার হলে উপস্থিত সৈনিকবৃন্দ গন্ডগোল শুরু করে দেয়। মইন উ আহমেদ বলেন, মনে হলো সব পরিকল্পনার অংশ। ডিজি আরও বলেন, আমি সেক্টর কমান্ডার এবং ব্যাটালিয়ন কমান্ডারকে পাঠিয়েছি তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য, যাতে করে পুনরায় দরবার শুরু করা যায়।
১০ জন কর্মকর্তা ৬৫৫ সৈনিক
পিলখানার উদ্দেশে যাত্রা করে
 মইন উ আহমেদ উল্লেখ করেন, ওইদিন সকাল ৯টা ৫৪ মিনিটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুঠোফোনে পেলাম। এর মধ্যেই তিনি (শেখ হাসিনা) বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে অনেক তথ্য পেয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় আমি তাঁকে অপারেশনের কথা জানালে তিনি জানতে চান, কতক্ষণ সময় লাগবে ব্রিগেডকে তৈরি করতে? আমি বললাম, সাধারণত ছয় ঘণ্টা লাগে। তবে তাড়াতাড়ি করে দুই ঘণ্টার মধ্যে তৈরি করা যায়। ৪৬ ব্রিগেডকে পিলখানায় যাওয়ার অনুমতি শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন বলে জানান মইন উ আহমেদ।
ব্রিগেডটি এক ঘণ্টার মধ্যে যাত্রা করে উল্লেখ করে জেনারেল মইন বলেন, ৪৬ ব্রিগেডের তৎকালীন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমের নেতৃত্বে ১০ জন কর্মকর্তা ও ৬৫৫ জন সৈনিক পিলখানার উদ্দেশে যাত্রা করে। সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রিগেডের অগ্রবর্তী দল জাহাঙ্গীর গেট অতিক্রম করে। ওদিকে বিদ্রোহীরা বিডিআর গেটগুলোর সামনে আক্রমণ প্রতিহত করতে বিভিন্ন ভারী অস্ত্র মোতায়েন করে বলে উল্লেখ করেন মইন উ আহমেদ। তিনি বলেন, বেলা ১১টায় ৪৬ ব্রিগেডের প্রথম গাড়িটি পিলখানার মেইন গেটের কাছাকাছি পৌঁছালে বিদ্রোহীরা একটি পিকআপ লক্ষ করে রকেট হামলা চালায়। এতে চালক ঘটনাস্থলেই মারা যান।
সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই বেশির
ভাগ অফিসারকে হত্যা করা হয়
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, আমার নির্দেশ অনুযায়ী ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে আমার অফিস থেকে বিডিআরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তা সম্ভব হয়নি। হয়তো এর আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। তৎকালীন লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসের ধারণা অনুযায়ী, সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই বেশির ভাগ অফিসারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেনাবাহিনীর ব্রিগেড পৌঁছায় ১১টার পরে। তার মানে আমরা পৌঁছানোর আগেই বেশির ভাগ হত্যাকা  ওরা করে ফেলেছে।
৩৫৫ জন ্যাব সদস্য পিলখানায়  
প্রবেশের অনুমতি পাননি।
মইন উ আহমেদ বলেন, ক্যাপ্টেন শফিকের নেতৃত্বে ৩৫৫ জন র‌্যাব সদস্য পিলখানায় পৌঁছান ১০টার আগেই। এ সময় তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পিলখানায় প্রবেশের অনুমতি চাইলেও তা পাননি। তাঁকে যদি অনুমতি দেওয়া হতো, (বিদ্রোহীরা তখনো পুরোপুরি সংঘটিত হতে পারেনি, কোনো ক্ষয়ক্ষতিও করতে পারেনি) তাহলে তিনি সহজেই ওদের কনটেন্ট করতে পারতেন।
সাবেক এই সেনাপ্রধান উল্লেখ করেন, ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে পিএসও এএফডি (প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ) তাঁকে জানান, সরকার রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। বিদ্রোহীরা দাবি করেছে যে, কোনো আলোচনার আগে সেনাবাহিনীকে এ এলাকা থেকে চলে যেতে হবে। তাই সরকার আদেশ করেছিল, সেনাবাহিনীর সদস্যদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যেতে হবে। অন্তত ২ কিলোমিটার উত্তরে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়।
%%%%%%%%
বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রী যমুনায় ডাকেন
আনুমানিক বেলা ১২টায় পিএসও ফোন করে জরুরি ভিত্তিতে আমাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যমুনায় যেতে বলেন। ওই সময় প্রতিটা ক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যা হোক আমি যমুনায় রওনা হলাম। মইন উ আহমেদ বলেন, বেলা ১টার দিকে সাদা পতাকা নিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও হুইপ মির্জা আজম আলোচনার জন্য পিলখানায় যান। এরই মধ্যে সরকার থেকে বলা হলো, সেনাবাহিনী পিলখানার প্রধান ফটক এলাকায় থাকবে। র‌্যাব ও পুলিশ আরও দুটি এলাকায়। ডেইরি ফার্ম থাকা এলাকাটি অরক্ষিত ছিল।
মন্ত্রিসভা বৈঠক করছিল
 শেখ হাসিনা
মইন উ আহমেদ বলেন, যমুনায় গিয়ে অনেক লোককে দেখি, লোকে লোকারণ্য, হাঁটার জায়গা নেই। যাঁদের কোনো কাজ ছিল না। মন্ত্রিসভা বৈঠক করছিল। কোনো সিদ্ধান্ত আসছিল না। আমি ভেবেছিলাম, সেখানে পৌঁছার সংবাদ জেনে তিনি আমাকে ভিতরে ডেকে নেবেন। কিন্তু তা করা হলো না।
বেলা ২টার পর খবর এলো, পিলখানা থেকে একজন অফিসার পালিয়ে যমুনায় এসেছে। আমি তার কাছে ছুটে গেলাম। জানলাম যে বেশ কিছু অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ডিজি বিডিআর সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন। সে সময়ই নিশ্চিত হলাম যে বিডিআর বিদ্রোহীরা নিরপরাধ অফিসারদের হত্যা করেছে।
রাজনৈতিকভাবে সমাধানের
কথা বললেন শেখ হাসিনা
 মন্ত্রিসভার পর আরেকটি ছোট বৈঠক করে তিন বাহিনীর প্রধানদের শেখ হাসিনা ডাকেন বলে উল্লেখ করে মইন উ আহমেদ বলেন, তিনি যাওয়ার দেড় ঘণ্টা পরে বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধান যমুনায় এসেছিলেন।
শেখ হাসিনা আমাদের বললেন যে, রাজনৈতিকভাবে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম এবং তাপস বিদ্রোহীদের একটি ডেলিগেশন নিয়ে যমুনায় আসছেন এবং তারা (বিদ্রোহীরা) চাচ্ছে সাধারণ ক্ষমা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেন, বিদ্রোহীদের কিছু বলার থাকলে আমরা (তিন বাহিনীর প্রধান) যেন তাদের বলি।
মইন উ আহমেদ বলেন, ‘তখন আমি তাঁকে (শেখ হাসিনা) বলি, অপারেশন রিস্টোর অর্ডারের শুরুতেই আমাদের একজন সৈনিক নিহত হয়েছে এবং একজন গুরুতর আহত হয়েছে। এইমাত্র খবর পেলাম বিদ্রোহীরা অনেক অফিসারকে হত্যা করেছে। আমি আরও বলি, বিদ্রোহীদের কোনো শর্ত মানা যাবে না। আপনি তাদের বলবেন, অফিসার হত্যা এ মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে। আর একটি প্রাণও যেন না হারায়। দ্বিতীয়ত. আটক সব অফিসার এবং তাদের পরিবারকে এক্ষুনি মুক্তি দিতে হবে। তৃতীয়ত. অস্ত্র, গোলাবারুদসহ সব বিদ্রোহীকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। চতুর্থত. আমি জোর দিয়ে বলি যে, সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
বিকাল ৩টা ৪৮ মিনিটে
 বিদ্রোহী যমুনায় আসে
বিকাল ৩টা ৪৮ মিনিটে ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে ১৪ জন বিদ্রোহী আলোচনার জন্য যমুনায় আসে। তাদের একটি বড় রুমে রাখা হয়। আমি আমার এডিসিকে বললাম, দেখো তো এদের মধ্যে নেতা কে, ডেকে নিয়ে এসো। এডিসি জুনায়েদ তৌহিদকে নিয়ে এলো। তার কাছে সবিস্তার জানতে চাইলাম কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, এখন কী অবস্থা। তিনি বললেন, ‘সকাল ৯টায় বিদ্রোহীরা আমাকে একটি কক্ষে তালা মেরে রেখেছিল। এখন তালা খুলে আমাকে এখানে এনেছে। আমি কিছুই জানি না।’ এ সময় আমি তাকে বলি যে, ‘আপনার সঙ্গে যারা এসেছেন তাদের কাছে জেনে আমাকে জানান।’ তিনি ভিতরে চলে গেলেন, আর আসেননি বাইরে।
প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ক্ষমা
 ঘোষণা করলেন
শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বলে উল্লেখ করে মইন উ আহমেদ বলেন, বৈঠকে শেখ ফজলে নূর তাপস, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম ছিলেন। সেখানে গিয়ে দেখি ওই ১৪ জনকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বললেন, যেটি আমি শুনেছি যে, তোমরা অস্ত্র-গোলাবরুদ সারেন্ডার করো এবং সবাই ব্যারাকে চলে যাও। পরে উনি (প্রধানমন্ত্রী) সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন।
আলোচনা শেষে জনাব নানক অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানালেন পরিস্থিতির সারাংশ এবং এটাও বললেন যে, প্রধানমন্ত্রী এই বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। তারা বলেছে এখন আত্মসমর্পণ করবে এবং ব্যারাকে ফিরে যাবে।
বিদ্রোহীরা ৬টা ৩৭ মিনিটে যমুনা থেকে পিলখানার উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখানে গিয়ে তারা ঘোষণা দেয় যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমার প্রজ্ঞাপন তাদের হাতে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ করবে না। তারা পুনরায় গোলাগুলি শুরু করে এবং অফিসারদের খুঁজতে থাকে।
রাত ১২টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পিলখানায় যান
মইন উ আহমেদ বলেন, রাত ১২টায় তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, শেখ ফজলে নূর তাপস ও তৎকালীন আইজিপি পিলখানায় যান আলোচনার জন্য এবং তাদের সঙ্গে বসেন। একপর্যায়ে বিদ্রোহীরা কিছু অস্ত্র সমর্পণ করে এবং আটটি পরিবারকে মুক্তি দেয়। এর মধ্যে শুধু তিনটি পরিবার ছিল সেনা অফিসারদের। পাঁচটি ছিল ডিএডি ফ্যামিলি।
সাহারা খাতুন জানতেন, অফিসার এবং পরিবারের সদস্যদের কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কিন্তু তিনি তাঁদের মুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ নেননি, খোঁজখবরও নেননি। ওই আটটি পরিবার নিয়ে তিনি পিলখানা থেকে বের হয়ে আসেন।
ট্যাংক আসার খবরে বিদ্রোহীরা
আত্মসমর্পণে রাজি হয়
পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি আবার গোলাগুলি শুরু করে বিদ্রোহীরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে ডেকে নেন জানিয়ে মইন উ আহমেদ বলেন, তাঁকে জানানো হয় বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ না করলে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হবে। তিনি সাভার থেকে ট্যাংক আনার অনুমতি চান। সেটা দেওয়া হয়। তিনি ট্যাংক রওনা দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশ দেন। অন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হয়।
সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ও ট্যাংক আসার কথা শুনে বিদ্রোহীরা কোনো শর্ত ছাড়া আত্মসমর্পণে রাজি হয়। শেখ হাসিনা বেলা ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দেন। সেই পরামর্শ তিনি (মইন) দিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রস্তুতি দেখে বিদ্রোহীরা আলোচনা ও আত্মসমর্পণের জন্য উদ্গ্রীব হয় এবং সাদা পতাকা টানিয়ে দেয়। রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি দল পিলখানায় প্রবেশ করে এবং বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে। এর মাধ্যমে ৩৩ ঘণ্টার বিদ্রোহের অবসান হয়। প্রাণ হারান ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, যাঁরা সেনাবাহিনীর মেরুদ  ছিলেন।
নেপথ্য কাহিনি
আজও অনুদ্ঘাটিত
আলোচিত বিডিআর হত্যাকান্ডের নেপথ্য কাহিনি আজও অনুদ্ঘাটিত রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও সেই রোমহর্ষক হত্যাকান্ডের নেপথ্যের সত্য কেউ জানতে পারেনি। কীভাবে কার স্বার্থে এবং কার মদদে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার পিলখানায় তৎকালীনন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল তা এতদিন শুধু ক্ষমতাসীনদের মুখে একতরফা বয়ান হিসেবে উচ্চারিত হয়েছে। ভিকটিমরাও সরব হননি অথবা মুখ খুলতে সাহস পরনি।
উল্লেখ্য, অন্তর্র্বতী সরকার বিডিআর হত্যাকান্ডের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছে। সে কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে কমিশনের প্রধান এ এল এম ফজলুর রহমান বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘হত্যাকান্ডের নেপথ্যে দেশিবিদেশি ষড়যন্ত্র যদি থেকে থাকে, তা চিহ্নিত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’