• ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলারয় রায় দেওয়া বিচারপতির পদত্যাগ, দেশত্যাগ করেছেন স্ত্রী-সন্তানসহ

দখিনের সময়
প্রকাশিত জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ণ
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলারয় রায় দেওয়া বিচারপতির পদত্যাগ, দেশত্যাগ করেছেন স্ত্রী-সন্তানসহ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে নিজ স্বাক্ষরযুক্ত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এর আগে গত ৯ নভেম্বর তিনি সস্ত্রীক দেশত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি ও তার স্ত্রী কানাডায় তাদের দুই মেয়ের কাছে রয়েছেন। তার বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান শাহেদ নূর উদ্দিন। দুই বছর পর তার নিয়োগ স্থায়ী হয়। বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক থাকাকালে বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দিয়েছিলেন। ক্ষমতার পালাবদলের পর হাইকোর্ট ওই মামলার সব আসামিকে খালাস দেন।
জজ আদালতের বিচারক থাকাকালে শাহেদ নূর উদ্দিন ঢাকার সনি হত্যা মামলা, সাবেক এমপি আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা, সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান হত্যা মামলা, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মণ্ডল হত্যা মামলা, সাবেক ডেপুটি স্পিকার হুমায়ন খান পন্নীর স্ত্রী সুলতানা পন্নী হত্যা মামলা, ফরিদপুরের সাংবাদিক গৌতম হত্যা মামলা, ওয়ার্ড কমিশনার নিউটন হত্যা মামলা, কলেজ শিক্ষিকা কৃষ্ণ কাবেরী হত্যা মামলা, পূরবী জুয়েলার্সের মালিক হত্যা মামলারও রায় দেন শাহেদ নূর উদ্দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে অনার্স ও মাস্টার্স করা শাহেদ নূর উদ্দিন ১৯৮৩ সালের ২০ এপ্রিল মুনসেফ হিসেবে বিচার বিভাগে যোগ দিয়েছিলেন। ২০০০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি জেলা জজ পদে উন্নীত হন।
শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন বিচারককে অপসারণের দাবি ওঠার পর গত বছর ১৬ অক্টোবর ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তাদের হাইকোর্টে বিচারকাজ পরিচালনা থেকে বিরত রাখা হয়। ওই ১২ বিচারকের মধ্যে শাহেদ নূর উদ্দিন একজন। আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর দুপুরে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই দিন হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। আর ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইং।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সেদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা বলেছিলেন, আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। তবে হাইকোর্ট বিভাগের কোন ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না, তাদের নাম তখন প্রকাশ করেনি সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। অবশ্য পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ১২ জন বিচারপতির নাম দেখা যায়নি। তাদের মধ্যে একজন এরই মধ্যে অবসরে গেছেন।
গত বছরের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলে কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতিসংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান। এরপর গত বছরের ৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন বিচারপতির আচরণের (কনডাক্ট) বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাবলি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে বলে জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬ জানুয়ারি প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬(৫)(বি) অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। সে অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আগামী সপ্তাহে তদন্ত শুরু করবে। এমন প্রেক্ষাপটে বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের পদত্যাগ করার তথ্য জানা গেল।