না না, আমি একদমই সমস্যা মনে করিনি: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
দখিনের সময়
প্রকাশিত জুলাই ১৪, ২০২৫, ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ
সংবাদটি শেয়ার করুন...
দখিনের সময় ডেস্ক:
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ঠিক কবে হবে, এই প্রশ্ন এখনাে অমীমাংসিত। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে সন্দেহ, সংশয় তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ এবং নিজের নিরপেক্ষতার প্রশ্নেও জবাব দিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা না পারার প্রশ্ন, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। বিবিসি বাংলার পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো।
বিবিসি বাংলা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে যোগ দেয়ার জন্য।
আপনি এমন একটা সময়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নিয়েছেন যখন কি-না বাংলাদেশ একটা ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামনে খুব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন আছে। বড় প্রশ্ন এখন, নির্বাচন কবে হবে সেটা কি এখন আপনি বলতে পারবেন?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: ‘ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট ফর মি টু রেসপন্ড, বিকজ আই মাইসেলফ ওন্ট নো এক্স্যাক্ট ডেট (সুনির্দিষ্ট তারিখ)। পোলিং ডেটটা জানি না। এপ্রিলে ফার্স্ট হাফে (প্রথমার্ধে) বলা হচ্ছে। দ্যাট কাইন্ড অফ থিং, উইল বি কমিউনিকেট টু আস, উইথ সাম আইডিয়া দ্যাট–– প্লিজ গো এহেড- দিস ইজ দ্য রেঞ্জ।
বিবিসি বাংলা: সরকার আপনাদের জানাবেন যে এই সময়ের মধ্যে ভোট হতে পারে। সেটা কী এখনো জানাননি?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: আপনি যেমন জানেন, আমিও তেমনি জানি যে আইদার ফেব্রুয়ারি, মানে রমজান মাসের আগে অথবা এপ্রিলে। যেটা সব সময় উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলে আসছেন। সেটাই জানি, যেটা আপনি জানেন- দেশবাসী জানে, ওনার বক্তব্য থেকে। সেটা আমিও জানি।
বিবিসি বাংলা: সরকার থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে যে আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনীকে তারা প্রস্তুত হতে বলেছেন, সরকার আপনাদের কিছু বলেননি যে কবে নির্বাচন হতে পারে বা কোন সময়ের মধ্যে ভোট হতে পারে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: না সেরকম বলে নাই। আমরা ধরে নিচ্ছি, ইট ইজ আওয়ার অ্যাসাম্পশন (আমাদের ধারণা) যে বর্তমানে যে টাইম ফ্রেম বলা হচ্ছে, আইদার আর্লি ফেব্রুয়ারি বিফোর রমাদান, অর ইট মে বি সাম টাইম ইন দ্য ফার্স্ট হাফ অব এপ্রিল। হতে পারে, এপ্রিলের প্রথম দিকে হতে পারে।
আমরা প্রথম থেকেই ডিসেম্বরকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কারণ তখন তিনি ডিসেম্বর টু জুন বলেছিলেন। এজন্য আমরা ডিসেম্বরকে টার্গেট করে- ফ্রম ডে ওয়ান উই স্টার্টেড প্রিপেয়ারিং আওয়ারসেলভ।
বিবিসি বাংলা: সেটা কবে থেকে? আপনারা যখন শুরু করলেন তখন থেকে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: হ্যাঁ তখন থেকেই আমরা শুরু করলাম। তারপর থেকে আই ওয়াজ হ্যাভিং মিটিং উইথ মাই অফিসিয়ালস হেয়ার।
বিবিসি বাংলা: আপনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করলেন তখন আপনাকে কোনো টাইমফ্রেম বা সময়সীমা নিয়ে কোনো ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে এই সময়ের মধ্যে দেওয়া হতে পারে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: না দেওয়া হয় নাই। বাট আমি ধরে নিয়েছি যে ইলেকশন তো একটা হবে। আমি প্রথমে আমার অফিসারদের সাথে বসেছি, যে-একটা ইলেকশন করতে গেলে কী কী দরকার, কী কী কাজ আমাদেরকে করতে হবে, কী কী কাজ বাকি আছে। উনারা আমাদের একটা চার্ট করে দেবেন এবং কোন কাজ করতে কতদিন লাগে সেটা দেবেন। তখন তো আমরা জানি না ডিসেম্বর বা অন্য কোনো টাইমলাইন তো তখনও আসে নাই।
বিবিসি বাংলা: ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে আপনার প্রস্তুতি কবে থেকে শুরু করলেন?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: যখন থেকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন; সম্ভবত গত বছরের ১৬ই ডিসেম্বর উনি যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তখন আমি মৌলভীবাজারে ছিলাম। ওখানে বসেই আমি শুনলাম যে ‘আইদার ইট উইল বি ইন ডিসেম্বর, অর ইন জুন’- এটা শুনলাম উনার বক্তব্যের মধ্যে।
বিবিসি বাংলা: শোনার পর ভাবলেন ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: হ্যাঁ, এইটা শোনার পরে প্রস্তুতি বাড়িয়ে দিলাম আমরা, ডিসেম্বরকে ধরে ব্যাক ক্যালকুলেশন করে। কারণ ইলেকশনের ডেট থেকে অন্তত দুই মাস আগে আমাদের শিডিউল ঘোষণা করতে হয় আমাদের আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুসারে।
কারণ তফসিল ঘোষণ থেকে ভোটের তারিখ পর্যন্ত যে কর্মকাণ্ডগুলো দরকার, তাতে অন এভারেজ দুই মাস না হলে পারা যায় না। যেমন ধরেন, নমিনেশন ফাইল করার জন্য সময় লাগে।
বিবিসি বাংলা: তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে দুই মাস কমপক্ষে লাগবে। আপনাদের কথায় মনে হচ্ছে সরকার থেকে আপনারা এই তথ্যগুলো গণমাধ্যম থেকে পাচ্ছেন। কিন্তু সরকার আপনাদের সাথে আলোচনা বা কিছু বলছে কি-না?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো গাইডেন্সও নাই, পরামর্শও নাই, আদেশও নাই, নির্দেশও নাই, নাথিং। আমরা অ্যাবসোলিউটলি ইন্ডিপেনডেন্টলি এই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
বিবিসি বাংলা: একটা ধারণা দেওয়া যে এই সময়ের মধ্যে হতে পারে, এটা আপনারা আনুষ্ঠানিকভাবে পাননি?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার:না পাইনি, পাইনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: কিছুদিন আগে আপনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেছেন। একটা একান্ত বৈঠক হয়েছিল, কী কথা হয়েছে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: দেখেন, আমি এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত উনার সাথে ফরমাল কোনো মিটিং হয়নি। দেখা হয়েছে ঈদের দিন বা এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠানে, ওইটুকুই। আমি মনে করলাম ওনার সাথে ফরমাল একটা দেখা করা দরকার।
এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার। কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনার জন্য আমি যাইনি। আমি প্রেসে বলেছিলাম, সৌজন্য সাক্ষাৎ অর্থ এই নয় যে সালাম দিয়ে বসে থাকলাম ৪৫ মিনিট। তারপর আবার চলে আসলাম ওয়ালাইকুম আস সালাম দিয়ে। ইট ডাজ নট মিন দ্যাট।
অভিয়াসলি, উনি হেড অব দ্য গভমেন্ট, উনার জন্য একটা নির্বাচন সামনে আছে, যে নির্বাচনটা আমাকে ডেলিভার করতে হবে, ইসিকে ডেলিভার করতে হবে। অভিয়াসলি, নির্বাচনটা আলোচনার মধ্যে এসে গেছে। শুধু উনি জানতে চেয়েছেন যে আমাদের প্রিপারেশনের অবস্থা কী, স্ট্যাটাসটা কী, আমরা কতদূর এগিয়েছি, প্রস্তুত কী রকম।
উনি জানতে চেয়েছিলেন, আমি উনাকে ডিটেইল জানিয়েছি আমি কী কী করেছি, কী কী করতেছি, কী কী বাকি আছে বা আমাদের টাইমলাইনটা কী, কখন আমরা শেষ করতে পারবো। আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কিত একটা ব্রিফ (ধারণা) ওনাকে (প্রধান উপদেষ্টাকে) আমি দিয়েছি। কারণ এটা ছিল মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎকার।
বিবিসি বাংলা: আপনি দেখা করতে চেয়েছিলেন, নাকি উনি দেখা করতে চেয়েছিলেন?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: অ্যাকচুয়ালি, উনি কোনো আমাদের ডাকেননি। আমাদের তরফ থেকে যোগাযোগ করে উনার অফিসের সাথে, জাস্ট কার্টেসি কলের জন্য। কারণ, আমরা মনে করতেছিলাম যে এইখানে আরও কারণ আছে। অনেক ধরনের বক্তব্য আসতেছিল, সাংবাদিকরাই জিজ্ঞেস করতেছিল সরকারের সাথে যোগাযোগ নাই? কোনো ধরনের কানেকশন নাই? মনে হচ্ছিল এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা। আমি দেখলাম যে অন্তত দেখা করলে এই জিনিসটা অ্যাভয়েড করা যাবে। আমরা চেয়েছিলাম- উনি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টাইম দিয়েছেন। ওইভাবে গেছি আরকি।
বিবিসি বাংলা: আপনি বলছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে উনি জানতে চেয়েছেন, কিন্তু আপনি জানতে চাননি যে নির্বাচন কবে হতে পারে? কারণ সেই ধারণা তো সরকারকে দিতে হবে।
নাসির উদ্দিন: আমি জানতে চাই না। কারণ, আমি তো উনার পজিশন দেখতেছি। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল একটু আর্লি (দ্রুত) চায়, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল একটু পরে চায়। এসব নিয়ে নানা রকম প্রবেলেম আছে।
আমি মনে করলাম উনার কাছ থেকে ডেট নিয়ে আমার কাছে অ্যাডভাইজাবেল হবে না। সে জন্য টাইম নিয়ে কিছু বলি নাই। টাইম নিয়ে তো উনি ওপেনলি, পাবলিকলি বলতেছেন। উনার পাবলিক স্টেটমেন্ট থেকে যেটুকু আপনারা জানেন, সেটুকু আমিও জানি স্পেসিফিক ডেট সম্পর্কে। কিন্তু দুই মাস আগে, নিশ্চয়ই শিডিউল ঘোষণার আগে আমাদেরকে জানাবে। কারণ শিডিউল ঘোষণা করবো আমরাই। তখন পোলিং ডেট আমাদেরকেই ঘোষণা করতে হবে। এন্টায়ার স্কেজিউল আমাদেরকেই ঘোষণা করতে হবে।
বিবিসি বাংলা: সরকারপ্রধানের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একান্ত বৈঠক কিছুটা ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। সাধারণত হয় না..।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: দেখেন, দিস ইজ স্পেশাল টাইপ অব সিচুয়েশন, স্পেশাল টাইপ অব গভমেন্ট। এটা নিউট্রাল গভমেন্ট। আমিও নিউট্রাল। পলিটিক্যাল গভমেন্ট যখন পাওয়ারে থাকে, তখন হেড অব দ্য গর্ভমেন্টের আন্ডারে একটা দল থাকে। অভিয়াসলি চিফ ইলেকশন কমিশন যখন দেখা করবে, এটা একটা কোয়েশ্চেনাবেল। কারণ উনি তো একটা দলের নেতৃত্বে আছেন। তখন একটা পার্টিকুলার দল বেনিফিট পেতে পারে। এজন্য সাধারণত ডিসকারেজ করা হয়। কিন্তু এখন বাংলাদেশে যে সিচুয়েশন, তাতে সরকার প্রধানের নিজস্ব কোনো দল নাই। উনি কোনো দলের পক্ষের নয়। সুতরাং এখানে আমিও নির্দলীয়ভাবে কাজ করবো। উনিও নির্দলীয়। আমি মনে করলাম এখানে কোনো অসুবিধা থাকার কথা না।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এটাকে আপনি সমস্যা মনে করেননি?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: না না, আমি একদমই সমস্যা মনে করিনি।