বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে খুবই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক মনিটর, ডাক্তার ও নার্স রাখা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতিটি মুহুর্ত সক্রিয় আছে যাতে করে দ্রুতই তার অবস্থা আরও স্থিতিশীল হয়ে ওঠে,” বলছিলেন একজন চিকিৎসক। খবর: বিবিসি বাংলা।
হাসপাতালে ‘খুব নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ খালেদা জিয়া, কেমন আছেন তিনি- এই শিরোনামে এক ঘন্টা আগে পরিবেশিত বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে এবারে হাসপাতালে নেয়ার পর তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলটির ভেতরে বাইরে উদ্বেগ তৈরি হলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আজ তার অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে কিংবা স্থিতিশীল আছে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে উদ্ধৃত করে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের কেবিনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন’।
চিকিৎসকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি নতুন করে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তার হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়েছে, যার চিকিৎসা এখন চলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে তার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়েছে। দেশজুড়ে দলের বিভিন্ন ইউনিট তার জন্য দোয়া চেয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করছে। সামাজিক মাধ্যমে দলের মিডিয়া সেল থেকে পোস্ট দিয়ে বলা হয়েছে, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি দেশবাসীর কাছে তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন”।
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনকে দেশি বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক পর্যালোচনায় রাখা হয়েছে এবং এই দলের সাথে কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে সংযুক্ত আছেন তারেক রহমানের স্ত্রী ডাঃ জুবাইদা রহমান।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিএনপি নেতা ও চিকিৎসকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মিসেস জিয়ার হার্টে স্টেনট (যা রিং বলে পরিচিত) ও পেসমেকার থাকার কারণে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া কিডনিতে সমস্যা থাকার কারণে সেটিও এসেসমেন্ট করছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম, এক্সরের পাশাপাশি রক্ত ও কফ পরীক্ষাসহ নিয়মিত যেসব পরীক্ষা করা প্রয়োজন সেগুলো করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার পর রোববার রাতে তাকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরেই লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। হাসপাতালে নেয়ার পর এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছিলেন যে, “উনার একসাথে হার্ট এবং ফুসফুস দুটোই এ্যাট এ টাইম আক্রান্ত হওয়াতে ওনার খুব রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস হচ্ছিল। সেজন্য এখানে আমরা খুব দ্রুত এনেছি”।
একুশে নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। পরে শ্বাসকষ্ট হলে রোববার তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেয়া হয়। আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলো আদালত, তারপর থেকে প্রথমে কারাগারে বিশেষ ব্যবস্থায় ও পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরে হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই নির্বাহী আদেশে বিশেষ শর্তে মুক্তির পর তিনি গুলশানের বাসায় উঠেন।
ঢাকায় নিজের বাসায় থাকা অবস্থাতেই ২০২১ সালের মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। তখনো শ্বাসকষ্টে ভোগার কারণে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের জুনে তার হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। তখনো তিনি মূলত হার্ট, কিডনি ও লিভারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছিলেন, যা তার শারীরিক অবস্থাকে জটিল করে তুলেছিলো।
এর আগে থেকেই তার হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। আগে একটা রিংও পরানো হয়েছিল। এছাড়া ২০২৪ সালের জুনে পোর্টো সিস্টেমেটিক অ্যানেসটোমেসির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে। এদিকে মিসেস জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন না হবার কথা বললেও দলের ভেতরে ও বাইরে উদ্বেগ বাড়ছে। সারাদেশে দলটির নেতা কর্মীরা বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের দলীয় প্রধানের খোঁজ নিচ্ছেন বলে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন।