আসিন। কিন্তু তাঁরা কি পত্রিকাকে মমতার দৃষ্টিতে দেখেন?
আবার হলফ করে কী বলা যাবে, বেঁচে থাকলে
কাজী নজরুল বরিশালের পত্রিকায় এখন কবিতা লিখতেন?“
আলম রায়হান:
রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্র নানান ঘাত-প্রতিঘাতে বিকশিত হয়, গণমাধ্যও তাই। জানা কথা, সংবাদপত্রকে বলা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। রাষ্ট্র ও গণমাধ্যমে যারা ভুমিকা রাখেন তাদেরকে বিশেষ ধরনের দক্ষ হতে হয়। আর এই দক্ষতা কোন প্রডাক্ট নয়, প্রসেস। ফলে মেশিনে বানানো যায় না। দীর্ঘ পথ চলায় নানান যত্নে গড়ে ওঠে। কিন্তু এই যত্নেরই সম্ভভত আকাল চলছে। এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথকে সম্বোধন করে আল মাহমুদের কবিতাটি মনে হচ্ছে খুবই প্রসঙ্গিক, “এ কেমন অন্ধকার বঙ্গদেশ উত্থান রহিত/ নৈশব্দের মন্ত্রে যেন ডালে আর পাখিও বসে না।/ নদীগুলো দুঃখময়, নির্পতগ মাটিতে জন্মায়/ কেবল ব্যাঙের ছাতা, অন্যকোন শ্যামলতা নেই।” এ কবিতায় সেই সময়ের সর্বগ্রাসী আকালের কথা বলেছেন শুদ্ধ কবি আল মাহমুদ। বলাবাহুল্য, গণমাধ্যমে আকালের তো মহামারি চলছে। এই সময়ে নতুন ব্যবস্থাপনায় যাত্রা করেছে দৈনিক বাংলাদেশ বাণী। জটিল সময় কঠিন যাত্রায় দৈনিক বাংলাদেশ বাণী বছর পেরিয়েছে। এ যাত্রার বছরপূর্তি ১ নভেম্বর। নব উদ্যমের ছাপ পত্রিকাটিতে কিছুটা হলেও চোখে পড়ে। এটি শান্তির। কিন্তু চলমান সময় এবং পারিপার্শিক অবস্থা ততটা প্রশান্তির বলে মনে হয় না। বরং সময়টা বৈরী বলেই মনে হচ্ছে।
নতুন ব্যবস্থাপনায় দৈনিক বাংলাদেশ বাণী’র বছরপূর্তি ১ নভেম্বর। নব উদ্যমের ছাপ এরমধ্যেই পত্রিকাটিতে বেশ স্পষ্ট। এটি শান্তির। কিন্তু চলমান সময় ও পারিপার্শিক অবস্থা ততটা প্রশান্তির বলে মনে হয় না। বরং সময়টা বৈরী বলেই মনে হচ্ছে। ফলে বলা চলে, ‘জটিল সময় কঠিন চেষ্টায় দৈনিক বাংলাদেশ বাণী!’ এই জটিলতা কেবল বরিশালে নয়, পুরো বাংলাদেশেরই বাস্তবতা। জানাকথা, বৃটিশ ভারত, পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার কোন না কোনভাবে গণমাধ্যমের উপর আঘাত হেনেছে। আর ৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনীর আক্রমনের প্রধান লক্ষের তালিকায়ও ছিলো গণমাধ্যম। তখন গণমাধ্যম বলতে ছিলো কেবলমাত্র সংবাদপত্র; আর সরকারী মালিকানার রেডিও-টেলিভিশন। সংবাদপত্র অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে হানাদার পাকবাহীনি। এর অর্থ এই নয় যে, স্বাধীনতার পর সংবাদপত্র দুধের নহরে সন্তরণ করেছে। বরং উল্টোটাই হয়েছে। যার প্রকট সূচনা হয়েছে মুজিব সরকারের আমলে। বাইট পওয়ারে প্রথম আঘাত হানেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি চারটি পত্রিকা রেখে বাকী সবগুলো বন্ধ করে দেন। এরপরও সংবাদপত্রের নখ-দন্ত অবশিষ্ট ছিলো। পরের সরকারগুলো নানান ভাবে গণমাধ্যমকে নিস্তেজ করার কাজটি ক্রমাগতভাবে করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় সংবাদ পত্র এখন অনেকটাই জিন্দা লাশ!
মুজিবের পর গণমাধ্যম বিরোধী অপকর্মে দ্বিতীয় নামটি হচ্ছে বে-না-হুদা, অর্থাৎ ব্যারিস্টার নাজমূল হুদা। খালেদা সরকারের তথ্যমন্ত্রী থাকাকালে বে-না-হুদা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নকে সফলভাবে দ্বিধাবিভক্ত করতে পেরেছিলেন। এর মাধ্যমে সাংবাদিক মহলে অনৈক্য ও সংবাদপত্র জগতের যে সর্বনাশের সূচনা হয়েছে তাকে মুজিবীয় কান্ডের চেয়ে মোটেই ছোট ভাবার কোন কারণ নেই। এর ধারাহিকতায় প্রতিটি সরকারের আমলেই এক শ্রেনীর কর্মকর্তা প্রথমে প্রজনন বৃদ্ধিকে ধ্যানজ্ঞাণ করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় বরিশালের সাবেক ডিসি হাবিবুর রহমান বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘মুরগীর ব্যাপারিও পত্রিকার মালিক হতে চায়’। এদিকে আমার জানামতে লঞ্চের ক্যাবিন বয়ও সাংবাদিকের জার্সি ধারণ করেছেন। কাকের ময়ুর পুচ্ছ যেমন। সামগ্রিক অবস্থায় পরিস্থিতি যখন খুবই ঘোলাটে হয়েগেছে তখন ‘নেড়ী কুকুর নিধন’ প্রয়াসে যেনো ঘুম ভাঙ্গলো কুম্ভকর্নের। কিন্তু এখানেও আছে অন্য খেলা। প্রচলিত ভাষায় যাকে বলা হয় বাণিজ্য। পাশাপাশি সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজীকে একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার কৌশলী খেলা তো আছেই। এই প্রক্রিয়ায় সাংবাদিক সৃষ্টির ক্ষেত্রও বিনষ্ট করে দেয়ার খেলা রয়েছে।
প্রত্যাশিত ছিলো, সংবাদপত্রের সুষ্ঠু ধারাকে সরকারের পৃষ্টপোষকতা। আর সিনিয়র সাংবাদিকদের উচিত ছিলো, পরবর্তী প্রজন্ম তৈরিতে অবদান রাখা। বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে। কিন্তু এর কোনটিই দৃশ্যমান নয়। অথচ জেলা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার উদাহরণ আছে অসংখ্য। আরো পরিস্কার করে বলা চলে, জেলা-উপজেলা-গ্রাম থেকেই সাংবাদিক তৈরী হয়। এমনকি এই তালিকায় আছেন কিংবদন্তীর সাংবাদিক আমাদের বরিশালেরই আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীও। বরিশাল থেকে প্রকাশিত হিতৈষী পত্রিকা দিয়ে তার লেখক জীবন শুরু। আর সাংবাদিকতা শুরু বরিশালেরই নকিব দিয়ে, ১৯৪৬ সালে।
জানাকথা, পাখির সঙ্গে তেলাপোকার তুলনা চলে না। তবে দুটোই ওড়ে। পাখি ওড়ে আকাশে, তেলাপোকা এখান থেকে ওখানে। এ বাস্তবতা আমলে নিয়ে বলা চলে, আমার শুরুও বরিশালেই ১৯৭৭ সালে, জেলা পরিষদের পত্রিকা পাক্ষিক বাখেরগঞ্জ পরিক্রমা দিয়ে। সম্পাদক ছিলেন ইয়াকুব আলী। নিজের খেয়ে বনের মোশ তাড়াবার মতো সম্পাদকের প্রধান সহযোগী ছিলেন বরিশাল কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল স্যার, মোজাম্মেল হক। তিনি আমাকে প্রধান ‘চ্যালা’ হিসেবে বেছে নিয়েছেন কলেজের দেয়াল পত্রিকা ‘তমাল’-এর সূত্রে। মোজাম্মেল স্যারের মাধ্যমেই পরে প্রবাসী পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছি। তখন এ পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো খুলনা থেকে। মালিক-সম্পাদকের নাম সম্ভবত মোস্তাফিজুর রহমান। এক পর্য়ায়ে তিনি পত্রিকাটি বরিশালে নিয়ে আসেন। এর আগেই আমি বরিশাল ছেড়ে ঢাকা চলে যাই ১৯৭৯ সালে। ঢাকায় শুরু সাপ্তাহিক জনকথা দিয়ে ১৯৮০ সালে। এরপর ২০১৮ সালে বরিশালে ফিরে আসার চেষ্টা। কিন্তু তেমন সফল হওয়া যায়নি। আমার প্রসঙ্গ থাক। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে শুধু এইটুকু বলি, জেলাপরিষদের ব্যবস্থাপনায় পাক্ষিক বাকেরগঞ্জ পরিক্রমার মাধ্যমে অনেকেই লেখালেখী ও সাংবাদিকতার জগতে এসেছেন। সেই বাকেরগঞ্জ পরিক্রমা অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে।
পিআইবি’র আয়োজনে স্মৃতিতর্পন অনুষ্ঠানে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিকতার নানান প্রসঙ্গের পাশাপাশি বরিশাল প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। তার এই স্মৃতিকথা ‘অগ্রজের সঙ্গে একদিন’ নামে পুস্তক আকারে পিআইবি প্রকাশ করে ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে। বরিশাল প্রসঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, “বরিশালে এখন অনেক দৈনিক কাগজ। তখন দুটি কাগজ ছিলো। বরিশাল হিতৈষী এবং নকিব। দুটিই অত্যন্ত উন্নত মানের কাগজ। নকিবে একসময় কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা লিখেছেন। সেদিক থেকে আমি নিজকে খুব ধন্য মনে করি যে, বরিশালে ঐ সময় আমি ছিলাম।” কেবল পত্রিকার মান প্রসঙ্গ নয়, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার সময়ে জেলা প্রশাসনের উচ্চ মান প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “বরিশাল তখন অত্যন্ত সমৃদ্ধ শহর ছিল। এখন বড়বড় অট্রালিকা হয়েছে। কিন্তু তার কালচারের মান অনেক নেমে গেছে। তখন বরিশালের ডিসি ছিলেন অন্নদা শঙ্কর রায়। বরিশালে মুনসেফগিরি করতেন অচিন্ত কুমার সেনগুপ্ত।…ডিসিকে বলা হত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট(ডিএম)। ডিএম লজে প্রত্যেক পূর্ণিমার রাতে একটি আসর বসতো। বড়-বড় সাহিত্যিকরা আসতেন। তারাশঙ্কর, মনোজ বসু। আবুল কালাম শামসুদ্দীনও আসতেন। সেই সময়ের একটি মজার কথা বলি। অনেকে হয়তো বিশ্বাস করবেন না। জীবনান্দ দাশ বললেন, তার যে বিখ্যাত কবিতা বনলতা সেন এটির সুরটি, ছন্দটি তিনি কোরআন থেকে নিয়েছেন। শুনে তো সবাই অবাক। উনি বললেন, তোমরা জান না। আমার এক ছাত্র একদিন সুরা নাস পড়ছিলো। ‘কুল আউজুবি রাব্বিন নাস, মালিক ইন নাস, ইলাহিনাস।’ চুল তার কবেকার অন্ধকার’। এটি আমার চিরকাল মনে থাকবে। আমি কলকাতায়ও বলেছি। ওরা বিশ্বাস করেনি”।
কলকাতার দাদারা আমাদের এপারের অনেক কিছুই বিশ্বাস করেন না। আবার কোন বিষয় আছে, যা না ঘটলেও ঘটেছে বলে বিশ্বাস করে কাতর হন। যাক সে অন্য প্রসঙ্গ। চলমান প্রসঙ্গ হচ্ছে, ডিসি লজ অথবা বাংলো প্রসঙ্গে যে গৌরবের কথা গাফ্ফার চৌধুরী তুলে ধরেছেন তা কি চলমান? আমার জানা নেই। তবে বরিশালের কয়েকজন ডিসির কাহিনী আমি জানি। একজনের বাংলোতে নিয়মিত নিশি কুটুম হতেন ইরানী নামে বরিশালেরই এক সুন্দরী। তার সঙ্গে পরে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। তখন উল্লেখিত ডিসি যুগ্ম-সচিব এবং ঢাকায় সরকারী একটি সংস্থার উচ্চ পদে আসীন। এ নিয়ে আমি সাপ্তাহিক সুগন্ধায় রিপোর্টও করেছিলাম। কিন্তু যুগ্ম-সচিবের স্ত্রীর আকুল কান্ন্নাকাটি উপেক্ষা করে বেশী দূর আগানো যায়নি। আর একজন ডিসির কাহিনী জানি। তিনি ললনার আসর বসাতেন হোটেল পার্কে। এবং ঢাকা থেকে আগত এবং বরিশালের বেশ কয়েকজন কামিনির সঙ্গে হোটেল স্যুটে অনেক জামিনি কাটিয়েছেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রায় ফেঁসে যাবার অবস্থায় পড়েছিলেন। কিন্তু বাঁচিয়ে দিয়েছেন সেই সময় বিএমপি’র কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মাহফুজুর রহমান। তারা ছিলেন পূর্ব পরিচিত। পরে আর এক ডিসি‘র পুকুর চুরির কাহিনী চাউর হয়েছে বরিশাল ছাড়ার সাথেসাথে। এ বিষয়টি সবাই জানে। পরে কৃষিমন্ত্রণালয়ে কিছুদিন ডিএসগিরি করার পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুকের পার্টনার হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। বরিশালের সাবেক এই ডিসি এতোই করিৎকর্মা ছিলেন যে, জাহিদ ফারুক শামীম তাকে পানি সম্পদ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক করে প্রধান কালেক্টরের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যেখানে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘থিপ অফ বাগদাদ’ হিসেবে। এবং শেখ হাসিনার গনেশ উল্টানোর সঙ্গেসঙ্গে তার গনেশও উল্টে যায়। তাকেও পালাতে হয়েছে। অথচ এরা ডিসির মসনদে থাকাকালে অনেক নীতি কথা বলেছেন। ভাবখানা জমিদার পুত্রের! ডিসিরা জেলায় অনেক দায়িত্বের অধিকারী। তারা সংবাদপত্রের অভিভাবকের আসনেও আসিন। কিন্তু এরা কি পত্রিকাকে মমতার দৃষ্টিতে দেখেন? আবার হলফ করে কী বলা যাবে, বেঁচে থাকলে কাজী নজরুল এখন বরিশালের পত্রিকায় কবিতা লিখতেন?
আরো কথা আছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তো আমাদের দেশে সবকিছুই ওলট-পালট হয়ে যাবার নগ্ন ধারার পালে জোর হাওয়ার চাপ বেশ স্পষ্ট। এর প্রভাব থেকে গণমাধ্যম মোটেই মুক্ত নয়। বরং বেশি আক্রান্ত বলেই মনে হচ্ছে। ফলে সংবাদ পত্রের অবস্থা খুবই নিদারুন। এদিকে করোনাকালে সংবাদপত্রের তলানীতে নামা পাঠক সংখ্যার পারদ আর উপরে ওঠেনি। এর নানাবিধ কারণ আছে। অন্যতম হচ্ছে, নানান তরিকায় সংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণ। এ ক্ষেত্রে হাসিনা আমলে তিনটি তরিকা ছিলো। এক, ছুড়ে দেয়া হাড্ডি নিয়ে খুশ রহো! দুই. নতজানু থাকো। তৈল নিয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখো ক্ষমতার যুগল পদে। তিন. না হলে পদতলে পিষ্ট হও, নরাধম! ধারণা করা হয়েছিলো, ৫ আগস্টের পর সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের পূর্ণ স্বাধীনতা না আসলেও পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। কিন্তু তা কি হয়েছে? বরং অবনতি ঘটেছে বলেই মনে হচ্ছে। এনসিপি আহবায়ক নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা হিসেবে তথ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকাকালে গণহারে সাংবাদিকদের এক্রিটিডিশন কার্ড বাতিল করেছেন। এরপর বন্ধ আতংক সংক্রমিত হয়। অবশ্য পরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বায়িত্বে এসে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি হলো কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করা হবে না’। তার এ বক্তব্যে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছিলো। তবে তা জোনাকির আলোর চেয়ে খুব বেশি মনে হয় না। আর তথ্য উপদেষ্টা গণমাধ্যম বন্ধ না করার কথা স্পষ্টভাবে বলায় কয়েকদিনের মধ্যেই ময়মনসিংহের ডিসি বাহাদুর এক খোঁচায় ১১টি পত্রিকার ডিক্লারেশন খেয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি এখানেই থেমে নেই। বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় এই কান্ডের আয়োজন চলছে বলে জানাগেছে। এ ব্যাপারে কোনকোন ডিসি ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছেন বলেই মনে হচ্ছে। তাঁরা খড়গহস্ত, একেবারে রণচন্ডি! কিন্তু তাঁরা কি ভেবে দেখছেন, রানীখেতে আক্রান্ত খোপের মুরগী অথবা তরকা আক্রান্ত গোয়ালের গরুর উপর হম্ভিতম্ভি করছেন তাঁরা! বিপরীতে অসংখ্য বন মোরগ অথবা বন গরু নিয়ন্ত্রণের বিন্দুমাত্র ক্ষমতা কি কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যন্ত বখেদমতে হুজুরে আলাদের আছে? নেই তো! ফলে ‘ঘরে বৌ কিলানো’ প্রবচনে নিমজ্জিত হয়ে লাভ কী?
সামগ্রিক বিবেচনায় খুবই বৈরী সময়ে দৈনিক বাংলাদেশ বাণী নবযাত্রায় কঠিন দৌড়ে মাত্র এক বছর অতিক্রম করেছে। এর আগে অন্তত সাড়ে সাত বছর পেরিয়ে এসেছে এই পত্রিকাটি। পত্রিকার বর্তমান প্রকাশক শাহে আলম অনেক স্বপ্ন দেখেন বলে আমার মনে হয়েছে একাধিক আলাপচারিতায়। বলাবাহুল্য, পূর্বের প্রকাশক মঈন তুষারও অনেক স্বপ্ন নিয়েই পক্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন এবং অর্ধযুগের বেশী সময় উজানে দাড় টেনেছেন। কাজেই স্বপ্ন দেখাই শেষ কথা নয়। এরপরও বর্তমান প্রকাশক শাহে আলম ভাইর স্বপ্ন দ্বারা আমি বেশ প্রভাবিত বলেই মনে হচ্ছে। যে কারণে বরিশালে আমার দুই ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক মামুনুর রশিদ নোমানী ও মামুন-উর-রশিদের সাথে আলাপচারিতায় কয়েকবার বলেছি, ‘বরিশালের আগামী দিনের প্রথম আলোর খবর কি?’ হতে পারে, মরহুম লিটন বাশারের মামার প্ররোচনায় ২০১৮ সাল থেকে বরিশালে দৈনিক দখিনের সময় নিয়ে নিরন্তর চেষ্টায় সফল হতে নাপারার বেদনার কারণে অন্যের সাফল্য দেখার জন্য আমি একপ্রকার মোহাবিষ্ট। প্রসঙ্গত, অনেক সময় মানুষ নিজে ব্যর্থ হলে অন্যের মধ্যে সাফল্য খোঁজে। একই কারণে সন্তানের সাফল্যের জন্য পিতা ব্যাকুল হন। আবার উল্টো প্রবনতার মানুষও আছে। তারা ভাবেন, আমি যখন গেছি, তো সবাই যাক! শেষ কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ বাণীর জন্য নিরন্তর শুভকামনা। অব্যাহত থাক অগ্রযাত্রা। এবং পত্রিকাটি দ্রুত ‘বরিশালের প্রথম আলো’ হয়ে উঠুক- এমন কামনা করি। কিন্তু কামনাই কী সব? তা তো নয়। তারপরও কথা আছে। তা হচ্ছে জটিল সময়ে কঠিন চেষ্টার জন্য ধন্যবাদ তো পেতেই পারেন বাংলাদেশ বাণী’র কর্তৃপক্ষ এবং সংযুক্ত সকলে।
লেখক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
# দৈনিক বাংলাদেশ বাণীতে প্রকাশিত, ১ নভেম্বর ২০২৫। শিরোনাম, ‘জটিল সময়ে কঠিন চেষ্টায় বাংলাদেশ বাণী’