বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ঠিক কবে হবে, এই প্রশ্ন এখনাে অমীমাংসিত। নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে সন্দেহ, সংশয় তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ এবং নিজের নিরপেক্ষতার প্রশ্নেও জবাব দিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা না পারার প্রশ্ন, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। বিবিসি বাংলার পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো।
বিবিসি বাংলা: দু মাস আগে আপনারা জানলে আপনারা তফসিল ঘোষণা করবেন। তার মানে আপনারা দু’মাস আগেই জানবেন? কারণ সাধারণত যেটা দেখা যায় কারণ নির্বাচনের ছয় মাস আগে একটা রোডম্যাপ দেওয়া হয়। রোজার আগে নির্বাচনের একটা কথা বলা হচ্ছে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি। সেক্ষেত্রে সময় খুব বেশি নেই। সেই রোডম্যাপের ব্যাপারে আপনারা কিছু ভেবেছেন?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: দুই মাস আমার সময় দরকার। যেদিন তফসিল ঘোষণা করবো তার থেকে দুই মাস সময় দরকার, টিল দা পোলিং ডে (ভোটের দিন)) পর্যন্ত। এটার মানে এই নয় যে- যেদিন ঘোষণা করবো ওইদিন সকাল বেলা আমাকে জানাইলো আর আমি অনএয়ারে চলে গেলাম। বিষয়টা সে রকম না। দুই মাস মিনিমাম দরকার তো। নিশ্চয়ই উনারা আগে জানাবেন। আমার তো ঘোষণার জন্যও একটা প্রস্তুতি দরকার। এর মধ্যে তো ইলেকশনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে ফেলবো, ইনশাআল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে,। আপনারা কি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যদি হয় আমাদের তরফ থেকে আমরা প্রস্তুত। আমরা ওভাবে করতে চাই, উনারা যে তারিখে পোলিং ডেট চান, যেদিন ভোট হয়, সেদিন যাতে আমরা একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দিতে পারি, সেই লক্ষ্যেই আমরা প্রস্তুতিটা নিচ্ছি।
বিবিসি বাংলা: কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ এখন নেই, এটার বিষয়ে আপনার কী মত?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: অ্যাকচুয়ালি রাজনীবিদদের বক্তব্যের বিষয়ে আমরা গাইডেড না। রাজনীতিকরা নানা ধরনের কথাবার্তা বলে। কোনো কোনো দল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলে, পরে আবার ব্যাক ট্র্যাক করে বলছে যে সংস্কারের আগে ভোট হতে পারবে না। নানা ধরনের কথা বলে। এইটা হলো রাজনৈতিক বক্তব্য।
বিবিসি বাংলা: তারা আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির কথা বলছেন, মব ভায়োলেন্স বা দলবদ্ধ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেটার কথা বলছেন। এর মাঝে নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: চ্যালেঞ্জিং হবে। বাট ইট ইজ পসিবল। চ্যালেঞ্জিং, কারণ এখন তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অগাস্টে যা দেখছিলাম বা গত বছরের আটই অগাস্টে যা দেখছিলাম অনেক ইম্প্রুভ করে গেছে না? অনেক ইম্প্রুভ করছে। ধরেন নির্বাচন যখন হবে, তখন ওই সময়ের মধ্যে দেখবেন যে সব কিছু শান্ত, অসুবিধা হবে না। বিশেষ করে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল ছোট হোক বড় হোক, তারা কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে আসছে প্রথম থেকেই। কেউ বলে নাই যে আমি আগের মতো নির্বাচন চাই। জনগণ যদি আপনার সাথে থাকে, কোনো রকমের কোনো মব বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আপনাকে তো ক্ষতি করতে পারবে না।
বিবিসি বাংলা: জনগণ তো মব চায় না। কিন্তু সেটা তো নিয়ন্ত্রণে আসেনি এখন পর্যন্ত। দেখা যাচ্ছে তো এটা হচ্ছে নিয়মিত।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: আমি কনফিডেন্ট যে ইলেকশন যখন হবে, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ব্রিফিং দিয়েছেন। শুধু পুলিশকে নয়, উনি তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর্মি থেকে আরম্ভ করে, আর্মি কীভাবে ডেপ্লয়মেন্ট হবে, বিজিবি কীভাবে হবে ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্ন করেছেন। এই চ্যালেঞ্জেসগুলো সামনে রেখে কিন্তু সরকারের যেমন তার নিজস্ব প্রস্তুতি চলছে, আমাদেরও কিন্তু একই রকম প্রস্তুতি চলছে। এই সব চ্যালেঞ্জগুলো কিন্তু আমাদের মাথায়ও আছে। এগুলো অ্যাড্রেস করার জন্য আমরা প্রস্তুত। সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নেবো।
বিবিসি বাংলা: আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আপনারা মনে করছেন না খুব একটা সমস্যা হবে? নির্বাচনের জন্য এটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার: আমি মনে করি যে নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি, একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন, সেটার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নট বি প্রবলেম, আমি মনে করি।