যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার। ইতোমধ্যে দেশটি ১৫ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেসব বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, তাদের ফেরত পাঠানোর হচ্ছে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।
আজ শুক্রবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে এই ব্যক্তিদের বহনকারী বিশেষ চার্টার ফ্লাইট লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দর থেকে ইসলামাবাদ হয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডনের কনসুলার শাখা এসব অবৈধ অভিবাসীর দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্যে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছিল। যারা দেশে ফিরে আসছে, তাদের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ বৈধ পাসপোর্টধারী, কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টধারী।
যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে অবৈধ অভিবাসীরা ফেরত আসছেন এবং এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানাগেছে। ফেরত আসার তালিকার মধ্যে রয়েছেন, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, লাকসাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ঢাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে নারীও রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ জনের কোনো পেশা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ দেশটিতে তারা নির্দিষ্ট কোনো কাজে নিয়োজিত নেই। এ ছাড়া কয়েকজন সে দেশে ওয়েটারসহ নানা কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং শিক্ষার্থীও এ তালিকায় রয়েছেন।
অভিবাসন বাস্তবতায়
নাজুক বাংলাদেশ
বিশ্বজুড়ে অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অভিবাসীদের জন্য নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে বলছেন কুটনৈতিকরা। তাদের মতে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতে আরও বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ এ বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা উচিত।
দেশে গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য ভিসা ইস্যু কমিয়েছে। দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোতেও ভিসা প্রাপ্তির হার কমেছে এবং উন্নত দেশগুলোও তাদের অভিবাস নীতি ক্রমেই কঠোর করছে এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে অভিবাসীদের নিয়ে নানা আন্দোলন চলছে যুক্তরাজ্যে। অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে তৎপর দেশটির সরকার। এ অবস্থায় নথিপত্রবিহীন অনেক অভিবাসীকে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে। অনেকে আবার শরণার্থীর আবেদন করেছেন ব্রিটিশ সরকারের কাছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছর যুক্তরাজ্যে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসন প্রত্যাশীর আবেদনপত্র জমা পড়েছে। বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না অভিবাসীবিরোধীরা। তারা বলছেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের চেয়ে অভিবাসী সংকট এখন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে অবস্থানরত দুইশোরও বেশি বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়।
এমন সংকট নিয়ে জানতে চাইলে সরকারের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, বাংলাদেশিদের অনেকেই ভুল তথ্য দেওয়ায় অভিবাসন নীতি তাদের কাছে কঠোর হয়ে যায়। অনেকেই অবৈধ উপায়ে বিদেশ যান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিদেশের মাটিতে অবৈধ উপায়ে পা দিলে ফেরত আসার সম্ভাবনা থাকবেই। এসব জেনেও অনেকেই যান। এটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ের সচেতনতা দরকার।
বিশ্বে বর্তমান অভিবাসন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তি কমছে কেন জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিবাসন পরিস্থিতি নাজুক দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্যই। তারা সঠিক কাগজপত্র ছাড়া মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে ভিসা আবেদন করে। এ ছাড়া বিদেশের মাটিতে কেউ কেউ উচ্ছৃঙ্খল ও অন্যায় কাজও করে, যা দেশের অভিবাসন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’