• ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোলার কুঞ্জেরহাটে নিয়মের বাইরে অধিকাংশ প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

দখিনের সময়
প্রকাশিত নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১৭:২১ অপরাহ্ণ
ভোলার কুঞ্জেরহাটে নিয়মের বাইরে অধিকাংশ প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সংবাদটি শেয়ার করুন...
গাজী তাহের লিটন, ভোলা:
ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বৃহত্তম ব্যবসায়িক বাজার হিসেবে কুঞ্জেরহাটের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেক মানুষের বসবাস। সরাকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এখানে রয়েছে ব্যাংক, বীমা ও বেশকয়েকটি এনজিও। এখানে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত স্কুল ও মাদরাসা রয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক। এরপরও কেন এতো প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান! এ বিষয়ে আলোচনা ও সমালোচনার অন্ত নেই। এরপরও এখানে গড়ে উঠছে নতুন, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে এতোসব প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানাদিক নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সচেতন মহল।
প্রাপ্ত তথ্য ও অনুসন্ধানে জানাযায়: দেশের প্রাইভেট শিক্ষা ব্যবস্থা হলো একটি মিশ্র ব্যবস্থা। এখানে অধিকাংশ অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদেরকে দুটো কারণে দিয়ে থাকেন। এক. যাদের অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে, দুই. যারা সন্তানের মেধা, মনন ও নৈতিকতা বিকাশের চেয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন জিপিএ ৫ প্রাপ্তির আশায়। প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে খুব ভালোভাবে। এরমধ্যে প্রবাসীদের সন্তানরাই বেশি প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ে থাকে। এখানে প্রবাসী বাবা যতোটা উদাসীন, ততোটাই অসহায় হয়ে পড়েন স্থানীয় আত্মীয়স্বজন বা, অভিভারকদের কাছে। তাদের পরামর্শেই প্রাবাসীরা মোটা অংকের টাকা খরচ করে পড়ান প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে। ভালো ফলাফল বা, জিপিএ ৫ পেলেই তারা খুশি।
এ প্রসঙ্গে ভোলার বোরহানউদ্দিনের কৃতিসস্তান ৪৪ তম সাধারণ বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত নোমান হাসান বলেন, ‘আমার পর্যবেক্ষণে আপনার প্রথম প্রশ্নের একাধিক উত্তর আছে। প্রথমত: এসব প্রতিষ্ঠান যারা পরিচালনা করেন তাদের সিংহভাগ মূলধারার কোনো চাকরির ব্যবস্থা করতে না পেরে একটা প্রতিষ্ঠান (আমি সাধারণত দোকান বলি) খুলে বসেন। দ্বিতীয়ত: ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কয়েকজন চাকরিজীবী মিলে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। তৃতীয়ত: আমাদের এই অঞ্চলের কিছু অশিক্ষিত মানুষের হঠাৎ টাকা হয়ে যাওয়া একটা বড় কারণ। তারা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে তাদের বাচ্চাকে পড়ানোটা একটা ক্রেডিট মনে করে। আর এটাকে পুঁজি করে গড়ে ওঠে ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান। চতুর্থত: এসব প্রতিষ্ঠানের কৃত্রিম ভালো ফলাফল প্রদর্শন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের রেডিমেড পাঠ ধরিয়ে দিয়ে মুখস্থ করায়; বোঝানোর কোনো বালাই নেই। এই রেডি শীট থেকে আবার পরীক্ষা নেয়। এতে শিক্ষার্থীরা ১০০ তে ১০০ নম্বর পায়, অথচ শিখে না কিছুই। কিন্তু অভিভাবকগণ এই রেজাল্ট দেখেই মনে করে তার সন্তানই সেরা!! এই কৃত্রিম  সেরা হওয়ার লড়াই এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পেছনে অনেকাংশে দায়ী। পঞ্চমত, মূলধারার প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রতি আস্থার সংকট। সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক কম, শিক্ষকদের মধ্যে অনৈক্য এবং বিদ্যমান শিক্ষকদের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে পড়াশোনার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে ঝুঁকছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘না বুঝে মুখস্থ করা বিদ্যায় বড়জোড় সার্টিফিকেট অর্জন করা যায়, মানুষ হওয়া যায় না।’
কুঞ্জেরহাট বাজারে বর্তমানে স্কুল, মাদরাসা মিলে ৩০টির অধিক. প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নুরানি, হিফয্, কওমি এবং প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। কয়েকটি মাদরাসায় মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি পুর্ণাঙ্গ স্কুল বিভাগও রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে এলাকার এমপিওভুক্ত স্কুল ও মাদরাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশংকাদনক হারে কমে গেছে। বেশি প্রভাব পডেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অধিকাংশ প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫০ থেকে ১০০ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তবে কওমি ও হিফয্ প্রাইভেট মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। এরমধ্যে কুঞ্জের হাট নুরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য। এই মাদ্রাসার প্রধান হলেন হাফেজ হাবিবুল্লাহ।
সর্বোপরি, প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সময় এসেছে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও দাযিত্বশীল ভূমিকার। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাইভেট স্কুল, মাদরাসা ও কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ঠিক। কিন্তু, দুঃখজনকভাবে, এসব প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বচ্ছতার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। কুঞ্জেরহাট বাজারের অধিকাংশ প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমনটিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে এখনই উত্তরণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। কুঞ্জেরহাট বাজারে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে সে তুলনায় শিক্ষার্থী নেই। ২০২৬ সালে আরো নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া বিদ্যমান রয়েছে। দেশের সার্বিক প্রাইভেট শিক্ষা ব্যবস্থায় নীতিগত পরিবর্তন খুবই জরুরি। যেকারণে, প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি কেন্দ্রীয় বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীতাও দেখছেন শিক্ষা সচেতন মহল।