Home ফিচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এবং অপব্যবহার ও আইনি জটিলতা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার এবং অপব্যবহার ও আইনি জটিলতা

বর্তমান সময়ে সব চাইতে বেশি ব্যবহার হচ্ছে, ফেসবুক, ম্যাসেন্জার ইমু ,হটসআপ, টুইটার। কিন্তু এইসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো ব্যবহার করতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত যে ভুল হচ্ছে। যার কারণে এই বিষয়ে নিয়ে সারা বাংলাদেশে মামলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃতভাবে  বা অজ্ঞাতসারে বা আইনের ধারনা না থাকায়ও এই ভুল গুলো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তি জীবনে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

ফেসবুক বা যেকোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে, হে-প্রতিপন্নকরে মানহানি কর ঘটানা ঘটায় আথবা কোন ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেন, বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেন বা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধের চেতনা, ইত্যাদির বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এই ঘটনা ঘটনোর মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হচ্ছে। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা তুলে ধরা হলো –

বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর বেশির ভাগ ১৯//২১/২২/২৩/২৪/২৬ এই সকল ধারাগুলোতে বেশির ভাগ মামলা হচ্ছে।এই সকল ধারাগুলো জামিনের অযোগ্য ধারা। এই আইনে কারাদন্ড অনাধিক ৬ মাস থেকে যাবজ্জীবন পযর্ন্ত কারাদণ্ড। এই আইনে অর্থদণ্ড রাখা হয়েছে  অনাধিক ২ লক্ষ টাকা থেকে অনাধিক ৫ কোটি টাকা পযর্ন্ত।

বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সালের আইন হওয়ার পূর্বে তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০৬ উক্ত আইনের ৫৭ ধারার মামলা দায়ের করতেন।

পূর্বের তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ ধারা।

 ৫৭ ধারা: কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷’

এই ধারার অধীনে অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং ন্যূনতম সাত বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷’

তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় আলোচিত ‘মানহানি’, ‘মিথ্যা-অশ্লীল’, ‘আইন শৃঙ্খলার অবনতি’ ও ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ এই বিষয়গুলো বর্তমানে ডিজিটাল আইন ২০১৮ এর  ১৯ ও ২০ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

১৯ ধরাঃ কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, ইত্যাদির ক্ষতিসাধন ইত্যাদি।

১৯ ধারায় ২ ধরনের শাশ্তি রয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারায় অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭(সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

 যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারায় দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন আপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন

 ২০ ধারাঃ কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কম্পিউটার সোর্স কোড গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করেন, বা অন্য কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে উক্ত কোড, প্রোগ্রাম, সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করিবার চেষ্টা করেন, এবং উক্ত সোর্স কোডটি যদি সংরক্ষণযোগ্য বা রক্ষণাবেক্ষণ যোগ্য হয়, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারার অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারার অধীনে দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

২১ ধারাঃ যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারার অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১(এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারায় দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, বা ৩(তিন) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

২২ ধারা : ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি।

 এই ধারায় ২ ধরনের শাস্তি আছে।

এই ধারায় কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫(পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন অপরাধ সংঘটন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭(সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

২৩ ধারা: ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক প্রতারনা।

যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারার অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারায়(১) দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন  অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭(সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

২৪ ধারা: পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ

যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারার অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫(পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারায়  দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন আপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

২৬। অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির।

যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারার অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

 যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত ধারায়  দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন অপরাধ  সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

অতএব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যে ভাবে আমরা উপকৃত হব, আইনের সঠিক ধারণা থাকলে আমারা অনেক রকমের আইনি জটিলতা থেকে নিজেদের কে রক্ষা করতে পারবো।

লেখক – আবুল বাসার, অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

সরকার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশের...

গাজা-লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে  ৪৪ হাজার

দখিনের সময়  ডেস্কঃ গাজা-লেবাননে অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলি হামলা। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় প্রাণ গেছে ৮৮ ফিলিস্তিনির। খবর...

রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক বাইক আসছে

দখিনের সময় ডেস্ক: বৈদ্যুতিক বাইকের বাজারে ইতোমধ্যেই পা রেখেছে রিভল্ট এবং ওলা। ওলার বাইক বাজারে না এলেও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সঙ্গে কম জ্বালানি খরচ নজর কেড়েছে...

দুধের বিকল্প হিসেবে যা খেতে পারেন

দখিনের সময় ডেস্ক: উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বর্তমানে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এটি বাদাম, ওট, নারিকেল বা মটরশুঁটি যাই হোক না কেন, দুধের এই বিকল্পগুলো স্বাস্থ্যকর ডায়েট...

Recent Comments